পোড়ানো হয়নি একটি নথিও, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাছিনা আক্তারের কাছেই আছে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করা সকল নথিপত্র ।। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা, অফিস সহকারী সুমন পাল ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হাছিনা’র যোগসাজশে নথি পোড়ানো নাটকের মঞ্চায়ন ।। পোঁড়ানো হয়েছে বলে নথি পত্র লুকিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই কি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার এমন প্রচেষ্টা!!
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারী) ফরিদগঞ্জ আবিদুর রেজা পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা ভেঙ্গে র্দুবৃত্তদের বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি ও ক্রেস্ট আগুণে পোড়ানোর দাবি করেন বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাছিনা আক্তার।
এ ঘটনার ওই দিন রাতে ক্রেস্ট, ছবি ও অজ্ঞাত জিনিসপত্র চুরির কথা উল্লেখ করে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনার দিন বিকেলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাবেক প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের কক্ষে থাকা বিদ্যালয়ের সম্পত্তির দলিল ও শিক্ষকদের জরুরী কাগজ পত্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ নথি ওই রুমে নেই বলে দাবি করেন।
সেদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দেওয়া তথ্যানুযায়ী স্থানীয় গনমাধ্যম সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় ঢালাও ভাবে ক্রেস্ট ও নথি পোঁড়ানোর বিষয় উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ঘটনার দিন রাতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যে ভিডিওটিতে স্পস্ট দেখা যায় কোন নথি নয়, বরং পোড়ানো হয়েছে টোটাল গ্যাসের কিছু লিপলেট, ক্রেস্ট ও আওয়ামী লীগের দলীয় কয়েকটি স্মরণিকা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারী) ঘটনায় সত্যি কি স্কুলের নথি পোড়ানো হয়েছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে সর্বমহলে। সন্দেহের বাসা বাঁধে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মনে। সত্যি’ই কি ঘটেছিলো সেদিন? প্রকৃত ঘটনা কি? তা বের করতে শুরু হয় অনুসন্ধান। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারী) থেকে রবিবার (২৬ জানুয়ারী) পর্যন্ত টানা তিন দিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নথি কান্ডের প্রকৃত ঘটনা।
ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক সুস্পষ্ট ভাবে সন্দেহের তীর ছুড়েন অফিস সহকারী সুমন পালের দিকে। অফিস সহকারী সুমন পাল এক পর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে শিকার করেন সাবেক প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে সমস্ত নথি তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার কাছে দিয়েছেন। অথচ তার বিপরীতে ঘটনার দিন বিকেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নথি নেই বলে মিথ্যাচার করেন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে।
সেদিনের নথি পোড়ানোর বিষয় দাবি করা ছিলো পরিকল্পিত নাটকের মঞ্চায়ন। গণমাধ্যম কর্মীরা তা নিশ্চিত হওয়ার পর রবিবার (২৬ জানুয়ারী) ফের সকল তথ্য প্রমান সহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার মুখোমুখি হয়। নথি চক্রান্তের সকল তথ্য বেরিয়ে এসেছে এমনটি আছ করতে পেরে ঘটনার দিন বিকেলে দেওয়া তার বক্তব্য থেকে ১৮০ ডিগ্রী টার্ন নিয়ে তিনি নতুন সুরে বলেন, বিদ্যালয়ের দলিল সহ শিক্ষকদের সমস্ত নথিপত্র তার কাছেই আছে। কোথায় পেলেন সেগুলো তা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যে তিনি প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে ডুকে জমির দলিল নিয়েছেন।
বাকি নথি কোথায় ফেলেন? ফের তা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, অফিস সহকারী সুমন পাল কতগুলো কাগজপত্র আমার কাছে দিয়েছে। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী কাগজ পত্র পেয়েছেন ২৩ জানুয়ারী রাতে। তবে বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিংবা আপনার করা থানায় অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তা কেন জানাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বহুবার ইউএনও স্যারকে কল দিয়েছি, জানানোর চেষ্টা করেছি।
কিন্তু শুক্র ও শনিবার অফ ডে থাকায় জানাতে পারি নি। আজ তো রবিবার ওপেন ডে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হল, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল তাও কেন বিদ্যালয়ের সভাপতি কে জানাননি? এমন প্রশ্নের কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি। প্রকৃত বাস্তবতা হলো বর্তমান ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া চলমান তারুণ্য উৎসবকে সফল করতে সপ্তাহের নির্ধারিত পাঁচ দিনের কর্মঘন্টার পাশাপাশি শুক্রবার ও শনিবার দিনে ও রাত ১০টা বা তার বেশি সময় ধরেও তার দপ্তরে কাজ করেন। তার বিপরীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের এমন বক্তব্য নেহাত হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়।
নথি কান্ডের ঘটনার দিন অফিস সহকারী সুমন পালের সহযোগী ছিলেন বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী হাসিনা। যে কারণে ঘটনার দিন চতুর্থ শ্রেণী ওই কর্মচারী হাসিনাকে প্রশ্ন করলে তিনি এলোমেলো কথা বলেন। কখনো বলেন প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নেয়া হয়েছে আবার কখনো বলেন কুরআন শরীফ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সহ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারির দিকে বিশেষ নজর রাখে সাংবাদিকরা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ২৩ জানুয়ারীর ঘটনার পর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাছিনা আক্তার দপায় দপায় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হাসিনার সাথে কথা বলেছেন বারংবার।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণীর অন্যান্য একাধিক কর্মচারী থাকলেও শুধু হাসিনাকেই ভিন্ন সময়ে পরীক্ষার হলে কাগজ সরবরাহের ডিউটি দেওয়া সহ নানামূখী সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তাকে। যে কারনে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা যা বলেন তিনি তাই করেন।
ঘটনার দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের সভাপতি সুলতানা রাজিয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা থানায় জিডি করেছেন এবং এই বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী এ ঘটনায় সত্যি কি তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে? এবিষয়ে শঙ্কায় অভিভাবক মহল ও স্থানীয়রা। কারণ এর পূর্বেও নিলাম ছাড়াই বিদ্যালয়ের পুরাতন মালামাল বিক্রির ঘটনার তদন্তে রিপোর্টে নিয়ম না মেনে মালামাল বিক্রি বিষয়টি প্রমাণিত হলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজেকে ভিকটিম দাবি করে বিদ্যালয়ের অপর এক সিনিয়র শিক্ষককে শোকজ করার মত দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত এই প্রধান শিক্ষিকা হাছিনা আক্তার। ৫ ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ের নানান ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারবার স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপির নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা আক্তার।