অশ্রুশিক্ত নয়নে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শনিবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে দশমী বিহিত পূজার লগ্ন শুরু হয়। পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
রবিবার উপজেলার ৩৯টি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। চণ্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্যদিয়ে বুধবার থেকে শুরু হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছেন দোলায় বা পালকিতে চড়ে, আর মর্ত্যলোক ছেড়ে যাবেন ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে। এর মধ্যদিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরেন।
নবমী ও দশমীতে উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন, সাবেক শিক্ষাপ্রতি মন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলন ও তার সহধর্মিণী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য নাজমুন নাহার বেবী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুর রকিব ও চাঁদপুরের সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর ২১ বীরের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন পিএসসি।
উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল চৌধুরী, সহকারি কমিশনার (ভূমি) বাপ্পি দত্ত রনি, সহকারি পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) রিজওয়ান সাঈদ জিকু, কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হালিম, উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র হুমায়ন কবির প্রধান, চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শুভাস চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিনয় ভূষণ মজুমদার, উপজেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল আবেদীন স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ফারুকী, বিএনপির নেতা শাহজালাল প্রধান জালাল, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সাবেক এপিএস মাহবুব আলম, পৌর বিএনপির সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম পাটোয়ারী, পৌর যুবদলের সভাপতি কাজী ফরহাদ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন আবেগ, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শরীফুল ইসলাম শরীফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও হিন্দু সম্প্রদায় ও ৩৯টি পূজা মন্ডপের নেতৃবৃন্দের সাথে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
পঞ্জিকা মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এ জন্যই বিজয়া। বিজয়া দশমীর কথাটি শুনলেই মন বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু এ কথাটাও আমাদের ভুললেই চলবে না যে, এই দিনে মা বিজয়ী হয়েছিলেন, এই মা সফল হয়ে ছিলেন। তবুও এই দিনে মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন এ কথা মনে পড়লেই মন অশান্ত হয়ে উঠে।
বিজয়া দশমীর তিথিতে মা সকল অশুভ শক্তির বিনাশ করেন এবং সারা বছরের জন্য আমাদের আনন্দে ভরিয়ে রেখে যান। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলিও।
কচুয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ফনী ভূষণ মজুমদার তাপু ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সাহা জানান, এবার কচুয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৯ট মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সুষ্ঠু, সুশৃংখলভাবে শারদীয় দুর্গা উৎসব সম্পন্ন হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আনসার বাহিনী, সাংবাদিকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান এক্য পরিষদের সভাপতি প্রাণধন দেব ও সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তুষ পোদ্দার জানান, ৩৯ টি মন্ডপে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও সকল জাতীগোষ্ঠীর সহযোগীতায় শান্তিপূর্ণভাবে এ উৎসব পালনে সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।