রাফিউ হাসান : চাঁদপুরের শাহরাস্তির তথা বাংলাদেশের গর্ব ড. এম এ সাত্তারের মৃত্যুবার্ষিকীতে ছিলো না কোনো আয়োজন। অনেকটা নিভৃতে চলে গেলো এই মহান মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী। যিনি শাহরাস্তির উন্নয়নে এতো কাজ করলেন, সেই মানুষটিকে স্মরণ করে নি কোনো শাহরাস্তি বাসী। গুটি কয়েক লোক তাকে স্মরণ রাখলেও তার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করার সময় হয় নি কারও। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মহান মানুষটির মৃত্যু নিয়ে সীমাবদ্ধ ছিলো কার্যক্রম। এই মানুষটি নিজের জীবনের একটি সময় শুধু শাহরাস্তি তথা সারা বাংলার মানুষকে নিয়েই কাজ করে গিয়েছেন। তার নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোও চাক্ষুস কোনো আয়োজনে স্মরণ করে নি তাকে।
এক নজরে ড. এম এ সাত্তারের জীবনকালঃ
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতি সন্তান, বাংলাদেশ গণশিক্ষা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, গণবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, গনপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব, বিশিষ্ট অর্থনীতিববিদ, শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ নারী শিক্ষার অগ্রদূত, মসজিদভিত্তিক শিক্ষার রুপকার এবং বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ড. এম. এ সাত্তার ১৯৩২ সালের ১জুন চাঁদপুর জেলাধীন শাহারাস্তি উপজেলার নাওড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবার নাম আজিজুর রহমান, মাতার নাম করফুলেন্নাছা।
তিনি শাহারাস্তির নিউ স্কিম হাই মাদ্রাসায় (বর্তমানে শাহারাস্তি হাই স্কুল) অধ্যয়ন করেন এবং জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। তারপর তিনি চট্টগ্রামে হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং এই মাদ্রাসা হতেই ১৯৫১ সালে প্রথম স্থান অধিকার করে মেট্রিক পাস করেন ।
তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করে আইএ প্রথম বিভাগে পাস করেন । ১৯৫৬ সালে তিনি অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান লাভ করেন।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের করাচি বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে তিনি লোক প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই সাথে সিএসপি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সারা পাকিস্তানে প্রথম স্থান অধিকার করে লাহোর সিভিল সার্ভিস ট্রেনিং একাডেমিতে যোগদান করেন । এক বছর ট্রেনিং শেষ করে তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসনে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন ।
১৯৬০ সালে সিএসপি অফিসার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন ।১৯৬২ সালে জার্মান নাগরিক ড. এলেন মেরি হেরিংটনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । ড. সাত্তার ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম কলেজ থেকে ডেভলপমেন্ট ইকনমিক্সে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করার কারনে পাকিস্তান কারাগারে বন্দি ছিলেন ।
তিনি শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা, সমাজসেবা এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ‘বেইস’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৯ সালে নাওড়ায় মায়ের নামে করফুলেন্নেছা মহিলা কলেজ স্থাপন করেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজার কলেজ, নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ, রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজ ও মেহের কলেজ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
ড. সাত্তার ব্যক্তি জীবনে চার জন পুত্র সন্তানের জনক । তারা সবাই সুশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত ।।
তিনি ১৯৯২ সালের ২৬ মে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।