ঢাকা ০৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শব্দ দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করুন

আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগেও চাঁদপুর শহরের সড়কগুলোতে এত গাড়ি চলতো না। এত মানুষ এই শহরে আসতো না। যেটুকু ছিল তা একটা সহনশীল পর্যায়ে ছিল। সড়কে বেখেয়ালী মন নিয়ে হাটা যেত। ৩/৪জন পাশাপাশি কথা বলতে বলতে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নির্বিঘ্নে চলাফেরা করা যেত। কিন্তু এখন আমি একলা হাটলে গিয়েও বিপত্তির মধ্যে পরতে হচ্ছে। এত অটো গাড়ি, সিএনজি, মোটর সাইকেলের দৌরাত্ম যে, কখন পিছন দিয়ে এসে লাগিয়ে দেয় তার জন্য সর্বদা সতর্কও থাকতে হচ্ছে। তার উপর মোটর সাইকেলের সুউচ্চ হর্ণ পাগল করে দিচ্ছে আমাকে। আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি- দেখলাম শুধু আমিই নই, মোটর সাইকেলের উচ্চ হর্ণ সবাইকে জরাজীর্ণ করে দিচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে এখন এর ক্ষতিকর প্রভাব বুঝা না গেলেও কয়েক বছর পর বুঝা যাবে।

Model Hospital

শব্দ দূষণ মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করে। অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত শব্দ একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শব্দ দূষণ উদ্বেগ, বিরক্তি, উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া যেমন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে।

শব্দ দূষণ একজন মানুষের শরীরে এত খারাপ প্রভাব পরা সত্ত্বেও প্রতিকারে কোন ভূমিকা নেই। প্রতিকার কে করবে, নিশ্চয়ই আমি করবো না। যারা সড়কে চলাফেরা করে তারাও করবে না। কারন আমি যেমন একজন সাধারণ মানুষ। তেমনি সড়ক চলাচলকারী সবাই সাধারণ মানুষ। আমাদের কথা কেউ শুনবে না। শুনবে আইন শৃঙ্খল বাহিনী বা ম্যাজিস্ট্রেট বা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কথা। যারা চাইলে উদ্যোগ নিয়ে শব্দ দূষণ কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগজনকভাবে বলতে হচ্ছে- সংবাদ মাধ্যমগুলোতে, অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ সংক্রান্ত অনেক সংবাদ প্রকাশ পেলেও কর্তৃপক্ষের উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা নেই।

গবেষণায় দেখা গেছে- দূষণ-আক্রান্ত এলাকার মানুষ খিটখিটে হয়ে পড়ে; আচরণে অস্বাভাবিকতা এবং মানসিক অশান্তি; মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত এবং কাজের প্রতি অমনোযোগী করে তোলা; বয়স্ক মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে; এমনকি বধিরতা মতো ঘটনাও ঘটছে।

এছাড়া শব্দের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশেও শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এমনকি হজমের সমস্যাও হতে পারে।

রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ দিবস সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচার-প্রচারণায় মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে যত্রতত্র। মাইক ব্যবহারের একটা সীমা করে দেয়া উচিত। যেখানে-সেখানে, যখন খুশি তখন মাইকিং করা হচ্ছে। সব বয়সের মানুষের জন্য এটা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

এত্ত এত্ত সমস্যা নিয়ে আমরা এই সমাজে বাস করছি। অনেক পরিবেশবিদরা শব্দ দূষণকে ‘শব্দ সন্ত্রাস’ হিসেবে চিহিত করেছেন। শব্দ দূষণ কতটা ভয়াবহ হলে একে সন্ত্রাস হিসেবে পরিচিতি করে দেয়া হয়েছে। আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জনগণের শারীরিক-মানসিক নিয়ে আরো সচেতন হতে হবে।

বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে, শব্দ দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের এ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সচেতন সৃষ্টিতে সেমিনার করতে হবে। তারপরও কাজ না হলে আইনী প্রয়োগের মাধ্যমে দূষণ কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আহ্বান থাকলো- শব্দ দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

পরিচিতি :
মুহাম্মদ আউয়াল হোসাইন পাটোয়ারী
জোড় পুকুর পাড়, চাঁদপুর।
০১৮১৩ ০৩০৩০৯

ট্যাগস :

দৈনিক ‘বিজনেস আই পত্রিকার চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ পেলেন সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী

শব্দ দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করুন

আপডেট সময় : ০৮:১৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগেও চাঁদপুর শহরের সড়কগুলোতে এত গাড়ি চলতো না। এত মানুষ এই শহরে আসতো না। যেটুকু ছিল তা একটা সহনশীল পর্যায়ে ছিল। সড়কে বেখেয়ালী মন নিয়ে হাটা যেত। ৩/৪জন পাশাপাশি কথা বলতে বলতে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নির্বিঘ্নে চলাফেরা করা যেত। কিন্তু এখন আমি একলা হাটলে গিয়েও বিপত্তির মধ্যে পরতে হচ্ছে। এত অটো গাড়ি, সিএনজি, মোটর সাইকেলের দৌরাত্ম যে, কখন পিছন দিয়ে এসে লাগিয়ে দেয় তার জন্য সর্বদা সতর্কও থাকতে হচ্ছে। তার উপর মোটর সাইকেলের সুউচ্চ হর্ণ পাগল করে দিচ্ছে আমাকে। আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি- দেখলাম শুধু আমিই নই, মোটর সাইকেলের উচ্চ হর্ণ সবাইকে জরাজীর্ণ করে দিচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে এখন এর ক্ষতিকর প্রভাব বুঝা না গেলেও কয়েক বছর পর বুঝা যাবে।

Model Hospital

শব্দ দূষণ মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করে। অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত শব্দ একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শব্দ দূষণ উদ্বেগ, বিরক্তি, উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া যেমন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে।

শব্দ দূষণ একজন মানুষের শরীরে এত খারাপ প্রভাব পরা সত্ত্বেও প্রতিকারে কোন ভূমিকা নেই। প্রতিকার কে করবে, নিশ্চয়ই আমি করবো না। যারা সড়কে চলাফেরা করে তারাও করবে না। কারন আমি যেমন একজন সাধারণ মানুষ। তেমনি সড়ক চলাচলকারী সবাই সাধারণ মানুষ। আমাদের কথা কেউ শুনবে না। শুনবে আইন শৃঙ্খল বাহিনী বা ম্যাজিস্ট্রেট বা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কথা। যারা চাইলে উদ্যোগ নিয়ে শব্দ দূষণ কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগজনকভাবে বলতে হচ্ছে- সংবাদ মাধ্যমগুলোতে, অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ সংক্রান্ত অনেক সংবাদ প্রকাশ পেলেও কর্তৃপক্ষের উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা নেই।

গবেষণায় দেখা গেছে- দূষণ-আক্রান্ত এলাকার মানুষ খিটখিটে হয়ে পড়ে; আচরণে অস্বাভাবিকতা এবং মানসিক অশান্তি; মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত এবং কাজের প্রতি অমনোযোগী করে তোলা; বয়স্ক মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে; এমনকি বধিরতা মতো ঘটনাও ঘটছে।

এছাড়া শব্দের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশেও শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এমনকি হজমের সমস্যাও হতে পারে।

রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ দিবস সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচার-প্রচারণায় মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে যত্রতত্র। মাইক ব্যবহারের একটা সীমা করে দেয়া উচিত। যেখানে-সেখানে, যখন খুশি তখন মাইকিং করা হচ্ছে। সব বয়সের মানুষের জন্য এটা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

এত্ত এত্ত সমস্যা নিয়ে আমরা এই সমাজে বাস করছি। অনেক পরিবেশবিদরা শব্দ দূষণকে ‘শব্দ সন্ত্রাস’ হিসেবে চিহিত করেছেন। শব্দ দূষণ কতটা ভয়াবহ হলে একে সন্ত্রাস হিসেবে পরিচিতি করে দেয়া হয়েছে। আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জনগণের শারীরিক-মানসিক নিয়ে আরো সচেতন হতে হবে।

বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে, শব্দ দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের এ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সচেতন সৃষ্টিতে সেমিনার করতে হবে। তারপরও কাজ না হলে আইনী প্রয়োগের মাধ্যমে দূষণ কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আহ্বান থাকলো- শব্দ দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

পরিচিতি :
মুহাম্মদ আউয়াল হোসাইন পাটোয়ারী
জোড় পুকুর পাড়, চাঁদপুর।
০১৮১৩ ০৩০৩০৯