ঢাকা ০৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে পৌরসভার অনলাইন সেবা

নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত নারায়ণপুর পৌরবাসী

আইনী জটিলতা শেষে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবগঠিত নারায়ণপুর পৌরসভার কার্যক্রম পৌর প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। কাগজে-কলমে পৌর নাগরিক হলেও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়নি এখনো।

গত দেড় বছর আগে পৌরসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও ওয়ার্ডভিত্তিক জিও কোড না থাকায় এখনো বন্ধ রয়েছে জন্ম সনদসহ সকল অনলাইন সেবা। তবে জন্ম সনদ ছাড়া অন্যান্য সেবা চলছে অফলাইনে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নামেই মাত্র পৌরসভা। যেখানে জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্র পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দিনের পর দিন। সেবার পরিবর্তে বেড়েছে চরম দুর্ভোগ।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সফটওয়্যারে ‘নারায়ণপুর পৌরসভা’ শব্দটি এবং পৌর কোড যুক্ত না হওয়ায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরসভার অর্ধ লক্ষাধিক নাগরিক। পৌরসভার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা নিতে আসা পৌর নাগরিকরা অনলাইন জটিলতার কারণে জাতীয় সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্রসহ বিদ্যালয়গামী ছেলে-মেয়েদের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারছেন না। বিদেশগামীরা পাসপোর্টের কাজ করতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।

Model Hospital

সরেজমিনে জানা যায়, ভাঙা রাস্তাঘাট, সুপেয় পানির অভাব, ভঙগুর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ও লাইটিং এর ব্যবস্থা, সামান্য বৃষ্টিতে পৌরসভার বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে নারায়ণপুর পৌরসভার ৫০ হাজারেরও অধিক পৌর নাগরিক।

পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নারায়ণপুর পৌরসভায় রূপান্তরিত হওয়ায় সীমানা নির্ধারণ এবং ওয়ার্ড বিভাজন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ওয়ার্ড বিভাজন গেজেট না হওয়ায় পৌরসভা হিসেবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নাগরিকদের কাঙ্খিত অনলাইন সেবা দিতে পারছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধন সেবা, পাসপোর্টের সাথে কারো জন্ম নিবন্ধনে নামের অমিল থাকলে তার সংশোধন সংক্রান্ত সেবাসহ সকল প্রকার অনলাইন সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং বিদেশগামী রেমিটেন্স যোদ্ধারা।

এ বিষয়ে নারায়ণপুর পৌরসভার বর্তমান পৌর প্রশাসক এবং উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাবেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ওয়ার্ড বিভক্তির গেজেট না থাকায় পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে দুই ডিজিটের জিও কোড পাওয়া যায়নি। আমরা ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। দুই ডিজিটের জিও কোড পেয়ে গেলে আমরা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে পারবো। তাছাড়া এ পৌরসভায় আমি ছাড়া আর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি নেই। তবে আমার অফিসের মাধ্যমে অফলাইনে সবসেবা দিয়ে যাচ্ছি এবং ইউনিয়ন থাকাকালীন সময়ের ওয়ার্ড অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য; বিগত ২০১০ সালে নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নিত করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একই বছরের ১৫ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নারায়ণপুর পৌরসভা গেজেট প্রকাশ করে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে পৌরসভার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। পৌরসভার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর উচ্চ আদালতের রায়ে পৌরসভার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের একটি বিচারিক বেঞ্চে নারায়ণপুর ইউনিয়নের পক্ষে দায়ের করা মামলা খারিজ করে নারায়ণপুর পৌরসভা বহাল রেখে পৌরসভার পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। এর পর থেকে পৌরসভার কার্যক্রম চলে আসছে।

ট্যাগস :

স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য হলেন নূরে আলম গাজী

আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে পৌরসভার অনলাইন সেবা

নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত নারায়ণপুর পৌরবাসী

আপডেট সময় : ০৪:৫২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

আইনী জটিলতা শেষে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবগঠিত নারায়ণপুর পৌরসভার কার্যক্রম পৌর প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। কাগজে-কলমে পৌর নাগরিক হলেও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়নি এখনো।

গত দেড় বছর আগে পৌরসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও ওয়ার্ডভিত্তিক জিও কোড না থাকায় এখনো বন্ধ রয়েছে জন্ম সনদসহ সকল অনলাইন সেবা। তবে জন্ম সনদ ছাড়া অন্যান্য সেবা চলছে অফলাইনে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নামেই মাত্র পৌরসভা। যেখানে জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্র পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দিনের পর দিন। সেবার পরিবর্তে বেড়েছে চরম দুর্ভোগ।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সফটওয়্যারে ‘নারায়ণপুর পৌরসভা’ শব্দটি এবং পৌর কোড যুক্ত না হওয়ায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরসভার অর্ধ লক্ষাধিক নাগরিক। পৌরসভার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা নিতে আসা পৌর নাগরিকরা অনলাইন জটিলতার কারণে জাতীয় সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্রসহ বিদ্যালয়গামী ছেলে-মেয়েদের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারছেন না। বিদেশগামীরা পাসপোর্টের কাজ করতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।

Model Hospital

সরেজমিনে জানা যায়, ভাঙা রাস্তাঘাট, সুপেয় পানির অভাব, ভঙগুর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ও লাইটিং এর ব্যবস্থা, সামান্য বৃষ্টিতে পৌরসভার বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে নারায়ণপুর পৌরসভার ৫০ হাজারেরও অধিক পৌর নাগরিক।

পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নারায়ণপুর পৌরসভায় রূপান্তরিত হওয়ায় সীমানা নির্ধারণ এবং ওয়ার্ড বিভাজন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ওয়ার্ড বিভাজন গেজেট না হওয়ায় পৌরসভা হিসেবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নাগরিকদের কাঙ্খিত অনলাইন সেবা দিতে পারছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধন সেবা, পাসপোর্টের সাথে কারো জন্ম নিবন্ধনে নামের অমিল থাকলে তার সংশোধন সংক্রান্ত সেবাসহ সকল প্রকার অনলাইন সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং বিদেশগামী রেমিটেন্স যোদ্ধারা।

এ বিষয়ে নারায়ণপুর পৌরসভার বর্তমান পৌর প্রশাসক এবং উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাবেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ওয়ার্ড বিভক্তির গেজেট না থাকায় পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে দুই ডিজিটের জিও কোড পাওয়া যায়নি। আমরা ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। দুই ডিজিটের জিও কোড পেয়ে গেলে আমরা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে পারবো। তাছাড়া এ পৌরসভায় আমি ছাড়া আর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি নেই। তবে আমার অফিসের মাধ্যমে অফলাইনে সবসেবা দিয়ে যাচ্ছি এবং ইউনিয়ন থাকাকালীন সময়ের ওয়ার্ড অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য; বিগত ২০১০ সালে নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নিত করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একই বছরের ১৫ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নারায়ণপুর পৌরসভা গেজেট প্রকাশ করে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে পৌরসভার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। পৌরসভার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর উচ্চ আদালতের রায়ে পৌরসভার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের একটি বিচারিক বেঞ্চে নারায়ণপুর ইউনিয়নের পক্ষে দায়ের করা মামলা খারিজ করে নারায়ণপুর পৌরসভা বহাল রেখে পৌরসভার পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। এর পর থেকে পৌরসভার কার্যক্রম চলে আসছে।