ঢাকা ১২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পারিবারিক সহিংসতায়

মতলব উত্তরে ৩ মাসে ৭ খুন

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় গত ৩ মাসে ৭টি খুন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো পুলিশি তৎপরতার অভাবের চেয়েও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব, পারিবারিক কলহ ও পারিবারিক শাসনের অভাবের কারনেই গ্রামীণ উপজেলায় এতো হত্যাকান্ড হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন উপজেলার বিভিন্ন শেণি পেশার মানুষ।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সুলতানাবাদ ইউনিয়নের ছোট লক্ষ্মীপুর গ্ৰামে ধানের চারা ফেলা নিয়ে তর্কের একপর্যায়ে মারধরের ঘটনায় কবির সরকার(৬০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছে। নিহত কবির সরকার ছোট লক্ষ্মীপুর গ্ৰামের মৃত হান্নান সরকারের ছেলে।
জানা যায়, বাড়ির পাশের ধানের চারা ফেলার জায়গা নিয়ে তর্ক হয় একই গ্ৰামের মৃত ছিদ্দিক প্রধানের ছেলে মানিক প্রধানের(৫৫) সাথে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আঘাত করাসহ কিল ঘুষি মারতে থাকে। মানিক প্রধানের সাথে একই গ্ৰামের মুকবিল হোসেন ও মানিক প্রধানের স্ত্রী শামসুন নাহার ছিল। কিল-ঘুষি ও আঘাতে কবির সরকার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই ৩ মাসে এই মতলব উত্তর উপজেলায় যে ৭টি হত্যাকান্ড ঘটেছে সেগুলো হলো-
গত ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাতে উপজেলার গাজীপুরে ভাত রান্না করতে দেরি হওয়ায় স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার আন্নাকে হত্যা করে স্থানীয় ধনাগোদা নদীতে মরদেহ ফেলে দেয় তার স্বামী ইয়াসিন। পরদিন শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা ধনাগোদা নদীর চরমাছুয়া এলাকায় নদীতে নারীর লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে পাঠায়। লাশের মুখে ও বুকে আগুনের পোড়া চিহ্ন ও গলাটিপে হত্যারও আলামত পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ।
খোজ নিয়ে জানা যায়, এ হত্যা কান্ডটি মূলত পরকীয়ার বলি। এ বিষয়ে নিহত ফেরদৌসী আক্তার আন্নার বড় বোন মনোয়ারা বেগম জানায়, আমার ছোট বোনের স্বামী অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বোন এ বিষয়ে জানতে পারলে এবং পরকীয়ায় বাধা দিলে তাকে প্রতিনিয়ত মারধর করত। কিছুদিন আগেও পরকিয়া করতে গিয়ে ধরা পড়ে জরিমানা দিয়েছে।
এর আগে ১৬ অক্টোবর (বুধবার) বেলা ১টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর লুধুয়া গ্রামের প্রধানীয়া বাড়ির আ. সোবহান প্রধানের ছেলে সৌদি প্রবাসী নোমান (২৮) বাপের জায়গা- জমি নিজের নামে লিখে নিতে বাপ-ছেলের মাঝে বাক বিতন্ডা হয়। বাক বিতন্ডা এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ালে ছেলে নোমান বাবাকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলে। বাবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে বাবা আ. সোবহান প্রধানকে মতলব দক্ষিণ হাসপাতালে অনেক নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছেলে পরে হাসপাতালের কাছে আসলেও মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর বাবার লাশ হাসপাতালে রেখেই ছেলে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় মামলা হলে পুলিশ এখনো কোন আসামীকে ধরতে পারেনি।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে মতলব উত্তর উপজেলার মিঠুরকান্দি গ্রামে বেপারী বাড়ীতে সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে আপন ভাই সফিকুল ইসলামকে(৩০) পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের মিঠুর কান্দি গ্রামের কলিম উল্লাহ বেপারীর ছেলে মো. সফিকুল ইসলামের(২৮) সাথে তার ছোট ভাই-বোনদের সাথে পৈতৃক সম্পতিগত বিরোধ চলছিলো। বৃহস্পতিবার নিহত হওয়া ব্যাক্তি সফিকুল ইসলামের সাথে তার ভাই বোনদের তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে সফিককে বেধরক মারপিট করেন তার ছোট ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। এতে করে সফিক গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
২১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) দুপুরে ছেলের হাতে মা খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে। মা-ছেলের সাথে নিজ বাড়ির উঠানে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ছেলে উত্তেজিত হয়ে মা’র মাথায় ইট দিয়ে সজোরে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মা মারা যায়।
ঘটনাটি ঘটে মতলব উত্তরের ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের দিঘলীপাড় গ্রামে।
নিহতের নাম শেফালী বেগম (৫৫)। সে দিঘলী পাড় গ্ৰামের মৃত মো. কালু প্রধানের স্ত্রী। শেফালী বেগমের বাপের বাড়ি একই ইউনিয়নের মান্দারতলী গ্রামে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় উপজেলার মান্দারতলীতে অটোরিকশা চালক খবির প্রধানের লাশ ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের মান্দারতলী গ্রামের মতিন প্রধানের ছেলে খবির প্রধানের লাশ বিলের ধানক্ষেত থেকে উদ্ধারেরপর পরিবারটির দাবি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি এই হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে অভিযুক্তদের ১০-১২টি ঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
গত ২৭ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলে উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নের খাগুরিয়া গ্রামের সরকার বাড়িতে সীমানা বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে জহির (৪২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চারজন। নিহত জহির ওই গ্রামের মৃত জমির সরকারের ছেলে ।
নিহত মো. জহিরের ভাই সফিকুর রহমান জানান, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আমাদের সঙ্গে পাশের বাড়ির বাচ্চু মিয়ার ছেলে ইসমাইল হোসেন, বিল্লাল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম খলিফার ছেলে মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে বাড়ির সিমানা নিয়ে দ্বন্ধে তারা আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করলে আমার ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে।
এছাড়াও হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ৩২ মামলার আসামী মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের আলোচিত কুখ্যাত নৌ ডাকাত বাবলা গত ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে এই উপজেলারই সীমানাঘেষা গজারিয়ার মল্লিকের চরে গুলিতে খুন হওয়ার বিষয়টিও খুবই আলোচিত। তার শরীরে ১৫টিরও অধিক গুলির চিহ্ন এবং মোটা একটি বুলেট তার মাথার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক। যা প্রমান করে প্রতিপক্ষ এই নৌ ডাকাত বাবলার প্রতি কতোটা ক্ষুব্ধ ছিল।
২০২২ সালের ৬ মে উপজেলার ষাটনল পর্যটন এলাকায় আলোচিত উজ্জল মিজিকে(৪৫) গুলিকরে হত্যা, ২০২২ সালের ২ নভেম্বর রাতে ফতেপুর পশ্চিমের মান্দারতলীতে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিমউল্যাহ লাভলু হত্যা খুবই চাঞ্চল্যকর মামলা এবং খুবই আলোচিত মামলা।
এ বিষয়ে উপজেলার ছেংগারচর সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ মুন্সি বলেন, একসময় গ্রাম্য শালীশি ব্যবস্থার উপর মানুষের খুব আস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক সুবিধানেয়া সহ নানা কারণে শালিশি ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে গেছে। তাইতো এত সমস্যা হচ্ছে।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রবিউল হক বলেন, এ হত্যাকান্ডগুলো যদিও পারিবারিক কারণে হয়েছে তবুও হত্যাকান্ডতো হত্যাকান্ডই। আমরা ইতিমধ্যেই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য একদম স্পষ্ট, অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ছেংগারচর পৌরসভার জোড়খালী গ্রামে জায়গা-জমির বিষয়কে কেন্দ্র করে একই পরিবারের ৭ জনকে হত্যা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সফি উল্লাহ ভূইয়া, ছেলে মানিক ভূইয়া, সালামত বেপারীসহ আরো কয়েকজন ভাড়াটিয়া খুনি।
ট্যাগস :

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ২৫ পরিবারকে আমেরিকা প্রবাসী মতলব সমিতির আর্থিক সহায়তা প্রদান 

পারিবারিক সহিংসতায়

মতলব উত্তরে ৩ মাসে ৭ খুন

আপডেট সময় : ০৬:৫২:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় গত ৩ মাসে ৭টি খুন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো পুলিশি তৎপরতার অভাবের চেয়েও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব, পারিবারিক কলহ ও পারিবারিক শাসনের অভাবের কারনেই গ্রামীণ উপজেলায় এতো হত্যাকান্ড হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন উপজেলার বিভিন্ন শেণি পেশার মানুষ।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সুলতানাবাদ ইউনিয়নের ছোট লক্ষ্মীপুর গ্ৰামে ধানের চারা ফেলা নিয়ে তর্কের একপর্যায়ে মারধরের ঘটনায় কবির সরকার(৬০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছে। নিহত কবির সরকার ছোট লক্ষ্মীপুর গ্ৰামের মৃত হান্নান সরকারের ছেলে।
জানা যায়, বাড়ির পাশের ধানের চারা ফেলার জায়গা নিয়ে তর্ক হয় একই গ্ৰামের মৃত ছিদ্দিক প্রধানের ছেলে মানিক প্রধানের(৫৫) সাথে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আঘাত করাসহ কিল ঘুষি মারতে থাকে। মানিক প্রধানের সাথে একই গ্ৰামের মুকবিল হোসেন ও মানিক প্রধানের স্ত্রী শামসুন নাহার ছিল। কিল-ঘুষি ও আঘাতে কবির সরকার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই ৩ মাসে এই মতলব উত্তর উপজেলায় যে ৭টি হত্যাকান্ড ঘটেছে সেগুলো হলো-
গত ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাতে উপজেলার গাজীপুরে ভাত রান্না করতে দেরি হওয়ায় স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার আন্নাকে হত্যা করে স্থানীয় ধনাগোদা নদীতে মরদেহ ফেলে দেয় তার স্বামী ইয়াসিন। পরদিন শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা ধনাগোদা নদীর চরমাছুয়া এলাকায় নদীতে নারীর লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে পাঠায়। লাশের মুখে ও বুকে আগুনের পোড়া চিহ্ন ও গলাটিপে হত্যারও আলামত পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ।
খোজ নিয়ে জানা যায়, এ হত্যা কান্ডটি মূলত পরকীয়ার বলি। এ বিষয়ে নিহত ফেরদৌসী আক্তার আন্নার বড় বোন মনোয়ারা বেগম জানায়, আমার ছোট বোনের স্বামী অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বোন এ বিষয়ে জানতে পারলে এবং পরকীয়ায় বাধা দিলে তাকে প্রতিনিয়ত মারধর করত। কিছুদিন আগেও পরকিয়া করতে গিয়ে ধরা পড়ে জরিমানা দিয়েছে।
এর আগে ১৬ অক্টোবর (বুধবার) বেলা ১টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর লুধুয়া গ্রামের প্রধানীয়া বাড়ির আ. সোবহান প্রধানের ছেলে সৌদি প্রবাসী নোমান (২৮) বাপের জায়গা- জমি নিজের নামে লিখে নিতে বাপ-ছেলের মাঝে বাক বিতন্ডা হয়। বাক বিতন্ডা এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ালে ছেলে নোমান বাবাকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলে। বাবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে বাবা আ. সোবহান প্রধানকে মতলব দক্ষিণ হাসপাতালে অনেক নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছেলে পরে হাসপাতালের কাছে আসলেও মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর বাবার লাশ হাসপাতালে রেখেই ছেলে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় মামলা হলে পুলিশ এখনো কোন আসামীকে ধরতে পারেনি।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে মতলব উত্তর উপজেলার মিঠুরকান্দি গ্রামে বেপারী বাড়ীতে সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে আপন ভাই সফিকুল ইসলামকে(৩০) পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের মিঠুর কান্দি গ্রামের কলিম উল্লাহ বেপারীর ছেলে মো. সফিকুল ইসলামের(২৮) সাথে তার ছোট ভাই-বোনদের সাথে পৈতৃক সম্পতিগত বিরোধ চলছিলো। বৃহস্পতিবার নিহত হওয়া ব্যাক্তি সফিকুল ইসলামের সাথে তার ভাই বোনদের তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে সফিককে বেধরক মারপিট করেন তার ছোট ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। এতে করে সফিক গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
২১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) দুপুরে ছেলের হাতে মা খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে। মা-ছেলের সাথে নিজ বাড়ির উঠানে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ছেলে উত্তেজিত হয়ে মা’র মাথায় ইট দিয়ে সজোরে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মা মারা যায়।
ঘটনাটি ঘটে মতলব উত্তরের ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের দিঘলীপাড় গ্রামে।
নিহতের নাম শেফালী বেগম (৫৫)। সে দিঘলী পাড় গ্ৰামের মৃত মো. কালু প্রধানের স্ত্রী। শেফালী বেগমের বাপের বাড়ি একই ইউনিয়নের মান্দারতলী গ্রামে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় উপজেলার মান্দারতলীতে অটোরিকশা চালক খবির প্রধানের লাশ ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের মান্দারতলী গ্রামের মতিন প্রধানের ছেলে খবির প্রধানের লাশ বিলের ধানক্ষেত থেকে উদ্ধারেরপর পরিবারটির দাবি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি এই হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে অভিযুক্তদের ১০-১২টি ঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
গত ২৭ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলে উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নের খাগুরিয়া গ্রামের সরকার বাড়িতে সীমানা বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে জহির (৪২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চারজন। নিহত জহির ওই গ্রামের মৃত জমির সরকারের ছেলে ।
নিহত মো. জহিরের ভাই সফিকুর রহমান জানান, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আমাদের সঙ্গে পাশের বাড়ির বাচ্চু মিয়ার ছেলে ইসমাইল হোসেন, বিল্লাল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম খলিফার ছেলে মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে বাড়ির সিমানা নিয়ে দ্বন্ধে তারা আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করলে আমার ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে।
এছাড়াও হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ৩২ মামলার আসামী মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের আলোচিত কুখ্যাত নৌ ডাকাত বাবলা গত ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে এই উপজেলারই সীমানাঘেষা গজারিয়ার মল্লিকের চরে গুলিতে খুন হওয়ার বিষয়টিও খুবই আলোচিত। তার শরীরে ১৫টিরও অধিক গুলির চিহ্ন এবং মোটা একটি বুলেট তার মাথার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক। যা প্রমান করে প্রতিপক্ষ এই নৌ ডাকাত বাবলার প্রতি কতোটা ক্ষুব্ধ ছিল।
২০২২ সালের ৬ মে উপজেলার ষাটনল পর্যটন এলাকায় আলোচিত উজ্জল মিজিকে(৪৫) গুলিকরে হত্যা, ২০২২ সালের ২ নভেম্বর রাতে ফতেপুর পশ্চিমের মান্দারতলীতে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিমউল্যাহ লাভলু হত্যা খুবই চাঞ্চল্যকর মামলা এবং খুবই আলোচিত মামলা।
এ বিষয়ে উপজেলার ছেংগারচর সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ মুন্সি বলেন, একসময় গ্রাম্য শালীশি ব্যবস্থার উপর মানুষের খুব আস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক সুবিধানেয়া সহ নানা কারণে শালিশি ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে গেছে। তাইতো এত সমস্যা হচ্ছে।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রবিউল হক বলেন, এ হত্যাকান্ডগুলো যদিও পারিবারিক কারণে হয়েছে তবুও হত্যাকান্ডতো হত্যাকান্ডই। আমরা ইতিমধ্যেই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য একদম স্পষ্ট, অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ছেংগারচর পৌরসভার জোড়খালী গ্রামে জায়গা-জমির বিষয়কে কেন্দ্র করে একই পরিবারের ৭ জনকে হত্যা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সফি উল্লাহ ভূইয়া, ছেলে মানিক ভূইয়া, সালামত বেপারীসহ আরো কয়েকজন ভাড়াটিয়া খুনি।