বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেছেন ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর পরিকল্পিতভাবে ঐতিহাসিক দিনগুলোকে জনগণের দৃষ্টির অন্তরালে নিয়ে গেছেন। দেড়যুগ ধরে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি আন্দোলন করে আসছে। জীবন দিয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। এবারের গণঅভ্যুত্থানেও আমাদের সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে কোনো লাভ হবে না। বিএনপি জনগণের দল। জনগণই সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দিবে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) চাঁদপুর হাসান আলী হাইস্কুল মাঠে জেলা বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি অকৃতজ্ঞ দল। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করেছিল। শহীদ জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে আওয়ামী লীগকে পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আর এই আওয়ামী লীগই বাংলাদেশ থেকে জিয়া পরিবারের নাম এবং বিএনপিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করেছিল। এ দেশে মুনাফিকদের আর স্থান হবে না। ৭৫ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের এজেন্টরা এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত ছিল।
অবশেষে ৭ নভেম্বর এ দেশের সিপাহী–জনতা সেই চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং তাদের চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ৭ নভেম্বরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তিনি দ্রুত বাংলার মানুষকে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দেন। শহীদ জিয়া দেশের মানুষকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেন। ৭ নভেম্বর পালনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থেই জিয়াকে স্মরণ করা হবে।
আব্দুস সালাম বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, আপনারা দ্রুত নির্বাচন দিন। দেশি–বিদেশি চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচিত সরকারের খুব প্রয়োজন। আমরা কখনোই ২০১৪ সালের মতো ১৫২ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে চাই না, অথবা ২০১৮ সালের নৈশকালীন নির্বাচনের মতো অনির্বাচিতভাবে জয়যুক্ত হতে চাই না। আমরা চাই ভোট বঞ্চিত জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রিয় ব্যক্তিদের নির্বাচিত করুক এবং যোগ্য ব্যক্তিরা দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করুক।
তিনি বলেন, বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি করতে হলে নিজেকে আগে পরিবর্তন করতে হবে। তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন। আপনাদের আমাদের সাথে নিয়ে তিনি এই স্বপ্ন দেখেছেন। যদি দেশনায়ক তারেক রহমানের সঙ্গী হতে চান তাহলে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করেন।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা তোমার পতন হয়েছে। তোমার বাবা বাংলাদেশকে বলতো ‘আমার দেশ’ আর তুমি বলতে ‘আমার বাবার দেশ’। অথচ একটা স্বাধীন দেশকে তোমরা আরেক দেশের তাবেদার বানানোর সব চক্রান্ত সম্পন্ন করেছো। দেশের মানুষ তোমার চক্রান্ত বুঝে ফেলেছে। তোমাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তুমি দিল্লির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছো। তোমার অশুভ প্রেতাত্মারা এখনো বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত থেকে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের জানা উচিত দেশের সচেতন জনতা সোচ্চার আছে। তাদের চক্রান্ত কখনোই সফল হবে না।’
জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের যৌথ
সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আক্তার হোসেন মাঝি, অ্যাড. হারুনুর রশীদ, শাহজালাল মিশন,অ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেন খান, আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন জেলা ওলামা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজ জাকির হোসেন মৃধা ।
এদিন সকাল সাড়ে ৬ টায় সারা দেশের ন্যায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ১০টায় দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার পূর্বে এক বর্ণাঢ্য র্যালি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।