গণপরিবহনে বাড়া নৈরাজ্য নতুন নয়। জনগণের ওপর দিয়ে সব চলে যায় বলে এদিকে কারো চোখ যায় না। নতুন এক একটা সিস্টেম চালু হয় তা দেখাশোনার থাকে না কেউ। গণপরিবহনে ই-টিকেট চালু হয়েছে বেশ কিছুদিন কিন্তু এতে জনগণ কতটা সংকটে তা দেখার নেই কেউ। গণপরিবহনে ই-টিকেট পদ্ধতি চালু হওয়ার একমাসের বেশি সময় হলেও তাতে সফলতার মুখ দেখেনি সাধারণ যাত্রীরা। কাগজে-কলমে ই-টিকেট ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তব চিত্র পুরোপুরি আলাদা। বাসের অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়নি।
ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। ই-টিকেটের আওতায় আসা নগরীর অর্ধেকের বেশি বাসে ভাড়া নিয়ে মেশিন থেকে সমমূল্যের টিকেট যাত্রীর হাতে দিতে পরিবহন শ্রমিকদের প্রবল অনীহা দেখা গেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করার প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি পর্যন্ত হচ্ছে।
ই-টিকেট পদ্ধতি চালুর সময় পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বিষয়টি নিয়ে সমিতির পক্ষ থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকার কথা জানালেও বাস্তবে তা অপর্যাপ্ত। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে ই-টিকেট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। শুরুতেই সব শতভাগ সফল হয় না; তবে আমরা হাল ছাড়ছি না। মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে ৫ এপ্রিল থেকে নেতারা রাস্তায় নামবেন।
নগরীর বিভিন্ন রুটে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাসের কন্ডাকটরের হাতে ই-টিকেটের মেশিন থাকে না। মোহাম্মদপুর-খিলগাঁও রুটের মিডলাইন পরিবহন, মোহাম্মদপুর-ধুপখোলা রুটের মালঞ্চ পরিবহনের বাসের কন্ডাকটরের কাছে ই-টিকেটিং মেশিন দেখা যায় না। মোহাম্মদপুর-আব্দুল্লাহপুর লাইনে আলিফ, ভুইয়া পরিবহনে একই অবস্থা। টিকেট না দিয়েই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
তাছাড়া ই-টিকেট থেকে কখনো ভাড়া কাটলেও এয়ারপোর্ট থেকে বনানী পর্য়ন্ত ২০ টাকা। তা যেখান থেকেই ওঠা হোক। বিকাশ পরিবহন, শিকড় পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন, বাহন, আলিফ, ভুইয়া পরিবহনের বাসেও ই-টিকেট পদ্ধতির সুফল মেলেনি। মালিক সমিতির কাছেও অভিযোগ রয়েছে। বাসগুলোতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সরবরাহ করা ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হয় না। ই-টিকেটে স্থান ও ভাড়ার টাকা নির্দিষ্ট করে লেখা থাকলেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানের দূরত্ব উল্লেখ নেই। এক কিলোমিটার যেতেও ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে, আবার আরো বেশি দূরত্বে যেতেও ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা। আবার টাউনহল থেকে আসাদগেট পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বের ভাড়াও ১০ টাকাই নেয়া হচ্ছে। হাফ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া কেন ১০ টাকা নেয়া হবে- তা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাকটরের বাকবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। রাজধানীর অন্য রুটেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে।
এদিকে পরিবহন মালিক সমিতি একসময় ‘ওয়েবিল’, ‘সিটিং সার্ভিস’ ও ‘গেইটলক সার্ভিসের’ নামে দীর্ঘদিন ভাড়ার নৈরাজ্য চালিয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে নেয়। সড়ক ও গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতেই ২০১২ সালে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করে।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) র্যাপিড পাসের মাধ্যমে ই-টিকেট দিয়ে ভাড়া আদায় করে। কিন্তু এই ব্যবস্থা সফল হয়নি।
দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের আটটি কোম্পানির দেড় হাজার বাসে ই-টিকেট চালু করে। এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে মিরপুর অঞ্চলেও ১০ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থেকে ১৫টি রুটে ই-টিকেট ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর বিভিন্ন রুটের বাসে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া আদায় শুরু হয়। এই রুটে বাসের সংখ্যা ৭১১টি। বর্তমানে সবমিলিয়ে মোট ৫৯টি রুটে ই-টিকেট পদ্ধতি চালু থাকলেও সফলতা খুবই নগণ্য। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া বন্ধ করতেই আমরা ই-টিকেট পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু মনিটরিংয়ের অভাবে কিছুই হচ্ছে না।
দীর্ঘদিনের ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা জরুরি। এছাড়াও আমরা মনেকরি ভাড়া নৈরাজ্য দূর করতে হলে প্রথমে চালক ও তার সহকারীর মাসিক বেতনভিত্তিক নিয়োগ এবং কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে।
চাঁদাবাজি ও চুরি বন্ধ করতে হবে। নতুবা ই-টিকেটিং চালু থাকলে জনগণের উপকারে আসবে না।