সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদি গ্রামের মোঃ সাফায়াত গাজী (২০) নামের এক যুবককে অপরণ করে একদল বাঙ্গালী অপহরণকারী।
সাফায়াত গাজী পশ্চিম সকদি গ্রামের আব্দুর রহমান গাজীর ছেলে। সাফায়াত গাজীর বড়ো ভাই মোঃ হাসান গাজী গত শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে ভাইয়ের অপহরণের বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে তৎপতা চালায় চাঁদপুরের পুলিশ প্রশাসন।
অভিযোগ পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম তাৎক্ষনিক চাঁদপুরের পদোন্নতিপ্রাপ্ত এসপি সুদীপ্ত রায় সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগীতা নিয়ে অপহরণকারীদের সনাক্ত করে অপহৃত সাফায়াত গাজীকে মুক্ত করতে জোর চেষ্টা চালায়।
চাঁদপুরের পুলিশ প্রশাসন দুবাই পুলিশের সহযোগীতায় ব্যাপক তৎপরতা চালালে এক পর্যায়ে ১৩ অক্টোবর রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে অপহরণকারীরা সাফায়াত গাজীকে দুবাই শহরের একটি অজ্ঞাত সড়কের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সাফায়াত গাজী বর্তমানে দুবাইয়ের সারজায় পুলিশের সিআইডি আছে।
এদিকে অপহৃত সাফায়াত গাজীর বড়ো ভাই হাসান গাজী ১৪ অক্টোবর সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিগত ১ বছর আগে অনেক ধারদেনা করে আমার ভাইকে আমরা দুবাই পাঠিয়েছি। এর মধ্যে তার সাথে আমাদের প্রায়ই যোগাযোগ হতো। কিন্তু গত ১২ অক্টোবর দুবাই থেকে ৯৭১৫৬১৭৮৪০২৫ নম্বর থেকে একটি ফোন কল আসে। ঐ নম্বর থেকে বলা হয় আমার ভাইকে তারা অপহরণ করেছে। আমার ভাইকে তার কর্মস্থল থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর আমি আমার ভাইকে ফোন করলে সেই নম্বরটি তার বাসায় রেখে যাওয়ার কারণে তার সাথে আর কথা বলে নিশ্চিত হতে পারিনি। এরপর ঐ অপহরণকারীরা ০১৩১২৩৬৪৭৪২, ০১৯৭৮৯২৬২২৭ নম্বর থেকে ফোন করে আমাদেরকে আরো দুটি মোবাইল নম্বর দিয়ে মোট ৪টি নম্বরে বিকাশে ৬ লক্ষ টাকা পাঠানোর জন্যে বলেন। এসময় তারা আরো বলেন, ‘আমাদেরকে ৬ লক্ষ টাকা দিলে তোর ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর না দিলে তোর ভাইকে মেরে ফেলে গায়েব করে দেওয়া হবে।’
এসময় আমার ভাইকে তারা বেদম মারধর করে এবং তার ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে পাঠায়। ভিডিও ফুটেজে আমার ভাই এর হাত পা বেধে মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করতে দেখা গেছে।
এসময় আমার ভাই তাদের বেদম প্রহারে আত্মচিৎকার করলে তারা বলতে থাকে ‘তুই বল, তাড়াতাড়ি টাকা পাঠাতে। আর না হয় তোকে মেরে ফেলবো।’ অপহরণকারীরা সবাই এভাবে বাংলা ভাষাতেই কথা বলছিলো। তাদের সবাইকে বাঙ্গালি বলেই মনে হয়েছে।’
‘এতে আমরা ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে তাদের দেওয়া ৪টি মোবাইল নম্বরে ২০-২৫ হাজার টাকা করে মোট ৯৫০০০/- টাকা পাঠিয়ে দেই। তারা আমাদেরকে মোট ১২টি মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেছে প্রতিটি মোবাইল নম্বরে ৫০ হাজার টাকা করে পাঠানোর জন্য। এভাবে তাদেরকে ৬ লক্ষ টাকা দিলে তারা আমার ভাইকে ছাড়বে, না হয় তারা আমার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ’আমরা উপায় না পেয়ে আমার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে তাদের দেওয়া ৪ টি বিকাশ নম্বরে ধার দেনা করে মোট ১লক্ষ ১৫ হাজার টাকা পাঠানোর পর সাংবাদিক মনির হোসেন ভাইয়ের পরামর্শে আমরা চাঁদপুরের এসপি স্যারের সাথে স্বাক্ষাত করে একটি অভিযোগ দেই। এতে এসপি স্যার আমাদেরকে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দেন।
এসপি স্যার দুবাই এম্বাসির মাধ্যমে ঐ দেশের পুলিশের সহযোগীতায় আমার ভাইকে উদ্ধার করে দেন। আমাদেরকে এসপি স্যারের কাছে মোঃ মনির হোসেন ভাই নিয়ে যাওয়ায় এসপি স্যারের সহযোগীতায় আমরা আজ আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি। আমার ভাই বর্তমানে হেফাজতে আছে আমরা চাই দ্রুত এখান থেকে মুক্তি পেয়ে তার কর্মস্থলে ফিরে যাক। এজন্য পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একজন প্রবাসী ভাইকে উদ্ধার করতে পেরেছি এটা অনেক খুশির। অপহৃত ব্যক্তির বর্তমানে দুবাই পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করব সেখান থেকে তাকে কিভাবে তার কর্মস্থলে ফেরানো যায়। আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখবো।
অপরাধীরা বাংলাদেশী হলে তাদেরকে যেভাবেই হোক আইনের আওতায় আনবো। আর যদি তারা বিদেশে অবস্থান করে এই অপকর্ম চালিয়ে থাকে তাহলেও তাদেরকে রেহাই দেওয়া হবে না। আমরা দুবাই পুলিশের সহযোগীতা নিয়ে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে যথাযোগ্য শাস্তির আওতায় আনবো।’