বাংলাদেশের গিটার অঙ্গনে দুরন্ত এক প্রতিভার নাম দিলীপ কুমার ঘোষ। বাজনা করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখেন তিনি। আর তাই তো তিনি যখন স্টেজে ওঠেন বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা। প্রতিভাবান এই মিউজিশিয়ান ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে গিটারিস্ট হিসেবে থাকলেও চলেছেন অনেকটা আওয়াজ কম নীতিতে। তবে কিছু অনুষ্ঠান নিজস্ব শক্তিতে তাকে নিয়ে এসেছে আলোচনায়, মুখর করেছে শ্রোতার ভালোবাসায়।
দিলীপ কুমার ঘোষ একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। চাকুরি ও পরিবার সামলিয়ে সুযোগ পেলেই শিল্প-সাংস্কৃতির ময়দানে সরব থাকতেন তিনি। এ ক্ষেত্রে সহধর্মীনী ঝর্না ঘোষ তার পথচলায় উৎসাহ জুগিয়েছেন। জনপ্রশাসন পদক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি পদক সহ তার বর্ণাঢ্য জীবনে রয়েছে অনেক প্রাপ্তি। বর্তমানে তিনি চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির পর্যবেক্ষক ও ন্যায় পালের দায়িত্ব পালন করছেন। সদা হাসোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত এই মানুষটির জন্ম ১৯৬০ সালে ৩১ জানুয়ারি চাঁদপুরের পুরানবাজারস্থ ঘোষ পাড়ায়।
তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৮৭ সালের দিকে চাঁদপুর শহরের জোড়পুকুর পাড়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে ‘আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো’ গানটি তৎকালীন হাওয়াইয়ান গিটার শিল্পীরা দর্শকদের উদ্দেশ্যে পরিবেশন করেন। সেই সুর নাড়া দেয় দিলীপ ঘোষের প্রাণে। সেই থেকে গিটার তার নিত্যসঙ্গী। চাকুরির পাশাপাশি হাওয়াইয়ান গিটার অনুশীলন শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে গিটারের ওপর দক্ষতা অর্জন করেন। অসংখ্য শিক্ষার্থীকেও তিনি হাওয়াইয়ান গিটারের তালিম দিয়েছেন। এরমধ্যে ঐশী ঘোষ তার কাছ থেকে দিক্ষা নিয়ে খুব অল্প সময়ে বোদ্ধামহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হাওয়াইয়ান গিটার পরিবেশন করে দিলীপ কুমার ঘোষ বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেন। তিনি গণিত শাস্ত্রেও বেশ পারদর্শী। গিটারচর্চা ও সরকারি চাকুরির পাশাপাশি দীর্ঘ ৪৫ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের গণিত বিষয়ক পাঠদান করেন। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই ছেলের জনক। তার স্ত্রী গৃহবধূ। এতটুকু আসার পেছনে কার বেশি ভূমিকা রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে, দিলীপ কুমার ঘোষ অনায়াশেই জবাব দেন, স্ত্রীর। তার অনুপ্রেরণা আমার গিটারচর্চাকে শানিত করেছে।
জানা গেছে দিলীপ কুমার ঘোষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ গিটার শিল্পী সংস্থা কর্তৃক পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি ২০১৮ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস জেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্মাননা, ২০১৮ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্মাননা, রোটারী ইন্টারন্যাশন ক্লাব কর্তৃক ভোকেশনাল একসিলেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৮-২০১৯) লাভ করেন এবং ২০২১ সালে চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির শুভেচ্ছা স্মারক সম্মানে ভূষিত হন। ২০২২ সালে ভারতের অকটিভেন্ট একটি সংস্থা হতে বেষ্ট ইকোলেশন পদক লাভ করেন। ভারতের রবীন্দ্র সংগীত (গিটার) প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিজয়ী সেরা ৩০ জনের মধ্যে বিজয় অর্জন করেন। এছাড়া সরকারি চাকুরিতে থাকাকালীন রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত জনপ্রশাসন পদক (পাবলিক এডমিনিট্রেশন এওয়ার্ড ২০১৯) গ্রহণ করেন।
দিলীপ কুমার ঘোষ, বলেন, ‘সবসময় একজন মিউজিয়িশানই হতে চেয়েছি আমি। বলতে পারেন মিউজিক খাই, মিউজিকে ঘুমাই। নিজের প্রিয় কাজটি করতে পারছি, সেটির জন্য শ্রোতার ভালোবাসা পাচ্ছি এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার জীবনে আর হতে পারে না!’ বহু গুণে গুনান্বিত দিলীপ কুমার ঘোষ চাঁদপুরে হাওয়াইয়ান গিটারকে আরো অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান।