সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। চাঁদপুর জেলার ৫ টি সংসদীয় আসনেও থেমে নেই সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যার যার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সভা সমাবেশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থীতা জানান দিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সামনে জাতীয় নির্বাচন, আগামী ২৩শে জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বিএনপি জামাতের আন্দোলন সহ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র , বর্ষাকালে ঝড়বৃষ্টি জনিত আবহাওয়া, বর্তমানে সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষা চলছে, জুন মাসে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা এবং জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ঈদুল আজহা উদযাপন হবে। এসব সামলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করলে দলের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী হওয়ার চেয়ে নিজ দলে বিভক্তি ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রুপ – উপগ্রুপ প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।
বর্তমান জেলা কমিটির নেতৃত্বে সম্মেলন করার চেষ্টা হলেও দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই নিকটবর্তী। এখন জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে সংগঠনের মধ্যে গ্রুপ – উপগ্রুপ সৃষ্টি সহ জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এতে করে দলের সাংগঠনিক অবস্থান দূর্বল হয়ে যাবে এবং জাতীয় নির্বাচনের দলের প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট বদিউজ্জামান কিরন বলেন, জাতীয় নির্বাচন যেহেতু সন্নিকটে তাই এই মুহূর্তে সম্মেলন করলে দলীয় গ্রুপিংয়ে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর সেটা জাতীয় নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মিন্টু বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিজয় অর্জন সম্ভব।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৬ টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী ইউনিট। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে জেলা কমিটির নেতৃত্বে সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম, দেশ ও জাতির সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালের দক্ষ নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অত্যন্ত সুন্দর ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২০ সালে যখন সারা বিশ্ব করোনা মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দিকবিদিক ছুটছে তখন শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তা সুন্দর ভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আর শেখ হাসিনার নির্দেশে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দক্ষ নেতৃত্বে সার্বক্ষনিক জেলার সর্বসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ছিন্নমূল ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক গৃহ নির্মাণ করে দেয়া, চাঁদপুর শহরকে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ভূমি ক্রয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা। যা জেলার দলমত নির্বিশেষে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।
আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল চাঁদপুরের মানুষের আস্থার প্রতীক ও সাধারণ নিরীহ ত্যাগী কর্মীদের শেষ আশ্রয়স্থল। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন নেতা ও চাঁদপুরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে এবং তাদের দৃঢ় নেতৃত্বেই বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদের বিজয় সু- নিশ্চিত করেছেন। এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নৌকার বিজয় অর্জন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম চলমান আছে এখন সম্মেলন বাকি আছে। জাতীয় নির্বাচন যেহেতু খুব কাছাকাছি তাই এখন সম্মেলন করার ঝুঁকি নেওয়া হলে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি হতে পারে। আমরা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি।
উল্লেখ্য: চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি আর কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত হয় ২০১৭ সালের ১০ আগষ্ট।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে জেলার আটটি উপজেলা ও ৭ টি পৌর কমিটির মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলা, ছেংগারচর পৌরসভা, ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সম্মেলন বাকি। এছাড়া সকল উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মীরা এবং নৌকার সমর্থিত সাধারণ ভোটাররা জানান এমতাবস্থায় চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাব বিস্তার করবে এবং দলের মধ্যে নতুন করে গ্রুপিং সৃষ্টি হবে যা জাতীয় নির্বাচনে দলের জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলবে।