মোঃ মাসুদ রানা : চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে ১৮১জন মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা গেজেটভূক্ত না হওয়ায় তারা শহীদ মিনারে অবস্থান করে দুঃখ কষ্টের বিষয়টি জানান দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সম্বলিত কাগজপত্রাদি থাকা শর্তেও নানা জটিলতায় তালিকা বঞ্চিত হয়ে তারা সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন সহ পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ।
সোমবার (৯- মে) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসে শাহরাস্তি উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি গনমাধ্যমকে জানান দেন।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বর্তমানে এ উপজেলায় ভাতা স্থগিত ৩৪ জন, সনদধারী ১৯ জন ও অনলাইনে আবেদনকারী ১শ’ ২৮ জনসহ ১শ’ ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ৩৪ জনের ভাতা স্থগিত রয়েছে। ২০১৭ সালে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক ১ শ’ ৮১ জনের তালিকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। পুনরায় ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাতা স্থগিত ও সনদধারি ৫৩ জনের তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠান।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদন পুনরায় যাচাই করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সে প্রতিবেদন পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতায় তাঁরা গেজেটভূক্ত হতে পারছেন না। ইতোমধ্যে এদের মধ্যে কেউকেউ মারা গেছেন, অনেকেই মৃত্যুশয্যায়। যারা বেঁচে আছেন তাঁরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গেজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তাঁরা সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
খনেশ্বর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফজলুল হক জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আমাদের বাছাইয়ের তালিকা না পাঠানোয় আমরা ভাতা বঞ্চিত হয়ে দূর্বিষহ জীবন যাপন করছি। কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতায় ভাতা না পেয়ে অনেক দুঃখে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আজ অর্থকষ্টে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আবার এই বয়সে পরিবারের বোঝা হিসেবে তাচ্ছিল্য শিকার হচ্ছি। একপর্যায়ে তিনি বলেন এ জন্য দেশ স্বাধীন করেছি আজ আমরাই অসহায় অবহেলিত।
কুলশী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল হাশেম জানান, বর্তমানে আমি দৃষ্টিহীনতায় ভুগছি। ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের তালিকা জামুকা’তে পাঠানো হচ্ছেনা। সেটা কেন? কি জন্য? আমাদের কি অপরাধ? সেটার প্রতিকার চাই।
উঘারিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা একেএম ফজলুল হক জানান, আমরা সঠিক মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কেন অবহেলিত সে বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রায়শ্রী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মমতাজউদ্দিন জানান, ভাতা বন্ধ একথা লজ্জায় কাউকে বলতে পারছি না। বিষয়টি নিজের স্ত্রী-সন্তানদের কাছে পর্যন্ত লুকাতে হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি লজ্জিত ও বিব্রত।
এদিকে এ বিষয়ে শাহরাস্তি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকা শর্তেও নানা জটিলতায় বর্তমানে তারা ভাতা বঞ্চিত রয়েছে। এমতাবস্থায় অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকভাবে সমাধান করলে পরিবারগুলি উপকৃত হবে।