সাইফুল ইসলাম সিফাত : হাজীগঞ্জে সম্পত্তি বিরোধের জেরে বড় দুই ভাইয়ের কিল-ঘুষিতে ছোট ভাই মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার সকালে উপজেলার হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের হাঁড়িয়াইন গ্রামের নতুন মিজি বাড়িতে এ মারামারির ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. সেলিম হোসেন (৪৫) ওই বাড়ির মৃত সামছুল হকের ছেলে। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ বাইতুল মামুর মসজিদের সহকারী ইমাম (মুয়াজ্জিন)। তিনি পাঁচ সন্তানের জনক।
অভিযুক্তরা হলেন, নিহতের বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম (৫২) ও তার চাচাতো ভাই মৃত ছেরাজুল ইসলামের ছেলে সোলেমান মিয়াজি (৬০)। এ ঘটনায় আহত নজরুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, এদিন সকালে সম্পত্তিগত বিরোধের জেরে বড় ভাই নজরুল ইসলাম ছোট ভাই সেলিমের সালিশি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ সালিশি বৈঠকে উপস্থিত হলেও সেলিমের পক্ষের লোকজন না আসায় বৈঠকের কিছুটা দেরী হয়।
এর মধ্যে নজরুল ইসলাম ও মো. সেলিমের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ের মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে দুজনেই অচেতন হয়ে পড়েন। পরে নিজ নিজ পরিবাবরের লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আহত নজরুল ইসলাম প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের বড় মেয়ে আয়েশা আক্তার জানান, আমাদের ঘর তোলা (নির্মাণ) কে কেন্দ্র করে এদিন সকালে বাবা ও জেঠার (নজরুল ইসলাম) সাথে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে জেঠা ও সোলেমান জেঠা একসাথে বাবাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারে। পরে বাবা অচেতন হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এসময় তার বাবা হৃদরোগী ছিলেন বলে আয়শা আক্তার জানান।
নিহতের স্ত্রী পেয়ারা বেগম জানান, ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমার জা (নজরুলের স্ত্রী) আমাকে মারধর করলে আমি ঘরে চলে আসি। এরপর বাহিরে কি হয়েছে, আমি তা দেখিনি। পরে আমার স্বামী ঘরে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন (অচেতন হয়ে পড়েন)।
এ দিকে হাসপাতালে ও নিজ বাড়িতে অভিযুক্ত নজরুল ইসলামকে না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপর অভিযুক্ত সোলেমান মিয়াজীকেও তাঁর বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয় তার পুত্রবধু প্রিয়ার সাথে। তিনি জানান, শুনেছি বাবাকে (শশুর) সেলিম কাকা গালমন্দ করে মারতে আসেন। পরে তার ভাই (নজরুল ইসলাম) বাধা দেন এবং সেলিম কাকাকে তিনি মারধর করেন। আমার বাবা নির্দোশ।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ জানান, তারা পাঁচ ভাই ও দুই বোন। পথের জায়গা নিয়ে নজরুল ইসলাম ও সেলিমের মধ্যে বিরোধ। আজ (রোববার) সকালে সালিশি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেলিমের পক্ষের লোকজন আসতে দেরী করায় এবং সালিশি বৈঠকের দেরী হওয়ায় আমি ওই বাড়ি থেকে চলে আসি।
তিনি বলেন, পরে সালিশদার আব্দুস সাত্তারের মাধ্যমে জানতে পারি তারা হাতাহাতি (মারামারি) করছেন। এরপর আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি দেখি এরা সবাই হাসপাতালে।
সালিশদার আব্দুস সাত্তার জানান, সেলিমের পক্ষের লোকজন না আসায় দরবারের দেরী হচ্ছিল। তাই আমি তাদের বাড়ির বাহিরে এসেছিলাম। পরে বাড়ির ভিতরে তাদের ডাক-চিৎকার শুনে মেম্বারকে বিষয়টি জানাই। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর দেখি, সেলিম ও নজরুলকে অজ্ঞান (অচেতন) অবস্থায় গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল জানান, নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।