ঢাকা ০৮:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারনার শেষদিন; বিদ্রোহীদের চাপে কোনঠাসা নৌকা!

সাইফুল ইসলাম সিফাত : হাজীগঞ্জের ইউপি নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা।

Model Hospital

চতুর্থ দাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচনে হাজীগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডে একই সাথে অনুষ্ঠিত হতে যচ্ছে নির্বাচন।
চেয়ারম্যন প্রার্থীসহ সর্বমোট ৪৫১ জন প্রার্থী অংশ গ্রহন করছেন এই নির্বাচনে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রয়েছে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা। এই ১১টি ইউনিয়নের সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ২০২০৯৬ (দুই লক্ষ দুই হাজার চিয়ানব্বই) জন। এই বিশাল জনগুষ্ঠির সুন্দর সু-শৃংখলভাবে ভোট প্রধানের সুবির্ধার্থে ১১টি ইউনিয়নের ৯৯ টি ওয়ার্ডকে ১০৯ টি কেন্দ্রে ভাগ করা হয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার ৩২ ঘণ্টা আগে থেকে কোনো প্রচার চালানো যাবে না। আগামী রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে শেষদিনে জমজমাট প্রচারণা চালিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যন ও মেম্বার প্রার্থীরা। পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার প্রার্থীরাও। নির্বাচন কমিশনও শেষ করেছেন তাদের পরিকল্পনা।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ১১টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র পরিচয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী মাঠে প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ১৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী ও সমর্থকসহ মোট ৮ জন বিদ্রোহী এবং বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী ও সমর্থকসহ ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন।
গত ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এমন দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সমর্থক এবং বিএনপি, জামায়াত ও জাকের পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১১টি ইউনিয়নে ২৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে ৪৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। যারা সবাই ৭ ডিসেম্বর প্রতীক নিয়েছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচয়ে আওয়ামী লীগের ৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিএনপির ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৬ সালে দলীয় গঠণতন্ত্র সংশোধন করে দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা দলীয় নেতাদের সরাসরি বহিষ্কারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর থেকে এই ধারা অনুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার শুরু হয়। তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে একাধিক দলীয় প্রার্থী হেরে গেছেন।

অপরদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা না থাকার অভিযোগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে দেখা গেছে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র পরিচয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। সারা দেশের মতো এর ব্যতিক্রম হাজীগঞ্জেও দেখা যায়নি। বিভিন্ন ইউনিয়নে উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

হাজীগঞ্জে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বতন্ত্র হিসাবে আওয়ামী লীগের পদধারী ও সমর্থক প্রার্থীদের মধ্যে রাজারগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক আনারস প্রতীকে মো. রফিক পাটওয়ারী, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক আনারস প্রতীকে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ফরাজী, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন যুবলীগের (পূর্ব) সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন, বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে মজিবুর রহমান মজিব নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান চশমা প্রতীকে সোহরাব হোসেন মিয়াজী, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকে রফিকুল ইসলাম মেলেটারী এবং একই ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চশমা প্রতীকে মো. ইউনুছ মিয়া, হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোটরসাইকেল প্রতীকে মোহাম্মদ আলী (এম আলী মুজিব) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

অপরদিকে বিএনপির পদধারী ও সমর্থক প্রার্থীদের মধ্যে রাজারগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির সহ-সভাপতি চশমা প্রতীকে মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাকিলা ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক ঘোড়া প্রতীকে মো. জুলহাস মিয়া, একই ইউনিয়নে উপজেলা যুবলদলের যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকে মিজানুর রহমান মিলন, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য আনারস প্রতীকে নুরুল আমিন হেলাল, হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে মোশারফ হোসেন, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে উপজেলা যুবদলের সদস্য ঘোড়া প্রতীকে নেছার আহমেদ, গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে মো. নাছির উদ্দিন, হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকে ইমাম হোসেন লিটন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে দলীয় প্রতীক চেয়ে যারা মনোনয়ন পায়নি, এদের মধ্যে যারা ভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আওয়ামীলীগ।

অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী জানান, কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তাই আমরা দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেইনি। এখন আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, সেটা তার বা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।

এর আগে ৭ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন হাজীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যন ও মেম্বার প্রার্থীরা। গত কয় দিনে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। চায়ের দোকান, উঠান বৈঠক, মিছিলে স্ব স্ব দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ছিলো রসে ভরা নানান শ্লোগান। সাধারণ ভোটাররা এসব শ্লোগানে মুগ্ধও হচ্ছেন, পাচ্ছেন নির্বাচনী আনন্দও। এই সব আনন্দের মাঝেই গতকাল মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে প্রচারনা।

বিধি অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অর্থাৎ সমন্বিতভাবে ২৭ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ২ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে বা তাতে অংশ নিতে পারবেন না।

ওই সময় কোনো আক্রমণাত্মক কাজ বা বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ করতে পারবেন না। ভোটার বা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত বা দায়িত্বরত কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। কোনো অস্ত্র বা শক্তি প্রদর্শন বা ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ এ আইন ভঙ্গ করলে ন্যূনতম ছয় মাস ও অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা এ বিষয়ে প্রার্থী এবং ভোটারদের মনে চলছে ঝল্পনা কল্পনা ।

এদিকে, উপজেলা জুড়ে নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের ৬’শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা ৩১ টিমে ৩টি স্ট্রাইকিং ২টি ষ্টেনবাই ৩ জন সিনিয়র অফিসার ৩ ভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও থাকবে সাদা পোষাকের পুলিশ সদস্য। প্রতি কেন্দ্রে ৫জন পুলিশের সাথে থাকবে আনসার বাহিনী। এছাড়া মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

হাজীগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারনার শেষদিন; বিদ্রোহীদের চাপে কোনঠাসা নৌকা!

আপডেট সময় : ০৫:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১

সাইফুল ইসলাম সিফাত : হাজীগঞ্জের ইউপি নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা।

Model Hospital

চতুর্থ দাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচনে হাজীগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডে একই সাথে অনুষ্ঠিত হতে যচ্ছে নির্বাচন।
চেয়ারম্যন প্রার্থীসহ সর্বমোট ৪৫১ জন প্রার্থী অংশ গ্রহন করছেন এই নির্বাচনে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রয়েছে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা। এই ১১টি ইউনিয়নের সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ২০২০৯৬ (দুই লক্ষ দুই হাজার চিয়ানব্বই) জন। এই বিশাল জনগুষ্ঠির সুন্দর সু-শৃংখলভাবে ভোট প্রধানের সুবির্ধার্থে ১১টি ইউনিয়নের ৯৯ টি ওয়ার্ডকে ১০৯ টি কেন্দ্রে ভাগ করা হয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার ৩২ ঘণ্টা আগে থেকে কোনো প্রচার চালানো যাবে না। আগামী রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে শেষদিনে জমজমাট প্রচারণা চালিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যন ও মেম্বার প্রার্থীরা। পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার প্রার্থীরাও। নির্বাচন কমিশনও শেষ করেছেন তাদের পরিকল্পনা।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ১১টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র পরিচয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী মাঠে প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ১৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী ও সমর্থকসহ মোট ৮ জন বিদ্রোহী এবং বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী ও সমর্থকসহ ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন।
গত ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এমন দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সমর্থক এবং বিএনপি, জামায়াত ও জাকের পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১১টি ইউনিয়নে ২৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে ৪৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। যারা সবাই ৭ ডিসেম্বর প্রতীক নিয়েছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচয়ে আওয়ামী লীগের ৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিএনপির ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৬ সালে দলীয় গঠণতন্ত্র সংশোধন করে দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা দলীয় নেতাদের সরাসরি বহিষ্কারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর থেকে এই ধারা অনুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার শুরু হয়। তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে একাধিক দলীয় প্রার্থী হেরে গেছেন।

অপরদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা না থাকার অভিযোগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে দেখা গেছে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র পরিচয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। সারা দেশের মতো এর ব্যতিক্রম হাজীগঞ্জেও দেখা যায়নি। বিভিন্ন ইউনিয়নে উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

হাজীগঞ্জে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বতন্ত্র হিসাবে আওয়ামী লীগের পদধারী ও সমর্থক প্রার্থীদের মধ্যে রাজারগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক আনারস প্রতীকে মো. রফিক পাটওয়ারী, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক আনারস প্রতীকে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ফরাজী, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন যুবলীগের (পূর্ব) সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন, বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে মজিবুর রহমান মজিব নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান চশমা প্রতীকে সোহরাব হোসেন মিয়াজী, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকে রফিকুল ইসলাম মেলেটারী এবং একই ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চশমা প্রতীকে মো. ইউনুছ মিয়া, হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোটরসাইকেল প্রতীকে মোহাম্মদ আলী (এম আলী মুজিব) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

অপরদিকে বিএনপির পদধারী ও সমর্থক প্রার্থীদের মধ্যে রাজারগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির সহ-সভাপতি চশমা প্রতীকে মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাকিলা ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক ঘোড়া প্রতীকে মো. জুলহাস মিয়া, একই ইউনিয়নে উপজেলা যুবলদলের যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকে মিজানুর রহমান মিলন, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য আনারস প্রতীকে নুরুল আমিন হেলাল, হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে মোশারফ হোসেন, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে উপজেলা যুবদলের সদস্য ঘোড়া প্রতীকে নেছার আহমেদ, গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকে মো. নাছির উদ্দিন, হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকে ইমাম হোসেন লিটন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে দলীয় প্রতীক চেয়ে যারা মনোনয়ন পায়নি, এদের মধ্যে যারা ভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আওয়ামীলীগ।

অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী জানান, কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তাই আমরা দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেইনি। এখন আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, সেটা তার বা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।

এর আগে ৭ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন হাজীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যন ও মেম্বার প্রার্থীরা। গত কয় দিনে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। চায়ের দোকান, উঠান বৈঠক, মিছিলে স্ব স্ব দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ছিলো রসে ভরা নানান শ্লোগান। সাধারণ ভোটাররা এসব শ্লোগানে মুগ্ধও হচ্ছেন, পাচ্ছেন নির্বাচনী আনন্দও। এই সব আনন্দের মাঝেই গতকাল মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে প্রচারনা।

বিধি অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অর্থাৎ সমন্বিতভাবে ২৭ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ২ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে বা তাতে অংশ নিতে পারবেন না।

ওই সময় কোনো আক্রমণাত্মক কাজ বা বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ করতে পারবেন না। ভোটার বা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত বা দায়িত্বরত কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। কোনো অস্ত্র বা শক্তি প্রদর্শন বা ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ এ আইন ভঙ্গ করলে ন্যূনতম ছয় মাস ও অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা এ বিষয়ে প্রার্থী এবং ভোটারদের মনে চলছে ঝল্পনা কল্পনা ।

এদিকে, উপজেলা জুড়ে নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের ৬’শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা ৩১ টিমে ৩টি স্ট্রাইকিং ২টি ষ্টেনবাই ৩ জন সিনিয়র অফিসার ৩ ভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও থাকবে সাদা পোষাকের পুলিশ সদস্য। প্রতি কেন্দ্রে ৫জন পুলিশের সাথে থাকবে আনসার বাহিনী। এছাড়া মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।