ঢাকা ১০:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিরাপদ ফুটপাত হোক পথচারীদের একমাত্র ভরসা

খোলামেলা ফুটপাত শহরের সৌন্দর্য বাড়ায়। চলাচল করতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন পথচারীরা। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটা ও চলাচলের উপযুক্ত স্থান এই ফুটপাতের ফলে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। কিন্তু এই ফুটপাত কি আসলেই পথচারীদের জন্য? ফুটপাতের বর্তমান চিত্র হচ্ছে, ফুটপাত থাকলেও মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, এটা চরম বিশৃঙ্খলা এবং সময়ের বিশাল অপচয় হচ্ছে। যার ফলে মানুষের জন্য শহর/নগর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। দেশের জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট।
কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়কের ওপর বসে গেছে পণ্যের পসরা। অবৈধভাবে ফুটপাত দখলে থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। প্রায়ই ফুটপাতের পাশের স্থায়ী ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের সামনের ফুটপাতেও পণ্যের পসরা। পথচারীদের নাগরিক অধিকার ফুটপাতে হাঁটাও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। অনেক ক্ষেত্রে পথচারীদের বাধ্য হয়ে হাঁটতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। যার ফলে অনেক সময় ঘটে যায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
সাধারণ মানুষ কেন ফুটপাত ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরের অধিকাংশ ফুটপাতই এখন আর হাটার পরিবেশ নেই। পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারা দেওয়ার বিনিময়ে ফুটপাত এখন হকারদের দখলে। যেসকল স্থানের ফুটপাতে মানুষের আনাগোনা বেশী, সেখানে ফুটপাতের ওপর বিভিন্ন প্রকার জুতা-সেন্ডেল, কাপড়-চোপড়, ফল-মুল, চা-নাস্তার দোকান। আবার কোন কোন জায়গায় ফুটপাতের ওপর ভ্যান-ঠেলাগাড়ী বা রিকশা বা মটরসাইকেল পার্কিং করে রাখা হয়। আবার কোথাও ভবন নির্মাণের জন্য ইট-বালু-সুরকীর বিশাল স্তুপ করে রাখা হয়। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, বিভিন্ন ফুটওভারব্রিজ আছে, সেখানে ফুটপাতের ওপর ওভারব্রিজের সিড়ি। তার মানে, কোন পথচারী ফুটপাত ব্যবহার করতে পারবে না রাস্তায় নেমে যাওয়া ছাড়া। আবার অনেক জায়গায় ফুটপাতের ওপর বা পাশ ঘেষে এমনভাবে সিটি করপোরেশনের ময়লা আবর্জনার স্তুপ এমনভাবে রাখা হয়, তাতে আর কেউ স্বাভাবিকভাবে আর ফুটপাত দিয়ে হাটা-চলা করতে পারে না। এসব জায়গাতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় হাটতে হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কম পুঁজির কিছু মানুষ এই ফুটপাতের হাঁটার জায়গায় দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ইচ্ছেমতো যে যার মতো করে বিভিন্ন পণ্যের দোকানপাট বসিয়ে জনগণের চলাচলে সমস্যা তো করছেই তার সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল যানজটের। আর দখলদারদের এই দখলে স্থানীয় রাজনৈতিক, প্রভাবশালীদের হাত থাকায় সহজেই কেউ কিছু বলতে পারছে না। অনেক সময় প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির আইন প্রয়োগে অনীহা ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্থায়ীভাবে ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞ মহলের ধারণা।
আবার অনেক স্থানে পথচারীদের চলাচলের এই ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং করেও চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করছে কিছু অসাধু চালকরা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঐসব ফুটপাতেই গড়ে তুলছেন সিএনজি কিংবা অটো স্ট্যান্ড। প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালীদের খপ্পরে এখন প্রায় বেদখল জেলা উপজেলা শহরের ফুটপাতগুলো। সেই সাথে মেইন রোডে ট্রাফিক জ্যাম থাকলে অনেক মোটরবাইকচালক মোটরসাইকেলটি ফুটপাতে উঠিয়ে দিচ্ছেন নির্দ্বিধায়।
অনেক সময় এই দৃশ্যটি দেখা যায়, এটা যেন সাধারণ ব্যাপার। তারা একবারও ভেবে দেখেন না, এরকম পরিস্থিতিতে অন্যদিক থেকে হেঁটে আসা মানুষ কী রকম অবস্থায় পড়তে পারে। তা ছাড়া স্কুলে যাওয়া ছোট ছোট শিশুর হাঁটাও ঝুঁকিপূর্ণ। যানজট থেকে রেহাই পেতে অফিসগামী চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করেও এই ফুটপাত বন্ধ করে রাখায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বেদখল হওয়া পথে পথচারীরা ফুটপাত সহজভাবে ব্যবহার করতে না পেরে অস্বস্তিতে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। ফুটপাত যেহেতু হেঁটে চলাচলের জন্যই তাহলে শুধু পথচারীরাই ব্যবহার করবে, আর এটা তাদের নাগরিক অধিকার এই মানসিকতা গড়ে তোলাও জরুরি।
পুলিশ প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে বেশি কাজে আসতে পারে। অনিয়ম-দুর্নীতি মুক্ত সড়ক ব্যবস্থাপনা ও হকারদের আলাদা জায়গায় স্থানান্তর পথচারীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।
লেখক ও সাংবাদিক
চাঁদপুর সদর
ট্যাগস :

কচুয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়েজ আহম্মেদ স্বপনের গণসংযোগ

নিরাপদ ফুটপাত হোক পথচারীদের একমাত্র ভরসা

আপডেট সময় : ১০:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০২৩
খোলামেলা ফুটপাত শহরের সৌন্দর্য বাড়ায়। চলাচল করতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন পথচারীরা। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটা ও চলাচলের উপযুক্ত স্থান এই ফুটপাতের ফলে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। কিন্তু এই ফুটপাত কি আসলেই পথচারীদের জন্য? ফুটপাতের বর্তমান চিত্র হচ্ছে, ফুটপাত থাকলেও মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, এটা চরম বিশৃঙ্খলা এবং সময়ের বিশাল অপচয় হচ্ছে। যার ফলে মানুষের জন্য শহর/নগর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। দেশের জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট।
কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়কের ওপর বসে গেছে পণ্যের পসরা। অবৈধভাবে ফুটপাত দখলে থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। প্রায়ই ফুটপাতের পাশের স্থায়ী ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের সামনের ফুটপাতেও পণ্যের পসরা। পথচারীদের নাগরিক অধিকার ফুটপাতে হাঁটাও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। অনেক ক্ষেত্রে পথচারীদের বাধ্য হয়ে হাঁটতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। যার ফলে অনেক সময় ঘটে যায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
সাধারণ মানুষ কেন ফুটপাত ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরের অধিকাংশ ফুটপাতই এখন আর হাটার পরিবেশ নেই। পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারা দেওয়ার বিনিময়ে ফুটপাত এখন হকারদের দখলে। যেসকল স্থানের ফুটপাতে মানুষের আনাগোনা বেশী, সেখানে ফুটপাতের ওপর বিভিন্ন প্রকার জুতা-সেন্ডেল, কাপড়-চোপড়, ফল-মুল, চা-নাস্তার দোকান। আবার কোন কোন জায়গায় ফুটপাতের ওপর ভ্যান-ঠেলাগাড়ী বা রিকশা বা মটরসাইকেল পার্কিং করে রাখা হয়। আবার কোথাও ভবন নির্মাণের জন্য ইট-বালু-সুরকীর বিশাল স্তুপ করে রাখা হয়। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, বিভিন্ন ফুটওভারব্রিজ আছে, সেখানে ফুটপাতের ওপর ওভারব্রিজের সিড়ি। তার মানে, কোন পথচারী ফুটপাত ব্যবহার করতে পারবে না রাস্তায় নেমে যাওয়া ছাড়া। আবার অনেক জায়গায় ফুটপাতের ওপর বা পাশ ঘেষে এমনভাবে সিটি করপোরেশনের ময়লা আবর্জনার স্তুপ এমনভাবে রাখা হয়, তাতে আর কেউ স্বাভাবিকভাবে আর ফুটপাত দিয়ে হাটা-চলা করতে পারে না। এসব জায়গাতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় হাটতে হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কম পুঁজির কিছু মানুষ এই ফুটপাতের হাঁটার জায়গায় দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ইচ্ছেমতো যে যার মতো করে বিভিন্ন পণ্যের দোকানপাট বসিয়ে জনগণের চলাচলে সমস্যা তো করছেই তার সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল যানজটের। আর দখলদারদের এই দখলে স্থানীয় রাজনৈতিক, প্রভাবশালীদের হাত থাকায় সহজেই কেউ কিছু বলতে পারছে না। অনেক সময় প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির আইন প্রয়োগে অনীহা ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্থায়ীভাবে ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞ মহলের ধারণা।
আবার অনেক স্থানে পথচারীদের চলাচলের এই ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং করেও চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করছে কিছু অসাধু চালকরা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঐসব ফুটপাতেই গড়ে তুলছেন সিএনজি কিংবা অটো স্ট্যান্ড। প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালীদের খপ্পরে এখন প্রায় বেদখল জেলা উপজেলা শহরের ফুটপাতগুলো। সেই সাথে মেইন রোডে ট্রাফিক জ্যাম থাকলে অনেক মোটরবাইকচালক মোটরসাইকেলটি ফুটপাতে উঠিয়ে দিচ্ছেন নির্দ্বিধায়।
অনেক সময় এই দৃশ্যটি দেখা যায়, এটা যেন সাধারণ ব্যাপার। তারা একবারও ভেবে দেখেন না, এরকম পরিস্থিতিতে অন্যদিক থেকে হেঁটে আসা মানুষ কী রকম অবস্থায় পড়তে পারে। তা ছাড়া স্কুলে যাওয়া ছোট ছোট শিশুর হাঁটাও ঝুঁকিপূর্ণ। যানজট থেকে রেহাই পেতে অফিসগামী চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করেও এই ফুটপাত বন্ধ করে রাখায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বেদখল হওয়া পথে পথচারীরা ফুটপাত সহজভাবে ব্যবহার করতে না পেরে অস্বস্তিতে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। ফুটপাত যেহেতু হেঁটে চলাচলের জন্যই তাহলে শুধু পথচারীরাই ব্যবহার করবে, আর এটা তাদের নাগরিক অধিকার এই মানসিকতা গড়ে তোলাও জরুরি।
পুলিশ প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে বেশি কাজে আসতে পারে। অনিয়ম-দুর্নীতি মুক্ত সড়ক ব্যবস্থাপনা ও হকারদের আলাদা জায়গায় স্থানান্তর পথচারীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।
লেখক ও সাংবাদিক
চাঁদপুর সদর