মতলব দক্ষিণে পারিবারিক কলহের জের ধরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে খাদিজা আক্তার মিম (২২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে।
![priyo chandpur 12 Model Hospital](https://priyochandpur.net/wp-content/uploads/2023/11/awfe.png)
গত (১১ এপ্রিল) সকালে উপজেলার নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের বকচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রোববার (১৪ এপ্রিল) সকালে নিহত গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর গতকাল সকালেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূর শাশুড়ি জাহেদা খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত খাদিজা আক্তার মিম উপজেলার বকচর গ্রামের খোকন তালুকদারের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী ইব্রাহিম প্রধানীয়া একই এলাকার মোতালেব প্রধানীয়ার ছেলে।
খাদিজা ও ইব্রাহিম দম্পত্তির দু’টি সন্তান রয়েছে। নিহত খাদিজা ইব্রাহিম প্রধানীয়ার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন। ইব্রাহিম এর আগেও দুটি বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সেই সংসার টিকেনি তার।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, বিদেশ থাকার পর সম্প্রতি নিহত খাদিজা আক্তার মিমের স্বামী ইব্রাহিম দেশে ফেরেন।বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী ও শাশুড়ি খাদিজাকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন।
গত ১০ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে খাদিজাকে মারধর করেন তাঁর স্বামী ইব্রাহিম প্রধানীয়া। পরে (১১ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার (ঈদুল ফিতরের দিন) সকালে স্বামীর বাড়িতে খাদিজার সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ির ঝগড়া বাঁধে। একপর্যায়ে খাদিজার গায়ে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তাঁর সমস্ত শরীর দগ্ধ হয়ে যায়। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গায়ের আগুন নেভান এবং খাদিজার বাবা-মাকে মুঠোফোনে খবর দেন।
এ সময় তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় খাদিজাকে স্বজনেরা প্রথমে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই তাঁকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মারা যান খাদিজা।
নিহত খাদিজার বাবা খোকন তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর মেয়েকে নানা ভাবে নির্যাতন করতেন স্বামী ও শাশুড়ি। শেষ পর্যন্ত গায়ে আগুন লাগিয়ে তাঁর মেয়েকে মেরেই ফেলা হলো। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মেয়ের স্বামী ও শাশুড়ির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
অভিযুক্ত স্বামী ইব্রাহিম প্রধানীয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে ইব্রাহিম পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মতলব দক্ষিণ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যাকান্ড। পারিবারিক কলহের জেরে এটি ঘটেছে।
এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি জাহেদা খাতুনকে রবিবার সকালে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটকের পর চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।