ঢাকা ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদকে সামনে রেখে মতলব দক্ষিণে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

মোজাম্মেল প্রধান হাসিব : পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্মে আতংকিত স্থানীয় এলাকাবাসী।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দশ থেকে পনের বছর বয়সী ছেলেদের ১৫/২০ জনের একাধিক দল এলাকায় শান্তি শৃংখলা বিনষ্ট করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়ার পাশাপাশি আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার সদরের আশপাশের এলাকা এবং উপজেলার নারায়ণপুর বাজার এলাকা, বাড়ৈগাঁও, হুরমহিষা, রসূলপুর, আশ্বিনপুর, গোবিন্দপুর, কালিকাপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং হঠাৎ করেই নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, এখনি যদি কিশোর গ্যাংদের লাগাম টেনে না ধরা হয়, তবে এরা এক সময় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্মে সম্প্রতি মতলবের খাদেরগাঁও ইউনিয়নের হুরমহিষা গ্রামে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮ম শ্রেণির মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এ ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। একই ইউনিয়নের বাড়ৈগাঁও ও গোবিন্দপুর গ্রামের দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিক মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কিশোর গ্যাং এর সর্বশেষ শিকার নারায়ণপুর বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর ভক্ত। যিনি গত ২১ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নিহত হন। সে ঘটনায় আটক হওয়া অমর ভক্তের কর্মচারী জয় বিশ্বাস ওরফে অনিক ও হৃদয় সুত্রধর বিপিএলের জুয়ার বাজিতে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ হওয়ায় টাকা পরিশোধের জন্য খুনের পরিকল্পনা করে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়।
কিশোর গ্যাংয়ের চরিত্রও মাঝে মাঝে বদলায়। তারা ইদানিং বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগমতো সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের অপকর্ম করার অপচেষ্টা চালায়।
কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ নারায়ণপুর বাজারের কালিবাড়ি মন্দিরের গেইট ও সরকারি গোডাইনের পাশেসহ নারায়ণপুর আল বারাকা মডেল স্কুল সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় উচ্ছৃংখল আড্ডা দেয়। এরা স্কুল কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের অশ্লীল ভাষায় ইভটিজিং করে থাকে। তাদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে এলাকার বয়স্কদের সাথে খারাপ আচরণ করে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপের বেপরোয়া মারামারিতে আমরা নির্বিঘ্নে ব্যববা পরিচালনা করতে পারছিনা। তারা কথায় কথায় মারামারিতে লিপ্ত হয়। ইতিমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী কিশোর গ্যাংয়ের হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
এলাকার সচেতন মহল এই কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, এরা বেপোরোয়া গতিতে চলা ফেরা করে, উচ্ছৃঙ্খল কথা বলে, স্কুল কলেজ মাদরাসার সামনে ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি করে৷ রাস্তার মোড়ে বাজারের মোড়ে অহেতুক জটলা সৃষ্টি করে আড্ডা দেয়। এদের উৎপাত থেকে আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদে রাখতে চাই।
কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বিষয়ে জানতে চাইলে মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া জানান, এবিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ রয়েছে। ঈদের পরে স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিসহ বসে সচেতনতা মূলক সভা করবো। কিশোর গ্যাংদের হামলার ঘটনায় যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু স্থানীয় ভাবে মিমাংসা হয়েছে। আমি নিজে গিয়েছি এবং থানা থেকে ফোর্স পাঠিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে চাই। এ জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
ট্যাগস :

বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলে, জীবন ও জীবিকার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে : ডিসি মোহসীন উদ্দিন

ঈদকে সামনে রেখে মতলব দক্ষিণে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

আপডেট সময় : ০৪:৫৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল ২০২২
মোজাম্মেল প্রধান হাসিব : পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্মে আতংকিত স্থানীয় এলাকাবাসী।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দশ থেকে পনের বছর বয়সী ছেলেদের ১৫/২০ জনের একাধিক দল এলাকায় শান্তি শৃংখলা বিনষ্ট করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়ার পাশাপাশি আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার সদরের আশপাশের এলাকা এবং উপজেলার নারায়ণপুর বাজার এলাকা, বাড়ৈগাঁও, হুরমহিষা, রসূলপুর, আশ্বিনপুর, গোবিন্দপুর, কালিকাপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং হঠাৎ করেই নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, এখনি যদি কিশোর গ্যাংদের লাগাম টেনে না ধরা হয়, তবে এরা এক সময় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্মে সম্প্রতি মতলবের খাদেরগাঁও ইউনিয়নের হুরমহিষা গ্রামে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮ম শ্রেণির মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এ ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। একই ইউনিয়নের বাড়ৈগাঁও ও গোবিন্দপুর গ্রামের দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিক মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কিশোর গ্যাং এর সর্বশেষ শিকার নারায়ণপুর বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর ভক্ত। যিনি গত ২১ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নিহত হন। সে ঘটনায় আটক হওয়া অমর ভক্তের কর্মচারী জয় বিশ্বাস ওরফে অনিক ও হৃদয় সুত্রধর বিপিএলের জুয়ার বাজিতে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ হওয়ায় টাকা পরিশোধের জন্য খুনের পরিকল্পনা করে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়।
কিশোর গ্যাংয়ের চরিত্রও মাঝে মাঝে বদলায়। তারা ইদানিং বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগমতো সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের অপকর্ম করার অপচেষ্টা চালায়।
কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ নারায়ণপুর বাজারের কালিবাড়ি মন্দিরের গেইট ও সরকারি গোডাইনের পাশেসহ নারায়ণপুর আল বারাকা মডেল স্কুল সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় উচ্ছৃংখল আড্ডা দেয়। এরা স্কুল কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের অশ্লীল ভাষায় ইভটিজিং করে থাকে। তাদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে এলাকার বয়স্কদের সাথে খারাপ আচরণ করে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপের বেপরোয়া মারামারিতে আমরা নির্বিঘ্নে ব্যববা পরিচালনা করতে পারছিনা। তারা কথায় কথায় মারামারিতে লিপ্ত হয়। ইতিমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী কিশোর গ্যাংয়ের হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
এলাকার সচেতন মহল এই কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, এরা বেপোরোয়া গতিতে চলা ফেরা করে, উচ্ছৃঙ্খল কথা বলে, স্কুল কলেজ মাদরাসার সামনে ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি করে৷ রাস্তার মোড়ে বাজারের মোড়ে অহেতুক জটলা সৃষ্টি করে আড্ডা দেয়। এদের উৎপাত থেকে আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদে রাখতে চাই।
কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বিষয়ে জানতে চাইলে মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া জানান, এবিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ রয়েছে। ঈদের পরে স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিসহ বসে সচেতনতা মূলক সভা করবো। কিশোর গ্যাংদের হামলার ঘটনায় যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু স্থানীয় ভাবে মিমাংসা হয়েছে। আমি নিজে গিয়েছি এবং থানা থেকে ফোর্স পাঠিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে চাই। এ জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।