ঢাকা ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মানবেতর জীবন যাপন

চাঁদপুরে আট মাস ধরে বেতন না পেয়েও সেবা দিচ্ছেন ২২৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা

  • মাসুদ হোসেন
  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • 348
চাঁদপুরে আট মাস ধরে বেতন পান না ২২৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক কষ্টে ভুগছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া এসব স্বাস্থ্য কর্মীরা।
শুধু বেতন নয়, কোথাও কোথাও নিয়মিত ওষুধ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। আবার কোনো কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত প্রদান করা ওষুধের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।
তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নির্মাণাধীন সহ ২৪৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ২০ টি ক্লিনিকে সিএইচসিপির পদ শূন্য রয়েছে। ২২৮ জন সিএইচসিপি গত বছরের জুলাই মাস থেকে বেতন পান না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ক্লিনিকে সেবা দেওয়ার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলেছেন, কেউ তুলনামূলক কম সেবা দিচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে অতিদ্রুত বেতন চালু করার দাবি জানিয়েছেন সিএইচসিপি থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামীণ পর্যায়ে অসহায় গরিবের চিকিৎসা, গর্ভবতী ও প্রসূতি, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, ইপিআই, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিতদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকা সিএইচসিপিদের এমন কস্ট যেন একমাস দুইমাস নয়, চলমান ৯ মাস।
“নিয়মিত অফিস করি, কিন্তু বেতন পাইনা-এর থেকে অপমানের আর কী আছে? আপনজনেরাও এখন টাকা ধার দিতে ভয় পান, কারণ আমাদের বেতন হয়না,” আক্ষেপ করে কথাগুলো প্রিয় চাঁদপুরকে বলেছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের দাসেরগাঁও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি তাহমিনা আক্তার।
তিনি বলেন, গত জুলাই মাস থেকে আমাদের বেতন হচ্ছে না।
শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ভাড়া খরচ করে ক্লিনিকে আসি রোগীদের সেবা দিতে। বেতন না পাওয়ার কারণে খুবই হতাশ হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
মানসিকতাও ভালো নেই। আমাদের মানসিকতা যদি ভালো থাকে, তাহলে রোগীদের আরও বেশি সেবা দিতে পারব।
তিনি আরো বলেন, দোকানদাররাও আর বাকী দিতে চান না। দোকানে আট মাস বাকী করে করে এবং আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে জীবন চালিয়ে আসছি। এতে লক্ষাধিক টাকার উপরে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি।
এদিকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের নায়নগর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জানে আলম তালুকদার বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৮ মাস বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা মানবতার জীবন যাপন করছে। পবিত্র রোজার মাসে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট আছে। আশা করি মানবিক দিক বিবেচনায় ঈদের আগে আমাদের বকেয়া পরিশোধ করবে সরকার, সেটাই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা। সেই সাথে দেখা দিয়েছে ঔষধ স্বল্পতা, নতুন করে কোন ঔষধের কিট সরবরাহ করা হয়নি উপজেলায়। এতে জনগণের সঠিক চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সেবা বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ, কমছে রোগীর সংখ্যাও। আমাদের শাহরাস্তি উপজেলার কিছু সিসি স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়েই স্বাস্থ্য সেবা চালাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দ্বীন প্রিয় চাঁদপুরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ আসলেই দুঃখজনক একটি বিষয়। তবে অচিরেই তাদের এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, ৪র্থ এইচএনপিএসপি শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। ৫ম এইচএনপিএসপি চালু না হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের বেতন হচ্ছেনা। তবে এবার সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
আশা করা যাচ্ছে, মার্চ মাসেই ৫ম এইচএনপিএসপি হলে বেতন পাবে কর্মীরা, সংকট কিছুটা হলেও কেটে যাবে তাদের।
ট্যাগস :

শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লো শিক্ষক

মানবেতর জীবন যাপন

চাঁদপুরে আট মাস ধরে বেতন না পেয়েও সেবা দিচ্ছেন ২২৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা

আপডেট সময় : ০৯:৪০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
চাঁদপুরে আট মাস ধরে বেতন পান না ২২৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক কষ্টে ভুগছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া এসব স্বাস্থ্য কর্মীরা।
শুধু বেতন নয়, কোথাও কোথাও নিয়মিত ওষুধ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। আবার কোনো কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত প্রদান করা ওষুধের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।
তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নির্মাণাধীন সহ ২৪৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ২০ টি ক্লিনিকে সিএইচসিপির পদ শূন্য রয়েছে। ২২৮ জন সিএইচসিপি গত বছরের জুলাই মাস থেকে বেতন পান না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ক্লিনিকে সেবা দেওয়ার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলেছেন, কেউ তুলনামূলক কম সেবা দিচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে অতিদ্রুত বেতন চালু করার দাবি জানিয়েছেন সিএইচসিপি থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামীণ পর্যায়ে অসহায় গরিবের চিকিৎসা, গর্ভবতী ও প্রসূতি, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, ইপিআই, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিতদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকা সিএইচসিপিদের এমন কস্ট যেন একমাস দুইমাস নয়, চলমান ৯ মাস।
“নিয়মিত অফিস করি, কিন্তু বেতন পাইনা-এর থেকে অপমানের আর কী আছে? আপনজনেরাও এখন টাকা ধার দিতে ভয় পান, কারণ আমাদের বেতন হয়না,” আক্ষেপ করে কথাগুলো প্রিয় চাঁদপুরকে বলেছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের দাসেরগাঁও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি তাহমিনা আক্তার।
তিনি বলেন, গত জুলাই মাস থেকে আমাদের বেতন হচ্ছে না।
শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ভাড়া খরচ করে ক্লিনিকে আসি রোগীদের সেবা দিতে। বেতন না পাওয়ার কারণে খুবই হতাশ হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
মানসিকতাও ভালো নেই। আমাদের মানসিকতা যদি ভালো থাকে, তাহলে রোগীদের আরও বেশি সেবা দিতে পারব।
তিনি আরো বলেন, দোকানদাররাও আর বাকী দিতে চান না। দোকানে আট মাস বাকী করে করে এবং আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে জীবন চালিয়ে আসছি। এতে লক্ষাধিক টাকার উপরে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি।
এদিকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের নায়নগর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জানে আলম তালুকদার বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৮ মাস বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা মানবতার জীবন যাপন করছে। পবিত্র রোজার মাসে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট আছে। আশা করি মানবিক দিক বিবেচনায় ঈদের আগে আমাদের বকেয়া পরিশোধ করবে সরকার, সেটাই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা। সেই সাথে দেখা দিয়েছে ঔষধ স্বল্পতা, নতুন করে কোন ঔষধের কিট সরবরাহ করা হয়নি উপজেলায়। এতে জনগণের সঠিক চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সেবা বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ, কমছে রোগীর সংখ্যাও। আমাদের শাহরাস্তি উপজেলার কিছু সিসি স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়েই স্বাস্থ্য সেবা চালাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দ্বীন প্রিয় চাঁদপুরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ আসলেই দুঃখজনক একটি বিষয়। তবে অচিরেই তাদের এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, ৪র্থ এইচএনপিএসপি শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। ৫ম এইচএনপিএসপি চালু না হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের বেতন হচ্ছেনা। তবে এবার সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
আশা করা যাচ্ছে, মার্চ মাসেই ৫ম এইচএনপিএসপি হলে বেতন পাবে কর্মীরা, সংকট কিছুটা হলেও কেটে যাবে তাদের।