ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নানা সমস্যায় জর্জরিত অভিভাবকহীন শতবর্ষী মহামায়া বাজার : নেই কোন উন্নয়ন

মাসুদ হোসেন : চাঁদপুর সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র হচ্ছে মহামায়া বাজার। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের কোল ঘেঁষা এ বাজারটিতে দীর্ঘ এক যুগের মতো ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় বর্তমানে তা অভিভাবক শূন্য। প্রায় শতবর্ষী এ বাজারটির দিকে তাকালে মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করবে যেকারো। অথচ প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিলেও সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত ক্রেতা-বিক্রেতাসহ জনসাধারণ। চলতি বছরও এই বাজারটি ১৩ লক্ষ ৩১ হাজার পাঁচশ টাকা রাজস্ব পায় সরকার।
সরেজমিনে গিয়ে বাজারটি ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ বাজার ব্যবসায়ীদের মনগড়া সিদ্ধান্তে চলে ব্যবসা বাণিজ্য। যে যার মত করে মালামাল সাজিয়ে দখল করে নিয়েছে  বাজার গলিগুলো। রোগী নিয়ে একটি রিকশাও চলাচলের স্থান রাখেনি অনেক গলির পাশের ব্যবসায়ীরা। পথচারী কিংবা ক্রেতা সাধারণ হাটতে গিয়ে খেতে হয় ব্যবসায়ীদের সাজানো মালামালের ধাক্কা। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বাজারের ভিতর।
এছাড়াও বাজারের উপর চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে অস্থায়ী কাঁচা বাজার, হকার আর অটো স্ট্যান্ডের কারনে যানজট লেগে থাকে প্রতিনিয়ত। সেই সাথে বাজার ব্যবসায়ীদের বর্জ্য ফেলার জন্য নেই কোন ডাস্টবিন। এতে করে যে যার মত এদিক সেদিক ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছেন ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতাসহ বাজারে আগত জনসাধারণ। দম বন্ধ হয়ে আসে টয়লেটগুলোর দূর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশে। এতে যেতে চান না ব্যবসায়ী কিংবা জনসাধারণ। অস্থায়ী দুইজন নাইট গার্ড দিয়ে চলছে এত বড় বাজারের নিরাপত্তার কার্যক্রম। যা কোন অবস্থাতেই পর্যাপ্ত নয়। এতো বড় বাজারে প্রয়োজন অন্তত ৬জন নিরাপত্তা কর্মী। যার অভাবে প্রতি মাসে দুই চারটি চুরির ঘটনা ঘটছে এ বাজারটিতে। এই ভয়ে অনেক ব্যবসায়ীরা দোকানেই রাত্রী যাপন করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাজারে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, কোন দোকানে অগ্নিকান্ড ঘটলে বাজারের আশেপাশে কোন পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসেও বিপাকে পড়তে হবে। এতে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ঐ ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদেরকে।
নিয়ন্ত্রণহীন এই বাজার ব্যবসীরা তাদের মনগড়া দামে বিক্রি করছেন পণ্যসামগ্রী। সাধারণ ক্রেতারা দীর্ঘ দিন অভিযোগ করছে পণ্য ভিত্তিক সিন্ডিকেট নিয়ে। এদিকে নির্দিষ্ট কোন পরিচালনা কমিটি না থাকায় ব্যবসায়ীরাও তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারছেন না কারো কাছে। অস্থায়ী দু চারজন ব্যবসীদের দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন বাজারের আয় ব্যায় হিসাব। অথচ চার উপজেলার পার্শ্ববর্তী একটি ব্যস্ততম ব্যবসা কেন্দ্র এটি। চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানুষের জনসমাগম ঘটে এ বাজারটিতে। উৎপাদন কারখানা, আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই এলাকায় থাকায় এই বাজারের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও এই বাজারের চতুর্দিকে রয়েছে মাদ্রাসা, ব্যাংক-বীমা,এনজিও সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সকল প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে এই এলাকায় ঘনবসতি দিন দিন বেড়েই চলছে। তাদের কেনা কাটার নির্ভরযোগ্য বাজার হচ্ছে মহামায়া।
এ বাজারে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে বাজার করতে আসে শত শত মানুষ। বাজারটি আশেপাশের মধ্যে সবচেয়ে বড় হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগমও ঘটে ব্যাপক। কিন্তু সবচেয়ে সমস্যার বিষয় হচ্ছে, মহামায়া বাজারে নেই কোন শৃঙ্খলা, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রিক। তাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও বাজারের নিত্যদিনের সমস্যাগুলি সমাধান হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারটি সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ভিতর হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী বলেন, বাজারের অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা কয়েকবার বসেছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে। তবে সহসাই তা সমাধান করণে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে কাজ করছি।
এর আগে গত দুই মাস আগে চাঁদপুর সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিঃ দাঃ) ফাহমিদা হক বলেন, বাজারের দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীদের লিখিত অভিযোগ কিংবা সমস্যার কথা জানালে উপজেলা প্রশাসন তা ব্যবস্থা নিবে।
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মানবকন্ঠের মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধি মোজাম্মেল প্রধান হাসিব

নানা সমস্যায় জর্জরিত অভিভাবকহীন শতবর্ষী মহামায়া বাজার : নেই কোন উন্নয়ন

আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২
মাসুদ হোসেন : চাঁদপুর সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র হচ্ছে মহামায়া বাজার। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের কোল ঘেঁষা এ বাজারটিতে দীর্ঘ এক যুগের মতো ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় বর্তমানে তা অভিভাবক শূন্য। প্রায় শতবর্ষী এ বাজারটির দিকে তাকালে মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করবে যেকারো। অথচ প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিলেও সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত ক্রেতা-বিক্রেতাসহ জনসাধারণ। চলতি বছরও এই বাজারটি ১৩ লক্ষ ৩১ হাজার পাঁচশ টাকা রাজস্ব পায় সরকার।
সরেজমিনে গিয়ে বাজারটি ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ বাজার ব্যবসায়ীদের মনগড়া সিদ্ধান্তে চলে ব্যবসা বাণিজ্য। যে যার মত করে মালামাল সাজিয়ে দখল করে নিয়েছে  বাজার গলিগুলো। রোগী নিয়ে একটি রিকশাও চলাচলের স্থান রাখেনি অনেক গলির পাশের ব্যবসায়ীরা। পথচারী কিংবা ক্রেতা সাধারণ হাটতে গিয়ে খেতে হয় ব্যবসায়ীদের সাজানো মালামালের ধাক্কা। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বাজারের ভিতর।
এছাড়াও বাজারের উপর চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে অস্থায়ী কাঁচা বাজার, হকার আর অটো স্ট্যান্ডের কারনে যানজট লেগে থাকে প্রতিনিয়ত। সেই সাথে বাজার ব্যবসায়ীদের বর্জ্য ফেলার জন্য নেই কোন ডাস্টবিন। এতে করে যে যার মত এদিক সেদিক ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছেন ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতাসহ বাজারে আগত জনসাধারণ। দম বন্ধ হয়ে আসে টয়লেটগুলোর দূর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশে। এতে যেতে চান না ব্যবসায়ী কিংবা জনসাধারণ। অস্থায়ী দুইজন নাইট গার্ড দিয়ে চলছে এত বড় বাজারের নিরাপত্তার কার্যক্রম। যা কোন অবস্থাতেই পর্যাপ্ত নয়। এতো বড় বাজারে প্রয়োজন অন্তত ৬জন নিরাপত্তা কর্মী। যার অভাবে প্রতি মাসে দুই চারটি চুরির ঘটনা ঘটছে এ বাজারটিতে। এই ভয়ে অনেক ব্যবসায়ীরা দোকানেই রাত্রী যাপন করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাজারে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, কোন দোকানে অগ্নিকান্ড ঘটলে বাজারের আশেপাশে কোন পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসেও বিপাকে পড়তে হবে। এতে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ঐ ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদেরকে।
নিয়ন্ত্রণহীন এই বাজার ব্যবসীরা তাদের মনগড়া দামে বিক্রি করছেন পণ্যসামগ্রী। সাধারণ ক্রেতারা দীর্ঘ দিন অভিযোগ করছে পণ্য ভিত্তিক সিন্ডিকেট নিয়ে। এদিকে নির্দিষ্ট কোন পরিচালনা কমিটি না থাকায় ব্যবসায়ীরাও তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারছেন না কারো কাছে। অস্থায়ী দু চারজন ব্যবসীদের দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন বাজারের আয় ব্যায় হিসাব। অথচ চার উপজেলার পার্শ্ববর্তী একটি ব্যস্ততম ব্যবসা কেন্দ্র এটি। চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানুষের জনসমাগম ঘটে এ বাজারটিতে। উৎপাদন কারখানা, আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই এলাকায় থাকায় এই বাজারের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও এই বাজারের চতুর্দিকে রয়েছে মাদ্রাসা, ব্যাংক-বীমা,এনজিও সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সকল প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে এই এলাকায় ঘনবসতি দিন দিন বেড়েই চলছে। তাদের কেনা কাটার নির্ভরযোগ্য বাজার হচ্ছে মহামায়া।
এ বাজারে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে বাজার করতে আসে শত শত মানুষ। বাজারটি আশেপাশের মধ্যে সবচেয়ে বড় হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগমও ঘটে ব্যাপক। কিন্তু সবচেয়ে সমস্যার বিষয় হচ্ছে, মহামায়া বাজারে নেই কোন শৃঙ্খলা, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রিক। তাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও বাজারের নিত্যদিনের সমস্যাগুলি সমাধান হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারটি সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ভিতর হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী বলেন, বাজারের অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা কয়েকবার বসেছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে। তবে সহসাই তা সমাধান করণে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে কাজ করছি।
এর আগে গত দুই মাস আগে চাঁদপুর সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিঃ দাঃ) ফাহমিদা হক বলেন, বাজারের দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীদের লিখিত অভিযোগ কিংবা সমস্যার কথা জানালে উপজেলা প্রশাসন তা ব্যবস্থা নিবে।