এস এম ইকাবল : বিজয়ের মাস ডিসেম্ভর এলেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাবার রেখে যাওয়া স্মৃতি মনে পড়ে। ওসমানী সনদ, অস্ত্র জমাদানের রশিদ, মুক্তিবার্তাসহ অন্যান্য প্রমাণপত্র থাকার পরও গেজেটে আমার বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হাসমত উল্যার নাম নেই । রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়ার জন্য নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার বাবার স্বীকৃতি চেয়ে ৫০ বছর বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ হয়েছি। ক্ষোভের সাথে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সামেন এ কথাগুলো বললেন মুক্তিযোদ্ধা হাসমত উল্লার ছেলে ফরিদগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ,তরুন সমাজ সেবক কামরুল হাসান সাউদ।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হাসমত উল্যার মতো এমন অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাই ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে যথাযথ কৃর্তপক্ষের নজরে না আসায়। ফলে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কামরুল হাসান সাউদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা হাসমত উল্লার পরিবারের মতো।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন লড়াকু সৈনিক ছিলেন হাসমত উল্লা। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের কৃতি সন্তান তিনি। পাকিস্তান আমলে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরী করতেন। হাসমত উল্যাহ এফ.এফ বাহিনীতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং স্বক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ২৬ মার্চের পর থেকেই তিনি দেশের জন্য সক্রিয় ভাবে যুদ্ধ করেন। ভারতের মেঘালয় থেকে এফএফ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদেন করেন। তিনি এস.এল. আর, এম.এম.জি ও গ্রেনেডের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। তিনি ২নং সেক্টরে মেজর হায়দারের নের্তৃত্বে যুদ্ধ করেন।
যুদ্ধ করার সকল তথ্য প্রমাণ রয়েছে হাসমত উল্যাহ সউদের। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক আতাউল গণী ওসমানী এবং আঞ্চলিক অধিনায়ক (২ নম্বর সেক্টর) কর্ণেল খালেদ মোশাররফ এর স্বাক্ষরযুক্ত দেশরক্ষা বিভাগ কর্তৃক স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র রয়েছে। এফ জোন (নোয়াখালী) কমান্ডার সামছুল হক কর্তৃক প্রত্যায়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডার কর্তৃক প্রত্যায়ন, ৮ আগস্ট ১৯৭৭ সালে ১নং সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যায়ন, ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ‘সিদ্ধিরগঞ্চ থানা কমান্ড’ কর্তৃক প্রত্যায়ন, ঢাকা সিটি কমান্ডার ‘গেরিলা বাহিনী’ কর্তৃক প্রত্যায়ন পত্র রয়েছে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর জাতীয় মহাসম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাসমত উল্যাকে। তিনি যে অস্ত্র জমা দিয়েছেন তার গ্রহণ কপিও রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি একটি এস.এল.আর (বাট নং ১২৮৯) জমা দেন। অস্ত্র জমাদানের রশিদ নং ১২৮৯। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় কার সাথে এবং কার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন; কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন তা গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডার কর্তৃক প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে। সাপ্তাহিক মুক্তিবার্তায়ও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে (নং ০২০৫০৫০৬১৮)।
এতো কিছু থাকার পরও কেন গেজেটে হাসমত উল্যার নাম নেই তা এক বিরাট প্রশ্নের জবাবে তরুণ সমাজ সেবক ও ফরিদগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান সউদ বলেন- রাষ্ট্রিয় সুবিধা নয়, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার আবেদন নিবেদন করেই যাবো। তিনি আরো বলেন,বঙ্গবন্ধুর দর্শন, আদর্শে আমি বিশ^াসী বলে কোনো কিছুতে আমার লোভ নেই। পাওয়ার জন্য নয়, শুধু দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। ।’