ঢাকা ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফটোসেশনে সীমাবদ্ধ : সেচের অভাবে মাস পেরোলেও রোপণ হয়নি বোরোর চারা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি সেচ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার কালীপুর ও উদামদী পাম্প চালু করা হয়। তবে ফটোসেশন শেষে পাম্পের সুইচ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেচ উদ্বোধন হলেও কৃষক পানি পাবেন আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে।

সোমবার বেলা ১১টায় মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কালীপুর পাম্প হাউজে সেচ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মেঘনা ধনাগোদা পওর বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. সালাউদ্দিন। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ শাহীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাফরিল চৌধুরী, ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী খোকা চৌধুরী, মেঘনা ধনাগোদা পওর বিভাগ শাখা কর্মকর্তা ঋষি ভৌমিক, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সিয়াম আলী, সম্প্রসারণ উপদর্শক মো. জহিরুল হক চৌধুরী, মো. মোসলেহ উদ্দিন সরকার, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আল মামুন, উপজেলা যুবদলের সদস্য ফয়েজ মেম্বারসহ বিভিন্ন গ্রুপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।

সেচ প্রকল্পের উদামদী পাম্প হাউজেও একই সময়ে পানি উদ্বোধন করা হয়। তবে উদামদী পাম্প হাউজে পানি উদ্বোধন করার পর ১০ মিনিট চললেও কালীপুর পাম্প হাউজে উদ্বোধনের ১৩ সেকেন্ড পরই সুইচ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে কৃষকরা আরও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

Model Hospital

জানা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। উপজেলার ১৭ হাজার ৫৮৪ হেক্টর জমিতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে এ প্রকল্প নির্মাণ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে। সেচ সুবিধার মাধ্যমে বোরো ধান উৎপাদনই ছিল মূল লক্ষ্য। কিন্তু বোরো মৌসুমের শুরুতে কখনও সেচ সুবিধা পাননি কৃষকরা। ফলে সেচ প্রকল্প নির্মাণের পর অধিকাংশ মৌসুমে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বীজতলা করার উপযুক্ত সময়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে হয়। চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হবে। ৪০ দিনের বেশি হলে উৎপাদন কমতে থাকবে।

সেই হিসাবে ১৫ নভেম্বর থেকে বীজতলা করা হলে চারার বয়স ৪০ দিন হয় ২৫ ডিসেম্বর। কিন্তু তারও প্রায় এক মাস হতে চললেও সেচের অভাবে এখনও চারা রোপণ করতে পারেননি কৃষকরা।

আরও জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমি। কৃষকরা এ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বীজতলা তৈরি করলেও সেচ পাননি। এরইমধ্যে চারার বয়স বেড়ে চলেছে। অনেকের চারার বয়স ৬০ দিন পার হয়ে গেছে। সঠিক সময়ে পানি না দেওয়ায় বোরো উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় এখনও ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। অনেক জায়গায় ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ চলছে। সেচ প্রকল্প এলাকার আমিয়াপুর, দেওয়ানজীকান্দিসহ কয়েকটি জায়গায় সেচ ক্যানেলে বাঁধ দিয়ে চলছে কালভার্ট নির্মাণের কাজ।

কৃষক খোকন সরকার ও আতাউর রহমান বলেন, পানি কবে দেবে তা আমরা জানি না। আমাদের বীজতলার ধানের চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে ধান রোপণ করতে না পারলে ভালো ফসল উৎপাদন হবে না। আমরা লোকসানে পড়ে যাবো। পানির জন্য আমরা জমিতে ধান লাগাতে পারছি না।

তারা আরও জানান, বিকল্প পদ্ধতি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাম্পের মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়ে চারা রোপণে অনেক খরচ হয়। এছাড়া খাল ও বিলের পানিও শুকিয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, সঠিক সময়ে সেচ ক্যানেলে পানি দিতে না পারলে বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সভাপতি ফয়েজ আহমেদ শাহীন চৌধুরী বলেন, কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে পানি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে সেচ কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে, আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে পানি ছাড়া হবে।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের উপ-বিভাগীয় নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, আমরা সেচ উদ্বোধন করেছি। সেচ ক্যানেলের কোথাও সমস্যা আছে কি না তা দেখে ও আবাদের অবস্থা দেখে অতি তাড়াতাড়ি পূর্ণভাবে পানি দেওয়া হবে।

ট্যাগস :

পথচারীর অন্ডকোষ নিয়ে গেলো শিয়াল

ফটোসেশনে সীমাবদ্ধ : সেচের অভাবে মাস পেরোলেও রোপণ হয়নি বোরোর চারা

আপডেট সময় : ০৮:১৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি সেচ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার কালীপুর ও উদামদী পাম্প চালু করা হয়। তবে ফটোসেশন শেষে পাম্পের সুইচ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেচ উদ্বোধন হলেও কৃষক পানি পাবেন আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে।

সোমবার বেলা ১১টায় মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কালীপুর পাম্প হাউজে সেচ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মেঘনা ধনাগোদা পওর বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. সালাউদ্দিন। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ শাহীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাফরিল চৌধুরী, ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী খোকা চৌধুরী, মেঘনা ধনাগোদা পওর বিভাগ শাখা কর্মকর্তা ঋষি ভৌমিক, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সিয়াম আলী, সম্প্রসারণ উপদর্শক মো. জহিরুল হক চৌধুরী, মো. মোসলেহ উদ্দিন সরকার, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আল মামুন, উপজেলা যুবদলের সদস্য ফয়েজ মেম্বারসহ বিভিন্ন গ্রুপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।

সেচ প্রকল্পের উদামদী পাম্প হাউজেও একই সময়ে পানি উদ্বোধন করা হয়। তবে উদামদী পাম্প হাউজে পানি উদ্বোধন করার পর ১০ মিনিট চললেও কালীপুর পাম্প হাউজে উদ্বোধনের ১৩ সেকেন্ড পরই সুইচ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে কৃষকরা আরও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

Model Hospital

জানা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। উপজেলার ১৭ হাজার ৫৮৪ হেক্টর জমিতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে এ প্রকল্প নির্মাণ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে। সেচ সুবিধার মাধ্যমে বোরো ধান উৎপাদনই ছিল মূল লক্ষ্য। কিন্তু বোরো মৌসুমের শুরুতে কখনও সেচ সুবিধা পাননি কৃষকরা। ফলে সেচ প্রকল্প নির্মাণের পর অধিকাংশ মৌসুমে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বীজতলা করার উপযুক্ত সময়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে হয়। চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হবে। ৪০ দিনের বেশি হলে উৎপাদন কমতে থাকবে।

সেই হিসাবে ১৫ নভেম্বর থেকে বীজতলা করা হলে চারার বয়স ৪০ দিন হয় ২৫ ডিসেম্বর। কিন্তু তারও প্রায় এক মাস হতে চললেও সেচের অভাবে এখনও চারা রোপণ করতে পারেননি কৃষকরা।

আরও জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমি। কৃষকরা এ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বীজতলা তৈরি করলেও সেচ পাননি। এরইমধ্যে চারার বয়স বেড়ে চলেছে। অনেকের চারার বয়স ৬০ দিন পার হয়ে গেছে। সঠিক সময়ে পানি না দেওয়ায় বোরো উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় এখনও ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। অনেক জায়গায় ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ চলছে। সেচ প্রকল্প এলাকার আমিয়াপুর, দেওয়ানজীকান্দিসহ কয়েকটি জায়গায় সেচ ক্যানেলে বাঁধ দিয়ে চলছে কালভার্ট নির্মাণের কাজ।

কৃষক খোকন সরকার ও আতাউর রহমান বলেন, পানি কবে দেবে তা আমরা জানি না। আমাদের বীজতলার ধানের চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে ধান রোপণ করতে না পারলে ভালো ফসল উৎপাদন হবে না। আমরা লোকসানে পড়ে যাবো। পানির জন্য আমরা জমিতে ধান লাগাতে পারছি না।

তারা আরও জানান, বিকল্প পদ্ধতি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাম্পের মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়ে চারা রোপণে অনেক খরচ হয়। এছাড়া খাল ও বিলের পানিও শুকিয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, সঠিক সময়ে সেচ ক্যানেলে পানি দিতে না পারলে বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সভাপতি ফয়েজ আহমেদ শাহীন চৌধুরী বলেন, কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে পানি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে সেচ কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে, আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে পানি ছাড়া হবে।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের উপ-বিভাগীয় নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, আমরা সেচ উদ্বোধন করেছি। সেচ ক্যানেলের কোথাও সমস্যা আছে কি না তা দেখে ও আবাদের অবস্থা দেখে অতি তাড়াতাড়ি পূর্ণভাবে পানি দেওয়া হবে।