ঢাকা ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মূল্যবোধের অপপ্রয়োগ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

  • মোঃ রনি
  • আপডেট সময় : ০৮:১৫:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪
  • 240

মূল্যবোধ হলো সার্বিক ব্যাক্তিত্বের প্রভা। যার উপস্থিতি মানুষের রক্ত-মজ্জায়, চিন্তা-চেতনায়, ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে ও প্রায়োগিক কর্মকান্ডে। এসবের মার্জিত, পরিশীলিত, বিশুদ্ধ এবং লালন ও পালনযোগ্য রূপই মূল্যবোধ। কিন্তু মূল্যবোধ অনুভব করতে হয়, কথা ও আচরণে প্রকাশ করতে হয়। অনুভব ও আত্মস্থ করার মাধ্যমে মূল্যবোধ অন্য হৃদয়ে আপনা-আপনি সঞ্চারিত হয়। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মূল্যবোধ সঞ্চারিত হয়েছে।

Model Hospital

মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের চিন্তা ও অনুভূতিতে মানুষের কল্যাণ বা সেবাই হবে মুখ্য। কিন্তু কারও মধ্যে যদি মূল্যবোধ অনুপস্থিত থাকে, তাহলে সে মানুষ হয়ে উঠবে বর্বর ও পশু। মূল্যবোধের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা নিঃসন্দেহে ঈর্ষনীয়। বর্তমান আমরা যে সমাজে বাস করছি সে সমাজে এতটাই অবক্ষয় শুরু হয়েছে যে, তা রোধ করতে না পারলে সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। হত্যা, খুন, ধর্ষণ যেন থামছে না। এখানে কারও জীবনের যেমন কোনো নিরাপত্তা নেই তেমনি মান, সম্মান, ইজ্জত নিয়ে বেঁচে থাকাও কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র। একজন মানুষকে এ তিনটি স্তরে জীবনযাপন করতে হয়। তাই আমাদের সমাজ রাষ্ট্র যদি সুন্দর সুস্থ সংস্কৃতির পরিবর্তে অসুস্থ সংস্কৃতি, বিকৃত কুরুচিসম্পন্ন মানুষের দখলে যায় তাহলে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্ম এ সমাজ থেকে কি শিখবে?

মানবজাতির ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ সাধনে প্রতিটি সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির মূল্যবোধ অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু পৃথিবীর মধ্যে মানবজাতিই সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত, তাই সত্যিকারের মানুষের মানবিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই। কেননা, কেবল জন্মের মধ্য দিয়েই কোনো মানব সন্তান মানুষে পরিণত হতে পারে না। তাকে নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিল তিল করে মানবিক বোধ অর্জন করতে হয়। যুবসমাজ একটি দেশের ভবিষ্যৎ। একটি দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি যুবসমাজের জ্ঞানে, কর্মে, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে অগ্রসরমানতার ওপর নির্ভরশীল। আবার কোনো কারণে কোনো দেশের যুবসমাজে অবক্ষয় দেখা দিলে সেই জাতি অঙ্কুরেই ধ্বংস হতে বাধ্য।

আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক বিভিন্ন শ্রেণির তরুণ আছে। তাদের কেউ শিক্ষিত, কেউ অশিক্ষিত, কেউ বেকার। এদের চলার পথ বিচিত্র, ভাবনা-চিন্তার জগৎ এদের রুদ্ধ, নানা সমস্যায় জীবন বিপর্যস্ত। এরা সামনে কোনো আলো দেখতে পায় না। বিভ্রান্তিতে ভরা এদের জীবন, ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে এরা ব্যাকুল। এমনিভাবে আমাদের যুবসমাজের একটা বিরাট অংশ বর্তমানে অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিনোদনের মাধ্যমগুলোও যুবসমাজকে অবক্ষয়ের দিকে প্রভাবিত করছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সিনেমা জগৎ অশ্লীল নৃত্য ও আজগুবি গল্পকাহিনিতে পূর্ণ। জীবনের সাথে এসব কাহিনী ও ঘটনার কোনো মিল নেই। এসব সস্তা দরের চিত্তবিনোদন স্বচ্ছ ও নির্মল আনন্দের পরিবর্তে যুবসমাজকে অবক্ষয়ের দিকে পরিচালিত করছে। তাদের জন্যে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। স্যাটেলাইট চ্যানেলেও প্রদর্শিত হচ্ছে নগ্ন ছবি, দেখানো হচ্ছে মারামারি, যা যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই যুবসমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে পুকুরে বা নদীতে সাঁতার কেটে। বন্ধুদের সঙ্গে হাডুডু, দাঁড়িয়াবাঁধা ও গোল্লাছুট খেলে। কিছুদিন আগেও গ্রামে গ্রামে পাল্লা দিয়ে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার প্রতিযোগিতা হতো। এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। মোবাইল ফোনের গেমে আসক্তিতে আগামী প্রজন্ম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এখনই সেটি রুখে দিতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম খুব সহজেই অশ্লীল সিনেমা বা চলচ্চিত্র হাতের কাছে পায়। ফলে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তোবা মূল্যবোধহীন আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তাই আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক দলবল নির্বিশেষে আমরা এগিয়ে যাব যুবসমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। এই প্রত্যাশা শেষ করছি।

লেখক: মোঃ রনি, শিক্ষার্থী, বিবিএ (অনার্স) হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত, রামগঞ্জ মডেল ডিগ্রি কলেজ, লক্ষ্মীপুর।

ট্যাগস :

৭ নং ওয়ার্ডে ঘোড়া প্রতীকের উঠোন বৈঠকে নারী ভোটারদের ব্যাপক সারা

মূল্যবোধের অপপ্রয়োগ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

আপডেট সময় : ০৮:১৫:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪

মূল্যবোধ হলো সার্বিক ব্যাক্তিত্বের প্রভা। যার উপস্থিতি মানুষের রক্ত-মজ্জায়, চিন্তা-চেতনায়, ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে ও প্রায়োগিক কর্মকান্ডে। এসবের মার্জিত, পরিশীলিত, বিশুদ্ধ এবং লালন ও পালনযোগ্য রূপই মূল্যবোধ। কিন্তু মূল্যবোধ অনুভব করতে হয়, কথা ও আচরণে প্রকাশ করতে হয়। অনুভব ও আত্মস্থ করার মাধ্যমে মূল্যবোধ অন্য হৃদয়ে আপনা-আপনি সঞ্চারিত হয়। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মূল্যবোধ সঞ্চারিত হয়েছে।

Model Hospital

মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের চিন্তা ও অনুভূতিতে মানুষের কল্যাণ বা সেবাই হবে মুখ্য। কিন্তু কারও মধ্যে যদি মূল্যবোধ অনুপস্থিত থাকে, তাহলে সে মানুষ হয়ে উঠবে বর্বর ও পশু। মূল্যবোধের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা নিঃসন্দেহে ঈর্ষনীয়। বর্তমান আমরা যে সমাজে বাস করছি সে সমাজে এতটাই অবক্ষয় শুরু হয়েছে যে, তা রোধ করতে না পারলে সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। হত্যা, খুন, ধর্ষণ যেন থামছে না। এখানে কারও জীবনের যেমন কোনো নিরাপত্তা নেই তেমনি মান, সম্মান, ইজ্জত নিয়ে বেঁচে থাকাও কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র। একজন মানুষকে এ তিনটি স্তরে জীবনযাপন করতে হয়। তাই আমাদের সমাজ রাষ্ট্র যদি সুন্দর সুস্থ সংস্কৃতির পরিবর্তে অসুস্থ সংস্কৃতি, বিকৃত কুরুচিসম্পন্ন মানুষের দখলে যায় তাহলে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্ম এ সমাজ থেকে কি শিখবে?

মানবজাতির ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ সাধনে প্রতিটি সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির মূল্যবোধ অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু পৃথিবীর মধ্যে মানবজাতিই সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত, তাই সত্যিকারের মানুষের মানবিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই। কেননা, কেবল জন্মের মধ্য দিয়েই কোনো মানব সন্তান মানুষে পরিণত হতে পারে না। তাকে নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিল তিল করে মানবিক বোধ অর্জন করতে হয়। যুবসমাজ একটি দেশের ভবিষ্যৎ। একটি দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি যুবসমাজের জ্ঞানে, কর্মে, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে অগ্রসরমানতার ওপর নির্ভরশীল। আবার কোনো কারণে কোনো দেশের যুবসমাজে অবক্ষয় দেখা দিলে সেই জাতি অঙ্কুরেই ধ্বংস হতে বাধ্য।

আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক বিভিন্ন শ্রেণির তরুণ আছে। তাদের কেউ শিক্ষিত, কেউ অশিক্ষিত, কেউ বেকার। এদের চলার পথ বিচিত্র, ভাবনা-চিন্তার জগৎ এদের রুদ্ধ, নানা সমস্যায় জীবন বিপর্যস্ত। এরা সামনে কোনো আলো দেখতে পায় না। বিভ্রান্তিতে ভরা এদের জীবন, ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে এরা ব্যাকুল। এমনিভাবে আমাদের যুবসমাজের একটা বিরাট অংশ বর্তমানে অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিনোদনের মাধ্যমগুলোও যুবসমাজকে অবক্ষয়ের দিকে প্রভাবিত করছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সিনেমা জগৎ অশ্লীল নৃত্য ও আজগুবি গল্পকাহিনিতে পূর্ণ। জীবনের সাথে এসব কাহিনী ও ঘটনার কোনো মিল নেই। এসব সস্তা দরের চিত্তবিনোদন স্বচ্ছ ও নির্মল আনন্দের পরিবর্তে যুবসমাজকে অবক্ষয়ের দিকে পরিচালিত করছে। তাদের জন্যে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। স্যাটেলাইট চ্যানেলেও প্রদর্শিত হচ্ছে নগ্ন ছবি, দেখানো হচ্ছে মারামারি, যা যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই যুবসমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে পুকুরে বা নদীতে সাঁতার কেটে। বন্ধুদের সঙ্গে হাডুডু, দাঁড়িয়াবাঁধা ও গোল্লাছুট খেলে। কিছুদিন আগেও গ্রামে গ্রামে পাল্লা দিয়ে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার প্রতিযোগিতা হতো। এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। মোবাইল ফোনের গেমে আসক্তিতে আগামী প্রজন্ম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এখনই সেটি রুখে দিতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম খুব সহজেই অশ্লীল সিনেমা বা চলচ্চিত্র হাতের কাছে পায়। ফলে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তোবা মূল্যবোধহীন আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তাই আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক দলবল নির্বিশেষে আমরা এগিয়ে যাব যুবসমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। এই প্রত্যাশা শেষ করছি।

লেখক: মোঃ রনি, শিক্ষার্থী, বিবিএ (অনার্স) হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত, রামগঞ্জ মডেল ডিগ্রি কলেজ, লক্ষ্মীপুর।