গণমাধ্যমকে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়, কারণ এটি রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে পারে, এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গণমাধ্যম কি আসলেই স্বাধীন? ইতিহাস বলছে, গণমাধ্যম কখনোই পুরোপুরি স্বাধীন ছিল না, আর বর্তমানেও নেই। এটি মূলত রাজনৈতিক, কর্পোরেট ও নানান ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর প্রভাবের মধ্যে আবদ্ধ এক ব্যবস্থা।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বাস্তবতা
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে রাষ্ট্র ও ক্ষমতার কাঠামোর ভূমিকা। বহু দেশে সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা অনলাইন মিডিয়া সরকার ও কর্পোরেট স্বাথের্র সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। ফলে, সত্য প্রচারের চেয়ে নিয়ন্ত্রিত তথ্য পরিবেশনই হয়ে ওঠে গণমাধ্যমের মূল প্রবণতা।
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ: সরকার বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করে, প্রতিকূল মতাদর্শকে দমন করে এবং গণমাধ্যমকে নিজেদের প্রচারণার হাতিয়ারে পরিণত করে।

বাণিজ্যিক স্বার্থ: কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে সাংবাদিকতা অনেক সময় সত্যের চেয়ে আর্থিক লাভের দিকে বেশি মনোযোগী হয়।
রাজনৈতিক চাটুকারিতা: কিছু গণমাধ্যম ও সাংবাদিক নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন, যার ফলে তারা নিরপেক্ষতা হারান এবং প্রোপাগান্ডার অংশ হয়ে যান।
আসল বাস্তবতা:
গণমাধ্যমকর্মীদের অবস্থান ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন হয়। কেউ নিরপেক্ষ থেকে সত্য উদ্ঘাটনে কাজ করেন, কেউ রাজনৈতিক বা কর্পোরেট স্বাথের কাছে নতি স্বীকার করেন, আবার কেউ ক্ষমতার দালাল হয়ে ওঠেন।
১) অসহায় সাংবাদিক: স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে তারা চাপের মুখে পড়েন, চাকরি হারান, এমনকি জীবন বিপন্ন হয়। বিশেষ করে যারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যুক্ত, তাদের জন্য এই পেশা ঝুঁকিপূর্ণ।
২) চাটুকার সাংবাদিক: সুবিধাভোগী শ্রেণির কাছাকাছি থাকতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কথা বলে, তাদের ভুলকে ঢেকে রাখে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে।
৩) ডেভিল সাংবাদিক: কিছু গণমাধ্যমকর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া খবর ছড়ান, ঘৃণা ও বিভেদ উসকে দেন এবং নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিথ্যাচার করেন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসলে একটি আদর্শ, যা বাস্তবে খুব কম ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রবাহ যত বাড়ছে, ততই গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হচ্ছে। ফলে, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা এবং সাংবাদিকদের নৈতিকতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রয়োজন এমন একটি গণমাধ্যম ব্যবস্থা, যেখানে সত্যের জয় হবে, চাপের কাছে মাথা নোয়ানোর সংস্কৃতি থাকবে না, এবং সাংবাদিকরা জনগণের স্বার্থকে সবার ওপরে রাখবেন।
লেখকঃ গণমাধ্যম, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক কর্মী
Foyez.news@gmail.com