ঢাকা ০৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতে প্রবীণদের শান্তির নীড় হোক নিজ পরিবারেই

শীতে প্রবীণদের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজন শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা। শীত মৌসুমে আমাদের সবারই উচিত শরীরের প্রতি একটু বাড়তি যত্নের নেওয়া। বয়সের কারণে প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময়টায় তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শিশু থেকে শুরু করে বাড়ির প্রবীণদের বেলায়ও রাখতে হয় বিশেষ সতর্কতা। কেননা অতিরিক্ত ঠান্ডায় তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। শীতকালে বয়স্কদের খুব সাধারণ একটি সমস্যা হল হাইপোথারমিয়া। শরীরের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে নেমে যায়। হাইপোথারমিয়া হলে প্রভাব পড়বে কিডনি, লিভারে। ফুসফুসের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন জনিত সমস্যা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্কিনের সমস্যাও বাড়ে এইসময়। তাই তাদের শরীর গরম রাখা এসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শীত ছাড়াও একাকিত্ব মানুষকে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ করে তোলে। সেই অসুস্থতা রোধ করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে অনেক সময়। বিশেষ করে প্রবীণদের এ সমস্যাটা বেশি ভোগ করতে হয়। কিছু কিছু নিঃসঙ্গতায় মানুষকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে হচ্ছে। যার বাস্তব একটি উদাহরণ- গত বছর চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর একজন প্রবীণের আত্মহত্যা সমাজকে নাড়া দিয়েছে।
সমাজের প্রায় প্রতিটি সংসারেই থাকে প্রবীণ সদস্য। অনেক সংসারে তাদের দেখভাল করার জন্য থাকে না কোন সদস্য। এক সময়ের কর্মপ্রাণ মানুষ বুড়ো হয়ে পড়লে যথাযথ সেবাযত্ন, চিকিৎসা কিংবা ভাল আচরণের অভাবে শারীরিক অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয় বুড়ো মা কিংবা বাবাকে। আর একজন চলে গেলে আরেকজন দুর্বল হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গতায়। মানবজীবন বড় বিচিত্র। এককালের কর্মপ্রাণ ও উপার্জনক্ষম মানুষ সময়ের ব্যবধানে বৃদ্ধ বয়সে হয়ে পড়েন কর্মশক্তিহীন। তাদের এ দুর্বলতায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হতে হয় বহু প্রবীণ সদস্যকে।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনটা নানারূপে বা কালে বিভক্ত। যেমন- শৈশবকাল, কৈশরকাল, প্রাক-যৌবনকাল, যৌবনকাল এবং প্রৌঢ়ত্ব। প্রৌঢ়ত্বের সীমারেখা পেরিয়ে একজন মানুষ এক সময় বার্ধক্যে উপনীত হন। বার্ধক্যে বা বৃদ্ধাবস্থা মানব জীবনের শেষ পর্যায় বা ধাপ। এদিকে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা প্রবীণদের নিঃসঙ্গতায় ফেলে দিয়েছে। আগে যৌথ পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ছিল, এখন তা ভেঙে একক পরিবারভিত্তিক রূপ নিয়েছে। এই একক পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের নীরব শিকার হচ্ছেন প্রবীণ জনগোষ্ঠী।
আমাদের প্রবীণরা আজ ভাল নেই। তারা এখন নিজের বাড়িতেই বিভিন্ন নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। যতদিন যাচ্ছে, ততই প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে। তার সঙ্গে সমাজে প্রবীণদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। এটা এখন একটা বৈশ্বিক সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ষাটোর্ধ্বদের প্রবীণ বলা হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে ৬৫ উর্ধ্বদের প্রবীণ বলে ঘোষণা করা হয়। দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী প্রবীণ হলেও তাদের কল্যাণে তেমন কোন সুব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রবীণদের কল্যাণে যেসব অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন যেমন, তাদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রবীণ নিবাস, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ব্যবস্থা, আর্থিক সমর্থন, পুষ্টিকর খাদ্য, ইত্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।
অধিকাংশ এ দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী ষাটোর্ধ্ব বয়স থেকে কর্মহীনতা, আর্থিক প্রবঞ্চনা, পুষ্টিহীনতা, নিরাপদ পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পারিবারিক অবহেলা, নিঃসঙ্গতাসহ নানা জটিল অবস্থার ভেতর দিয়ে দিনযাপন করেন। শহরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাঝে এই অবস্থা তেমন একটা পরিলক্ষিত না হলেও নিন্মবিত্ত ও গরিব জনগোষ্ঠীর মাঝে বঞ্চনার এই মাত্রা দৃশ্যমান। তাই শীতকালে পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। তীব্র শীতে অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে বিষণ্নতায় ভোগেন।
তাঁদের বেশি করে সময় দিতে হবে। হাসিখুশি রাখতে হবে। মনে কষ্ট পায় এমন কথা বা আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্ত থাকতে পারলে তাদের ভালো ঘুম হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম প্রবীণের মন ও শরীর ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই পরিবারই হোক প্রবীণদের শান্তির নীড়।
লেখক ও সমাজকর্মী
চাঁদপুর সদর।
ট্যাগস :

হাজীগঞ্জে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রা’ণ গে’ল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর

শীতে প্রবীণদের শান্তির নীড় হোক নিজ পরিবারেই

আপডেট সময় : ০৯:৪৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
শীতে প্রবীণদের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজন শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা। শীত মৌসুমে আমাদের সবারই উচিত শরীরের প্রতি একটু বাড়তি যত্নের নেওয়া। বয়সের কারণে প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময়টায় তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শিশু থেকে শুরু করে বাড়ির প্রবীণদের বেলায়ও রাখতে হয় বিশেষ সতর্কতা। কেননা অতিরিক্ত ঠান্ডায় তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। শীতকালে বয়স্কদের খুব সাধারণ একটি সমস্যা হল হাইপোথারমিয়া। শরীরের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে নেমে যায়। হাইপোথারমিয়া হলে প্রভাব পড়বে কিডনি, লিভারে। ফুসফুসের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন জনিত সমস্যা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্কিনের সমস্যাও বাড়ে এইসময়। তাই তাদের শরীর গরম রাখা এসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শীত ছাড়াও একাকিত্ব মানুষকে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ করে তোলে। সেই অসুস্থতা রোধ করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে অনেক সময়। বিশেষ করে প্রবীণদের এ সমস্যাটা বেশি ভোগ করতে হয়। কিছু কিছু নিঃসঙ্গতায় মানুষকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে হচ্ছে। যার বাস্তব একটি উদাহরণ- গত বছর চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর একজন প্রবীণের আত্মহত্যা সমাজকে নাড়া দিয়েছে।
সমাজের প্রায় প্রতিটি সংসারেই থাকে প্রবীণ সদস্য। অনেক সংসারে তাদের দেখভাল করার জন্য থাকে না কোন সদস্য। এক সময়ের কর্মপ্রাণ মানুষ বুড়ো হয়ে পড়লে যথাযথ সেবাযত্ন, চিকিৎসা কিংবা ভাল আচরণের অভাবে শারীরিক অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয় বুড়ো মা কিংবা বাবাকে। আর একজন চলে গেলে আরেকজন দুর্বল হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গতায়। মানবজীবন বড় বিচিত্র। এককালের কর্মপ্রাণ ও উপার্জনক্ষম মানুষ সময়ের ব্যবধানে বৃদ্ধ বয়সে হয়ে পড়েন কর্মশক্তিহীন। তাদের এ দুর্বলতায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হতে হয় বহু প্রবীণ সদস্যকে।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনটা নানারূপে বা কালে বিভক্ত। যেমন- শৈশবকাল, কৈশরকাল, প্রাক-যৌবনকাল, যৌবনকাল এবং প্রৌঢ়ত্ব। প্রৌঢ়ত্বের সীমারেখা পেরিয়ে একজন মানুষ এক সময় বার্ধক্যে উপনীত হন। বার্ধক্যে বা বৃদ্ধাবস্থা মানব জীবনের শেষ পর্যায় বা ধাপ। এদিকে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা প্রবীণদের নিঃসঙ্গতায় ফেলে দিয়েছে। আগে যৌথ পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ছিল, এখন তা ভেঙে একক পরিবারভিত্তিক রূপ নিয়েছে। এই একক পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের নীরব শিকার হচ্ছেন প্রবীণ জনগোষ্ঠী।
আমাদের প্রবীণরা আজ ভাল নেই। তারা এখন নিজের বাড়িতেই বিভিন্ন নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। যতদিন যাচ্ছে, ততই প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে। তার সঙ্গে সমাজে প্রবীণদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। এটা এখন একটা বৈশ্বিক সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ষাটোর্ধ্বদের প্রবীণ বলা হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে ৬৫ উর্ধ্বদের প্রবীণ বলে ঘোষণা করা হয়। দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী প্রবীণ হলেও তাদের কল্যাণে তেমন কোন সুব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রবীণদের কল্যাণে যেসব অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন যেমন, তাদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রবীণ নিবাস, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ব্যবস্থা, আর্থিক সমর্থন, পুষ্টিকর খাদ্য, ইত্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।
অধিকাংশ এ দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী ষাটোর্ধ্ব বয়স থেকে কর্মহীনতা, আর্থিক প্রবঞ্চনা, পুষ্টিহীনতা, নিরাপদ পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পারিবারিক অবহেলা, নিঃসঙ্গতাসহ নানা জটিল অবস্থার ভেতর দিয়ে দিনযাপন করেন। শহরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাঝে এই অবস্থা তেমন একটা পরিলক্ষিত না হলেও নিন্মবিত্ত ও গরিব জনগোষ্ঠীর মাঝে বঞ্চনার এই মাত্রা দৃশ্যমান। তাই শীতকালে পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। তীব্র শীতে অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে বিষণ্নতায় ভোগেন।
তাঁদের বেশি করে সময় দিতে হবে। হাসিখুশি রাখতে হবে। মনে কষ্ট পায় এমন কথা বা আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্ত থাকতে পারলে তাদের ভালো ঘুম হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম প্রবীণের মন ও শরীর ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই পরিবারই হোক প্রবীণদের শান্তির নীড়।
লেখক ও সমাজকর্মী
চাঁদপুর সদর।