বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুরে ৩য় বারের মত ৩য়দিন আজ পালিত হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। দেশের ১৬ কোটি মানুষের সাথে দ্বিমত পোষন করে ও সৌদি আররসহ আরব দেশগুলোর সাথে মিল রেখে গত রোববার ও সোমবার চাঁদপুরের হাজিগর্জে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসের ৩০টি রোজা যথাযথ মর্যাদায় পালন শেষে আজ মংগলবার সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হলো।
চাঁদপুর বাসীর অনেককেই গত রোববার ও সোমবার একদিন একদিন করে ২দিনই পালন করতে দেখা যায় পবিত্র ঈদুল ফিতর। সে হিসাব কশলে আজ ৩য়বার ৩য়দিন চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষকে ইসলামী চিন্তাবিদদের গোড়ামির
কারনে ভিন্নভিন্ন মত পোষন করায় চাঁদপুরে ৩দিন পালিত হলো পবিত্র ঈদূল ফিতর। এ ভাবে ঈদকে পালন করতে গিয়ে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিটি বছরই আগাম এক এক দিন করে পালন করা হয় ২দিন আগাম ঈদ। সরকারী ঘোষিত সহ তিনদিন ঈদ উৎযাপন করা হয়ে থাকে। এতে ব্যাপক বিশংখলাও দেখা দেন। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনাও ঘটার উপক্রম দেখা দেয়। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার পূর্বে প্রশাসনে এর একটা বিহীত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে চাঁদপুরের সচেতন মহলের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে।
এদিকে দেখা গেছে,সকল স্থানে ইমামগন পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে তারা মহান আল্লাহ্ধসঢ়;পাকর দরবারে দোয়া করেছেন। তারা এদেশের সরকার প্রধান, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাসহদেশ পরিচালনায় থাকা সকল কর্মকতা,প্রশাসন ও দেশবাসীর সকলের সুস্বাস্থ কামনা ও শান্তি কামনা করেন।
এ ছাড়া সকল মুসলমান যেন মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সা:) পাকরওজা পাকে যেতে পারে সে জন্য খোদার কাছে আহবান জানান এবং এ দেশ থেকে করোনা মহামারি একেবারে নিমূল করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ্ পাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আর যারা করোনা মহামারিতে মৃত্যুবরন করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তাদেরকে বেহেস্তবাসী করার জন্য আল্লাহ্ পাকের কাছেরক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করেন। পরে সকল ধর্মপ্রান মুসলমানগন দীর্ঘ বছর পর মুক্ত ভাবে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় শেষে মনভরে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে কৌশল বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়।
চাঁদপুরে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে বিগত ৪টি বছর পর এবার ধর্মপ্রান মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় রিতিনীতি অনুযায়ী খোলা আকাশের নীচে বিশাল বিশাল মাঠে এ বছর অত্যান্ত অনন্দের সাথে ধর্মীয় ঈদুল ফিতরের নামাজ জামাতের সাথে পালন করেতে পারলো।
বিগত ২বছর ভয়াবহ করোনা মহামারির কারনে মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় কারনে পালন করা উৎসব দেশের মানুষ পালন করতে পারেনি। ২টি উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজ সকলে এক সাথে আদায় করতে পারেনি এ মহামারির কারনে।
কোথায়ও কোথায়ও বিভিন্ন মসজিদে সীমিত আকারে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছিল।
এ বৈশ্বিক মহামারির কারনে দেশের সকল মসজিদ গুলোতে ধর্মপ্রান মুসলমানরা এক সাথে তাদের নামাজ আদায় না করার জন্য বলা হয়েছিল। যার ফলে করোনা মহামারির সময় সকল মসজিদ এক প্রকার মুসল্লি শুন্য হয়ে পড়ে। কোন কোন স্থানে সীমিত আকারে ধর্মপ্রান মুসলমান আল্লাহ্ পাকের আদেশ পালন করতে পবিত্র এ পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ মসজিদে গিয়ে আতংকের মধ্যে আদায় করে দিনাতিপাত করতে দেখা গেছে সাধারন মানুষকে।
বিগত ২ বছর পর অনেকাংশে করোনা মহামারিকে জয় করে দেশের সকলস্থানের ন্যায় আজ মংগলবার চাঁদপুরের সর্বত্র ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যের মধ্যদিয়ে ও অত্যান্ত আনন্দ উৎসাহের মাধ্যমে উৎসবের মধ্যদিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। তারা মন ভরে এ বছর স্বাধীন ভাবে কোন প্রকার বাধা আপত্তি না থাকায় প্রান ভরে সকলস্থানে সকল এলাকা মাঠে ধর্মপ্রান মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছে।
এদিকে চাঁদপুর শহরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান নামাজের নাজাত অনুস্টিত হয়েছে ,শহরের প্রান কেন্দ্রে পৌর ঈদগাহ মাঠে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। এ ছাড়া পরবর্তীতে পবিত্র ঈদূল ফিতরের নামাজের জামাত বিভিন্ন সময়ে আদায় হয়েছে। এ মধ্যে শহরের চাঁদপুর সরকারী কলেজ মাঠ ময়দানে সকাল ৮টায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের ইমামতী করেন হযরত হাফেজ মাও: নিজামুল হক।
আউটার স্টেডিয়াম মাঠে সকাল ৮টায়,শহরের হাসান আলী সরকারী মাঠে চিশতীয়া জামে মসজিদের সামনে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে,শহরের বড় স্টেশন মোল হেডে সকাল সাড়ে ৮টায়,রেলওয়ে মাদ্রাসায় রোডস্থ মাদ্রাসায় সকাল ৮টায়, আক্কাছ আলী হাই স্কুল মাঠে সকাল ৮টা ১৫মিনিটে,শহরের বকুলতলা রেলওয়ে জিলানীয় মসজিদে সকাল ৮টায়, বাইতুল আমিন রেলওয়ে জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়, পুরানবাজার মধূসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ৮টায়, বাবুর হাট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সকাল ৮টায়, চাঁদপুর পুলিশ লাইনস্ মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়।
নামাজ শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পুলিশ সদস্যদের সহিত পুলিশ সুপার মহোদয়ের প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার পুলিশ লাইন্স মেসে জেলা পুলিশ, চাঁদপুর কর্তৃক আয়োজিত প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম(বার) মহোদয় ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ডাঃ আফসানা শর্মী, পুনাক সভানেত্রী, চাঁদপুর উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে এলো দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। পুলিশ সুপার মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব উদযাপন উপলক্ষে জেলা পুলিশ, চাঁদপুরের প্রত্যেকটি ইউনিটে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, পুনাক সহ-সভানেত্রী পূজা দাশ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দীন পিপিএম, চাঁদপুরসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া চাঁদপুর জেলার হাজিগর্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্যে সব চাইতে বড় নামাজের জামাত হয়েছে সকাল সাড়ে ৭টায়। সেখানে লক্ষাধিক ধর্মপ্রান মুসলিম একসাথে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত আদায় করে। এ ভাবে যে সব মাঠে দীর্ঘ ৪ বছর পর ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত আদায় হয়েছে,সেখানে মাঠ মুসল্লিদের আগমনে কানায় কানায় ভরে যায়। অপর দিকে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমাদের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় জানা গেছে,দীর্ঘ ৪ বছর পর ও বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারনে ২ বছরসহ দীর্ঘ বছর পর মানুষজন মাঠে খোলা আকাশেন নীচে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার সুযোগ পেয়ে তারা আনন্দের সাথে এ বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে,মূলত ৯৪ বছর পূর্বে হাজীগঞ্জের মাদ্রাসা এলাকা থেকেই আগাম রোজা ও ঈদের প্রচলন শুরু করেন সাদ্রা দরবার শরিফের মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.)। তাঁর অনুসারীরা ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন অব্যাহত রেখেছেন।
স্থানীয়রা বলেন, তাদের পাশে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা ও শমেসপুর গ্রামের হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার রবিবার (১ মে) ঈদ উদযাপন করেছেন। তবে সেখানে মুসল্লিদের ব্যাপক সমাগম ঘটেনি।
এ বিষয়ে সাদ্রা দরবার শরীফের বড় পীরজাদা ড. মুফতি বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী বলেন, হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি এই তিন মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তেও যদি চাঁদ দেখা যায়। আর সেই সংবাদ যদি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তেও পৌঁছে। তাহলে পূর্ব প্রান্তের মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ এবং ঈদ করা ওয়াজিব।
তার দাবি, শনিবার আফগানিস্তান, নাইজার ও মালিতে চাঁদ দেখে গেছে। ওই সংবাদ নির্ভরযোগ্য ভিত্তিতে প্রাপ্ত হয়ে রোববার ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়েছে।
রোববার সৌদি আরব দেশে চাঁদ দেখা যাওয়ায় সোমবার আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। পাশাপাশি ঢাকার সদরঘাটস্থ খানকা, আসকোনা এবং পটুয়াখালীর বদরপুর দরবার শরিফে ঈদের জামাত হয়েছে।
একদিন আগে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উদযাপন করা গ্রামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মণিহার, বড়কূল, অলিপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, বদরপুর, রূপসা, বাসারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মোহনপুর, এখলাশপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম উল্লেখযোগ্য।