শনিবার (০২ নভেম্বর) রাত ৭টায় সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের গাগান্না গ্রামের ইকরামুলের ছেলে শাহীনের বাড়িতে ওই দুই তরুণী অনশন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শনিবার বিকেল থেকে রুনা নামে এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বিয়ের দাবিতে শাহীনের বাড়িতে অবস্থান নেন। রুনার দাবি শাহীন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ দুই বছর ধরে তার সঙ্গে প্রেম করে আসছেন। তাদের দুই পরিবার এই বিয়েতে রাজি ছিল। কিন্তু শাহীন ধর্ষণ মামলায় আসামি হওয়ায় পরে তার পরিবার এই বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর রুনাকে পরিবার থেকে তার অমতে বিয়ে দিতে গেলে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহীনের বাড়িতে ওঠেন।
অন্যদিকে গত দুই মাস হলো সাদিয়া নামে আরেক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন শাহীন। প্রেমিকের বিয়ের কথা শোনার পর সাদিয়াও বিয়ের দাবিতে তার বাড়িতে আসেন। এমন ঘটনায় শাহীন ও তার পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর দাবি, শাহীন দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। এর আগেও এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণসহ একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তারা এর একটা সমাধান চান তারা।
শাহীনের প্রতিবেশী সোহেল জানান, শনিবার বিকেল ৫টায় পাশের হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশাটিয়া ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা গ্রামের মো. আবুল কাসেমের মেয়ে রুনা বিয়ের দাবিতে শাহীনের বাড়িতে আসেন। এ কথা শুনে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মো. মিজানুরের মেয়ে সাদিয়াও বিয়ের দাবিতে তার বাড়ি আসেন। ওই দুই মেয়ে দাবি করেন যে, শাহীন তাদের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেম করে আসছেন। এখন দুই মেয়েই শাহীনকে বিয়ে করতে চান। এ নিয়ে সমাজের সবাই দ্বিধায় পড়েছেন যে কাকে রেখে কার সঙ্গে বিয়ে দেবেন।
প্রতিবেশী ইছাহক মণ্ডল জানান, শাহীন ছেলে হিসেবে বেশি ভালো না। তার বিরুদ্ধে শুধু নারী সম্পৃক্ত অভিযোগ অনেক। সমাজের কিছু লোক অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে এর কোনো বিচার করেন না। যে মেয়েরা আসছে তাদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।
ফজলু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি জানান, এই ছেলে এবং ছেলের পরিবারের যে কার্যকলাপ দেখছি, সেগুলো সম্পূর্ণ অশ্লীল এবং বেহায়াপনা। সমাজের মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন তারা। এই ছেলে এর আগেও অনেক খারাপ কাজে জড়িত ছিল। আজ আবার একই সঙ্গে দুই মেয়ে বিয়ের দাবি নিয়ে এই বাড়িতে উঠেছে। আমরা গ্রামের মানুষ এর একটা সঠিক বিচার চাই।
বিয়ের দাবিতে অনশন করা রুনা বলেন, শাহিনের সঙ্গে আমার দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক। আমাদের বিয়েতে দুই পরিবারই রাজি ছিল। কিন্তু শাহীন ধর্ষণ মামলায় আসামি হওয়ায় আমার পরিবার আর মেনে নেয়নি। শুক্রবার আমার বিয়ের জন্য পরিবার থেকে চাপ দেয়। আমি শাহিনকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না। এ কারণে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি শাহিনের বাড়িতে এসেছি। আমি ওকেই বিয়ে করবো। শহিন যদি ওই মেয়েকে বিয়ে করে, তাও আমার কোনো সমস্যা নেই।
সাদিয়া খাতুন বলেন, শাহিনের সঙ্গে দুই মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক। এর আগে শাহিন আমাকে বিয়ের জন্য তার বাড়িতে আসতে বলে। আমি বাড়ি থেকে তার বাড়িতে আসি। তখন শাহিনের বাড়ির লোকজন ঝামেলা করায় সেদিন বিয়ে হয়নি। আজ আবার শাহিনের বাড়িতে আরেক মেয়ে বিয়ের দাবিতে এসেছে। আমি তো ওকে ভালোবাসি। শাহিন আমাকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। আমাকে রেখে এখন আবার অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। তাই আমি আমার অধিকার আদায়ের জন্য শাহিনের বাড়িতে এসেছি।
হলিধানী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার বলেন, গাগান্না গ্রামের শাহিনের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে একই সঙ্গে দুই মেয়ে এসেছে এটা খুবই দুঃখজনক। সামাজিকভাবে আমরা এমনটা প্রত্যাশা করি না। ওই ছেলের সঙ্গে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে যেকোনো একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ওই সমাজের লোকজন। শীঘ্রই এর সমাধান করা হবে।