এস. এম ইকবাল : চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ নৌপথে অতিমাত্রায় কচুরিপানা জটে নৌযান চলাচল করতে পারছেনা। ফলে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে। এদিকে দখল আর দুষণের কারণে আশপাশের পরিবেশ বিষ ভাষ্পে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথের দুরত্ব প্রায় ১৮ কি.মি.। পুরো নৌপথটি ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি ভেড়ি বাধেঁর ভিতরে অংশে পড়েছে। বর্তমানে জটিল আকার ধারণ করেছে কচুরি পানা। নদীটি কচুরিপানা দিয়ে এমনভাবে বেষ্টিত যে পায়ে হেঁটে নদী পার হওয়া সম্ভব । আবহমান কাল থেকে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ নৌপথটি দিয়ে চাঁদপুর থেকে ৩/৪ শ‘ মণ মালামাল নিয়ে এক একটি নৌকা চান্দ্রা, টুবগী, গাজীপুর হয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে আসত । বর্তমানে এ নৌপথে মাত্রাতিরিক্ত কচুরি পানা জটে নৌপথটি বন্ধ হয়ে গেছে।
নৌচালক / নৌকার মাঝিদের মধ্যে মোঃ জহির মাঝি, খালেক মাঝি, মালেক মাঝি, হারুন মাঝি, শাহাজান মাঝি, জানান, ৭০/৮০টি নৌকা এ পথে আবহমান কাল থেকে চলে আসলেও কচুরিপানার কারণে এখন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। তাই এখন আর পাল তোলা নৌকার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের দেখা ডাকাতিয়া নদীতে মিলছেনা। তাছাড়া ঢাকা-ফরিদগঞ্জ লঞ্চ যোগাযোগও দীর্ঘ সময় চালু ছিল। এ নৌপথটি পুণ:রুদ্ধার হলে চাঁদপুর- ফরিদগঞ্জে লঞ্চ যাতায়াতের সুযোগ পেতো এ অঞ্চলের লোকজন।
ব্যবসায়ীরা জানান, স্থল পথে মালামাল বহনে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল আর নৌপথে অনেক কম খরচ ও ঝুঁকিমুক্তভাবে মালামাল বহন করা যায়। তাই ব্যবসায়ী ও পরিবেশ বিধদের দাবী , ডাকাতিয়া নদীর কচুরি পানা অপসারণ পূর্বক নৌপথের পুন:রুদ্ধার ও পরিবেশ দুষণের হাত থেকে নদী তীরের জন বসতিকে রক্ষা করার।
সরকার প্রতি বছর ডাকাতিয়া নদীতে জেলে পরিবারগুলোর কথা চিন্তা করে মাছের পোনা অবমুক্ত করছে। কচুরিপানা পঁচে পানি দুর্গন্ধ হয়ে মাছে মড়ক লেগে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। প্রতিবছর পানি দূর্গন্ধ হয়ে হাজার হাজার দেশীয় প্রজাতির মাছ, বোয়াল, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, শোল, মলা ঢেলা, রুই, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে সাবাড় হচ্ছে।
এ নদীর ফরিদগঞ্জ অংশের বেশ কিছু অংশ দখল ও দুষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। উপজেলা সদর বাজারের উত্তর অংশে কেরোয়া ব্রীজের দু’পাড়ের দু’পাশ ময়লা-আর্বজনা ফেলে বিশাল অংশ ভরাট করেছে দখলবাজরা এবং সেকদী এলাকায় একটি নিচু ব্রীজ ও চান্দ্রা বাজারে নদী ভরাট করে ১নং বালিথুবা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভবন নির্মান হওয়ায় নদীতে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ভাবে নদীর মাঝখান ভরাট করে ভূমি অফিস নির্মান করে সরকারের অর্থের অপচয় করা হয়েছে। স্থানীয়রা নদীটি স্বচল রাখতে জরুরী ভিত্তিতে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা এবং সেকদী এলাকার নিচু ব্রীজটিও অপসারণ দাবী জানান। এ ছাড়াও টুবগী এলাকায় অনুমোদন ছাড়া একটি ব্রিক ফিল্ড এর আবর্জনায় নদী দূষণ করা হচ্ছে। নতুন ভাবে নদীর বিভিন্ন অংশে নিজেদের মত করে দখল করে নিচ্ছে দখলদাররা। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে নদী দখল মুক্ত করা দরকার মনে করছেন সচেতন মহল।
উপজেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা জানান, কচুরিপানা অপসারনের জন্য সরকারের বড় ধরণের প্রকল্প দিয়ে পানি, মাছ ও পরিবেশ দুষণমুক্ত ও জেলে পরিবারকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তবে বরাদ্দ সাপেক্ষে সমস্যা সমাধান করা যাবে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. কামরুল হাসান জানান, ডাকাতিয়া নদীর কচুরি পানা অপসারনে উদ্যোগ নিতে জেলা মৎস্য অফিস ও নৌপুলিশকে ২১ সেপ্টেম্বর জেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বলা হয়েছে। তিনি আরোও বলেন, নদীটি এভাবে পড়ে থাকলে ৮/১০ বছরের মধ্যেই অস্তিত্ব হারাবে। আমি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দ চেয়ে পত্র পাঠাবো। বরাদ্দ পেলে নদীটি পুন:রূদ্ধার করে নৌচলাচলের উপযোগী করা ও পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।