ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে খাস জমি দখল করছে ব্যবসায়ীদের একাংশ

ফরিদগঞ্জে নদীরঘাট ভেঙে গণশৌচাগার নির্মাণ চেষ্টা 

ফরিদগঞ্জে নদীরঘাট ভেঙে গণশৌচাগার নির্মাণ চেষ্টা প্রভাবশালীরা।

ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা। মোহাম্মদ শাহজাহান পাটওয়ারী। সরকারি সম্পত্তি নিরাপদ রাখা তার দায়িত্ব। অভিযোগ উঠেছে তিনিই দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ডাকাতিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ও পাকা ঘাট বন্ধ করছেন তিনি। সেখানে (নদীতে) টয়লেট নির্মাণ করবেন। যা একাধারে জনস্বার্থ বিরোধী ও সরকারী নিয়ম-নীতির লংঘন। তার সাথে রয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ব্যবসায়ীদের অপর অংশ ও এলাকাবাসী এটা চায় না। কিন্তু, চেয়ারম্যান পক্ষ নেয়ায় তারা জোরালো ভূমিকা নিতে পারছেন না। চলছে উত্তেজনা। আইন শৃংখলার অবনতি হতেও পারে- দাবী এলাকাবাসীর। ঘটনাস্থল, গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গল্লাক বাজার।
এদিকে, চেয়ারম্যানের এমন ভূমিকায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও সমাজের সচেতন মহল।
সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের ঐতিহ্যনাহী গল্লাক বাজার। বাজারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারের পাশেই আছে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও মসজিদ। ঘাটে নেমে ও বসে নদীতে প্রবাহমান পানি ব্যবহার করেন প্রায় সকল শ্রেণি, পেশার মানুষ।
স্থানীয় ও উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রেকর্ড দেখে জানিয়েছেন ডাকাতিয়া নদী ১নং খাস খতিয়ান মূক্ত। এ সব ভূমি দখল করা আইনতঃ বেআইনি। অপরদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোনোভাবেই এ কাজ সমর্থন করা যাবে না। বরং, তা বন্ধ করাই সরকারের দায়িত্ব শীলদের কাজ। খাস ভূমিতে সরকারি কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কেউ কোনো প্রকার স্থাপনা করতে পারেন না। করলে আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী, জনগুরুত্বপূর্ণ ওই খেয়াঘাট বন্ধ করা হয়েছে। একই সাথে ঘাট দখলে নিয়ে শৌচাগার নির্মাণ কাজ চলমান আছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী শৌচাগার নির্মাণের জন্য জায়গাটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ কথা বলেছেন, বাজার ব্যবসায়ী কমিটির আহবায়ক মোঃ ইমান হোসেন। শৌচাগার নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে প্রকল্পের ব্যবস্থাও করে দেন তিনি।
নির্মাণ কাজ শুরুর পর; ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের একাংশ সরকারী সম্পত্তি দখল এবং সম্ভাব্য পরিবেশ দূষনের আশঙ্কায় আপত্তি তোলেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপাতত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে উল্টো কাজের গতি দ্বিগুণ করা হয়েছে। বরং, দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে রাতের অন্ধকারে তড়িঘড়ি কাজ চলছে। এ জন্য সরকারের দায়িত্বশীল দের প্রতি ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর।
অধিকাংশ এলাকা সিআইপি’র আওতায় থাকা সত্ত্বেও, গত বছর ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়। পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলালের নেতৃত্বে ডাকাতিয়া নদী ও খালগুলোকে স্বাভাবিক রুপে ফিরিয়ে দিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে ‘ডাকাতিয়া নদী ও খাল খনন সংগ্রাম কমিটি’। জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় প্রশাসনও তাতে সাড়া দিয়ে উপজেলাব্যাপী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে খেয়াঘাট দখল করে নদীর তীরে শৌচাগার নির্মাণ কার্যক্রম জন্ম দিয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের।
খাস ভূমিতে শৌচাগার নির্মাণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে, “না” সূচক জবাব দিয়েছেন গল্লাক বাজার ব্যবসায়ী কমিটির আহবায়ক মোঃ ইমান হোসেন। বাজার ব্যবসায়ী কমিটি সংঘবদ্ধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে শৌচাগার নির্মাণ করছে, বিষয়টি ন্যায়সঙ্গত কিনা? খেয়াঘাট ভেঙে শৌচাগার নির্মাণ বাজার কেন্দ্রিক সম্ভাব্য শিল্পায়ন এবং ব্যবসায়ীদের বৃহত্তর স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কিনা? খাস জমিতে ব্যক্তিগত ইচ্ছায় কোনো করতে পারেন কি না। তিনি, এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আর জাহিদ হাসান বলেন, “খোঁজ নিচ্ছি। এখানে আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।”
একই বিষয়ে, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেছেন,  “খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। কাউকে কাজের অনুমতি আমি দেইনি।” সরকারী জায়গা দখল মুক্ত করতে শীঘ্রই কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে বলেন, “ঘাট বন্ধ করে ডাকাতিয়ায় শৌচাগার নির্মাণে ইউপি চেয়ারম্যানের ভূমিকা থাকলে আমি তাকে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলবো”।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। কিছু করণীয় থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।”
ট্যাগস :

স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য হলেন নূরে আলম গাজী

ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে খাস জমি দখল করছে ব্যবসায়ীদের একাংশ

ফরিদগঞ্জে নদীরঘাট ভেঙে গণশৌচাগার নির্মাণ চেষ্টা 

আপডেট সময় : ০৯:২৩:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা। মোহাম্মদ শাহজাহান পাটওয়ারী। সরকারি সম্পত্তি নিরাপদ রাখা তার দায়িত্ব। অভিযোগ উঠেছে তিনিই দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ডাকাতিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ও পাকা ঘাট বন্ধ করছেন তিনি। সেখানে (নদীতে) টয়লেট নির্মাণ করবেন। যা একাধারে জনস্বার্থ বিরোধী ও সরকারী নিয়ম-নীতির লংঘন। তার সাথে রয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ব্যবসায়ীদের অপর অংশ ও এলাকাবাসী এটা চায় না। কিন্তু, চেয়ারম্যান পক্ষ নেয়ায় তারা জোরালো ভূমিকা নিতে পারছেন না। চলছে উত্তেজনা। আইন শৃংখলার অবনতি হতেও পারে- দাবী এলাকাবাসীর। ঘটনাস্থল, গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গল্লাক বাজার।
এদিকে, চেয়ারম্যানের এমন ভূমিকায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও সমাজের সচেতন মহল।
সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের ঐতিহ্যনাহী গল্লাক বাজার। বাজারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারের পাশেই আছে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও মসজিদ। ঘাটে নেমে ও বসে নদীতে প্রবাহমান পানি ব্যবহার করেন প্রায় সকল শ্রেণি, পেশার মানুষ।
স্থানীয় ও উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রেকর্ড দেখে জানিয়েছেন ডাকাতিয়া নদী ১নং খাস খতিয়ান মূক্ত। এ সব ভূমি দখল করা আইনতঃ বেআইনি। অপরদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোনোভাবেই এ কাজ সমর্থন করা যাবে না। বরং, তা বন্ধ করাই সরকারের দায়িত্ব শীলদের কাজ। খাস ভূমিতে সরকারি কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কেউ কোনো প্রকার স্থাপনা করতে পারেন না। করলে আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী, জনগুরুত্বপূর্ণ ওই খেয়াঘাট বন্ধ করা হয়েছে। একই সাথে ঘাট দখলে নিয়ে শৌচাগার নির্মাণ কাজ চলমান আছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী শৌচাগার নির্মাণের জন্য জায়গাটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ কথা বলেছেন, বাজার ব্যবসায়ী কমিটির আহবায়ক মোঃ ইমান হোসেন। শৌচাগার নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে প্রকল্পের ব্যবস্থাও করে দেন তিনি।
নির্মাণ কাজ শুরুর পর; ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের একাংশ সরকারী সম্পত্তি দখল এবং সম্ভাব্য পরিবেশ দূষনের আশঙ্কায় আপত্তি তোলেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপাতত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে উল্টো কাজের গতি দ্বিগুণ করা হয়েছে। বরং, দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে রাতের অন্ধকারে তড়িঘড়ি কাজ চলছে। এ জন্য সরকারের দায়িত্বশীল দের প্রতি ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর।
অধিকাংশ এলাকা সিআইপি’র আওতায় থাকা সত্ত্বেও, গত বছর ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়। পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলালের নেতৃত্বে ডাকাতিয়া নদী ও খালগুলোকে স্বাভাবিক রুপে ফিরিয়ে দিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে ‘ডাকাতিয়া নদী ও খাল খনন সংগ্রাম কমিটি’। জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় প্রশাসনও তাতে সাড়া দিয়ে উপজেলাব্যাপী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে খেয়াঘাট দখল করে নদীর তীরে শৌচাগার নির্মাণ কার্যক্রম জন্ম দিয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের।
খাস ভূমিতে শৌচাগার নির্মাণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে, “না” সূচক জবাব দিয়েছেন গল্লাক বাজার ব্যবসায়ী কমিটির আহবায়ক মোঃ ইমান হোসেন। বাজার ব্যবসায়ী কমিটি সংঘবদ্ধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে শৌচাগার নির্মাণ করছে, বিষয়টি ন্যায়সঙ্গত কিনা? খেয়াঘাট ভেঙে শৌচাগার নির্মাণ বাজার কেন্দ্রিক সম্ভাব্য শিল্পায়ন এবং ব্যবসায়ীদের বৃহত্তর স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কিনা? খাস জমিতে ব্যক্তিগত ইচ্ছায় কোনো করতে পারেন কি না। তিনি, এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আর জাহিদ হাসান বলেন, “খোঁজ নিচ্ছি। এখানে আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।”
একই বিষয়ে, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেছেন,  “খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। কাউকে কাজের অনুমতি আমি দেইনি।” সরকারী জায়গা দখল মুক্ত করতে শীঘ্রই কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে বলেন, “ঘাট বন্ধ করে ডাকাতিয়ায় শৌচাগার নির্মাণে ইউপি চেয়ারম্যানের ভূমিকা থাকলে আমি তাকে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলবো”।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। কিছু করণীয় থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।”