ঢাকা ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কচুয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বৈশাখী মেলা

মোঃ রাছেল : বাংলাদেশে প্রতি বছর মহা ধুমধামে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। বৈশাখী উৎসবে থাকে প্রাণের ছোঁয়া, থাকে উচ্ছ্বাসের বাঁধভাঙা জোয়ার। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতা ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় বাঙালির নববর্ষ। শিশু-যুবা-বৃদ্ধসহ সব বয়সের সব শ্রেণি মানুষ এ দিনটি উদ্যাপন করে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রধান উপাদান। এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। কচুয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ১৫০ বছরের পুরানো ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা।

Model Hospital

ইংরেজ শাসনামল অবসানের পর কালক্রমে নববর্ষ উদ্যাপন উৎসবে পরিণত হয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও পরবর্তীকালের নানা ঘটনা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনকে প্রাণবন্ধ ও বিস্তুত করেছে। যদিও বর্তমান সময়ের নববর্ষ উদযাপনে পান্তাভাত ও ইলিশ ভাজাসহ মুখরোচক অনেক খাবারের সমারোহ ঘটলেও এতে প্রাণের স্পর্শ পাওয়া যায় না। ধনী ও বিলাসী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা হলেও দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অন্তরে প্রকৃত সুখ আসে না। আধুনিক যুগের শহরের মানুষের প্রাণহীন জমকালো বর্ষবরণের ডামাডোলে হারিয়ে যাচ্ছে নিবিড় পল্লি প্রীতিপূর্ণ ছোট ছোট উৎসবগুলো। উঠতি ধনীদের প্রভাব ও বড়োলোকি মনোভাবের কাছে বাঙালি কৃষকের সেই উৎসবেরও রূপ বদলে গেছে।

একটা সময় গ্রামগঞ্জে বৈশাখী মেলা বসত। সেসব মেলা এখন কমে গিয়েছে। কৃষিজ পণ্য, কুঠির শিল্প দ্রব্য, মৃৎ ও হস্তাশিল্প দ্রব্য, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম পড়ত সেসব মেলায়। মেলার সময় নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা, কুষ্ঠিুর আসর, এমনকি মেলায় ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, বলী খেলা ইত্যাদি বিনোদন ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান বসতো। তখন মেলা ছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব। মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা হতো। আর বিবাহিতা মেয়েরা নাইওর আসত বাপের বাড়ি। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই বৈশাখী মেলায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠত। শিশুদের খেলাধুলার জন্য ঘুড়ি, মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া ইত্যাদি বেঁচা-কেনা হতো। মেয়েদের হাতের চুড়ি, কানের দুল গলার হার ইত্যাদিও।

এ ছাড়া জুড়ি-বুন্দি, জিলাপি, রসগোল্লাসহ নানা ধরনের মিষ্টি ও মুখরোচক খাবারের সমারোহ ছিল বেশ চমৎকার।
একটা সময় কৃষকেরা চৈত্র মাসের শেষ দিনে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করে দিত। এরপর দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ ভূমির মালিকেরা তাদের প্রজা সাধারণের জন্য মিষ্ট্রান্ন দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখতেন। পরবর্তীতে তা ব্যবসায়িক পরিমলে ছড়িয়ে পড়ে। দোকানিরা সারা বছরের বাকির খাতা সমাপ্ত করার জন্য পয়লা বৈশাখের দিনে নতুন সাজে বসেন দোকানে। গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করিয়ে শুরু করেন নতুন বছরের ব্যবসার সূচনা। একটা সময় হালখাতার এ রেওয়াজ খুব দেখা গেলেও সময়ের পরিক্রমায় সেটি কমে এসেছে।

পয়লা বৈশাখ বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছে একটি উৎসবের দিন হিসেবে পরিগণিত। এ দিনটি উদ্যাপিত হোক আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে। বিশ্বায়নের বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্মকে হতে হবে শেকড়সন্ধানী। তরুণ-যুব ও শিক্ষার্থীদের মনে জাতীয় মূল্যবোধ সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চেতনা জাগ্রত হোক। যাবতীয় অপসংস্কৃতি প্রতিহত করতে, নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে। উচ্চকিত করতে হবে মানবিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাঙালি সংস্কৃতি। তাহলেই আমাদের বাঙালির ‘নববর্ষ’ উদ্যাপন সার্থক হবে।

এসময় মেলায় উপস্থিত ছিলেন, কচুয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খিষ্ট্রান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রাণধন দেব, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তুষ পোদ্দার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ফনী ভূষণ মজুমদার তাপু, বিকাশ সাহা, কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন পোদ্দার, মনসা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণয় চক্রবর্তী ও কড়ইয়া বটতলা কমিটির আহবায়ক মানিক মজুমদার সোহাগ প্রমূখ। পূজা অর্চনা করে পুরোহিত বিশ^জিৎ চক্রবর্তী ও প্রবীর চক্রবর্তী ।

ট্যাগস :

বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলে, জীবন ও জীবিকার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে : ডিসি মোহসীন উদ্দিন

কচুয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বৈশাখী মেলা

আপডেট সময় : ০১:৩৬:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল ২০২২

মোঃ রাছেল : বাংলাদেশে প্রতি বছর মহা ধুমধামে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। বৈশাখী উৎসবে থাকে প্রাণের ছোঁয়া, থাকে উচ্ছ্বাসের বাঁধভাঙা জোয়ার। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতা ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় বাঙালির নববর্ষ। শিশু-যুবা-বৃদ্ধসহ সব বয়সের সব শ্রেণি মানুষ এ দিনটি উদ্যাপন করে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রধান উপাদান। এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। কচুয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ১৫০ বছরের পুরানো ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা।

Model Hospital

ইংরেজ শাসনামল অবসানের পর কালক্রমে নববর্ষ উদ্যাপন উৎসবে পরিণত হয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও পরবর্তীকালের নানা ঘটনা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনকে প্রাণবন্ধ ও বিস্তুত করেছে। যদিও বর্তমান সময়ের নববর্ষ উদযাপনে পান্তাভাত ও ইলিশ ভাজাসহ মুখরোচক অনেক খাবারের সমারোহ ঘটলেও এতে প্রাণের স্পর্শ পাওয়া যায় না। ধনী ও বিলাসী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা হলেও দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অন্তরে প্রকৃত সুখ আসে না। আধুনিক যুগের শহরের মানুষের প্রাণহীন জমকালো বর্ষবরণের ডামাডোলে হারিয়ে যাচ্ছে নিবিড় পল্লি প্রীতিপূর্ণ ছোট ছোট উৎসবগুলো। উঠতি ধনীদের প্রভাব ও বড়োলোকি মনোভাবের কাছে বাঙালি কৃষকের সেই উৎসবেরও রূপ বদলে গেছে।

একটা সময় গ্রামগঞ্জে বৈশাখী মেলা বসত। সেসব মেলা এখন কমে গিয়েছে। কৃষিজ পণ্য, কুঠির শিল্প দ্রব্য, মৃৎ ও হস্তাশিল্প দ্রব্য, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম পড়ত সেসব মেলায়। মেলার সময় নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা, কুষ্ঠিুর আসর, এমনকি মেলায় ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, বলী খেলা ইত্যাদি বিনোদন ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান বসতো। তখন মেলা ছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব। মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা হতো। আর বিবাহিতা মেয়েরা নাইওর আসত বাপের বাড়ি। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই বৈশাখী মেলায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠত। শিশুদের খেলাধুলার জন্য ঘুড়ি, মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া ইত্যাদি বেঁচা-কেনা হতো। মেয়েদের হাতের চুড়ি, কানের দুল গলার হার ইত্যাদিও।

এ ছাড়া জুড়ি-বুন্দি, জিলাপি, রসগোল্লাসহ নানা ধরনের মিষ্টি ও মুখরোচক খাবারের সমারোহ ছিল বেশ চমৎকার।
একটা সময় কৃষকেরা চৈত্র মাসের শেষ দিনে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করে দিত। এরপর দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ ভূমির মালিকেরা তাদের প্রজা সাধারণের জন্য মিষ্ট্রান্ন দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখতেন। পরবর্তীতে তা ব্যবসায়িক পরিমলে ছড়িয়ে পড়ে। দোকানিরা সারা বছরের বাকির খাতা সমাপ্ত করার জন্য পয়লা বৈশাখের দিনে নতুন সাজে বসেন দোকানে। গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করিয়ে শুরু করেন নতুন বছরের ব্যবসার সূচনা। একটা সময় হালখাতার এ রেওয়াজ খুব দেখা গেলেও সময়ের পরিক্রমায় সেটি কমে এসেছে।

পয়লা বৈশাখ বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছে একটি উৎসবের দিন হিসেবে পরিগণিত। এ দিনটি উদ্যাপিত হোক আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে। বিশ্বায়নের বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্মকে হতে হবে শেকড়সন্ধানী। তরুণ-যুব ও শিক্ষার্থীদের মনে জাতীয় মূল্যবোধ সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চেতনা জাগ্রত হোক। যাবতীয় অপসংস্কৃতি প্রতিহত করতে, নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে। উচ্চকিত করতে হবে মানবিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাঙালি সংস্কৃতি। তাহলেই আমাদের বাঙালির ‘নববর্ষ’ উদ্যাপন সার্থক হবে।

এসময় মেলায় উপস্থিত ছিলেন, কচুয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খিষ্ট্রান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রাণধন দেব, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তুষ পোদ্দার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ফনী ভূষণ মজুমদার তাপু, বিকাশ সাহা, কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন পোদ্দার, মনসা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণয় চক্রবর্তী ও কড়ইয়া বটতলা কমিটির আহবায়ক মানিক মজুমদার সোহাগ প্রমূখ। পূজা অর্চনা করে পুরোহিত বিশ^জিৎ চক্রবর্তী ও প্রবীর চক্রবর্তী ।