নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেশের ৪১তম রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপরিচিত এই দলের নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। এই রাজনৈতিক দল যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁরা মূলত চট্টগ্রামভিত্তিক সুন্নি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে এর নেতারা দাবি করেছেন, তাঁদের দল ধর্মভিত্তিক কোনো দল নয়। উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দলটিকে ইসি নিবন্ধন দিয়েছে ২০২৩ সালের ৮ মে।

ইসির গেজেট অনুযায়ী ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গুলশান-১ নম্বরে অবস্থিত।
‘ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ২০১০ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলে ইনসানিয়াত বিপ্লব বিশ্বাস করে না।’ যদিও এই দলের নেতারা চট্টগ্রামভিত্তিক সুন্নি আন্দোলনেরও নেতৃত্বে রয়েছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ইনসানিয়াত বিপ্লব ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। কিন্তু ইসি দলটিকে নিবন্ধন দেয়নি। তখন তারা হাইকোর্টে রিট করলে নিবন্ধনের পক্ষে রায় হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইসি আপিল বিভাগে আপিল করেছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ইনসানিয়াত বিপ্লবের নিবন্ধনের পক্ষে রায় বহাল রাখেন।

ইসি সচিবালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সই করা দলটির নিবন্ধনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আপিল বিভাগের রায় ও আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশকে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে।
দলটির নেতাদের সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
সর্বশেষ নিবন্ধন পাওয়া এই দল ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইদুর রহমান নিজামী শাহ। তিনি গবেষণার জন্য ২০২০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইদুর রহমানের ছেলে সৈয়দ ইমাম হায়াত দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ইসলাম ধর্মভিত্তিক সংগঠন ‘বিশ্ব সুন্নি আন্দোলন’-এর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। তাদের কর্মকাণ্ড ছিল চট্টগ্রামের মিরসরাইভিত্তিক। সেখানে পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন সৈয়দ ইমাম হায়াত। দলের মহাসচিব শেখ রেহান আফজাল একটি ভবন নির্মাণকারী বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
ঢাকার গুলশানে বিশ্ব সুন্নি আন্দোলনের কার্যালয়কেই এখন ইনসানিয়াত বিপ্লব নামের এই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে দলটির নেতারা বলছেন, বিশ্ব সুন্নি আন্দোলন ও ইনসানিয়াত বিপ্লব সম্পূর্ণ পৃথক সংগঠন। রাজনৈতিক দল হিসেবে ইনসানিয়াত বিপ্লব ধর্মীয় কোনো দল নয়।
গুলশানের মতো জায়গায় ভাড়া নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিচালনা করছে দলটি। স্বাভাবিকভাবেই দলের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলের নেতারা দাবি করছেন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের দান, সংগঠনের বই বিক্রি ও সদস্যদের চাঁদাই দলের আয়ের উৎস।
ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ বা মানবতা বিপ্লব বাংলাদেশ (ইনসানিয়াত নামে অধিক পরিচিত) বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল যা ২০১০ সালে আল্লামা ইমাম হায়াত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালে নিবন্ধিত হয়।
ইতিহাস
ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১০ সালে বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে কাজ করে আসছে এবং এখন পর্যন্ত অন্য কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সাথে জোট গঠন করেনি।
২০১৭ সালে, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিল, কিন্তু কমিশন প্রাথমিকভাবে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীকালে, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে, যা ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের পর দলটি নিবন্ধিত হয়।
প্রতীক
ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতীক হিসেবে সাদা গোলাপ ব্যবহার করে আসছে। পার্টির লোগোটির কেন্দ্রে একটি বিশিষ্ট সাদা গোলাপ রয়েছে। তবে আরেকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জাকের পার্টির নির্বাচনী প্রতীক গোলাপ থাকায় ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ তাদের নির্বাচনী প্রতীক সাদা গোলাপ পেতে ব্যর্থ হয় ও সাদা গোলাপের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন তাদের আপেল প্রতীক বরাদ্দ দেয়।
২০১৮ সালের নির্বাচন
২০১৭ সালে, রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধিনের জন্য ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের আবেদন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করলে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তাদের মোট ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের কেউই কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। দলটির দাবি, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ ছিল। দলের মহাসচিব জনাব রেহান আফজাল (রাহবার) একটি আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, বাকি প্রার্থীরা সবাই সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন এরফানুল হক, এমদাদুল হক, সাবিনা খাতুন সাব্বী, আরেফ সারতাজ, মিলন মোর্শেদ, শেখ হানিফ ও হাসান আহমেদ।
প্রার্থীদের মধ্যে সাবিনা খাতুন সাব্বী তার আসনে একমাত্র মহিলা প্রার্থী ছিলেন। দলটির অন্যান্য প্রার্থী ছিল যাদের প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন বাতিল বলে গণ্য করে ছিল, তবে তাদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়নি।