বিশেষ প্রতিনিধি : শনিবার ‘মৃত চিকিৎসকের সাথে তিন ভুয়া চিকিৎসক মিলে করছেন দাঁতের চিকিৎসা’ – শিরোনামে দৈনিক চাঁদপুর খবর সহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন করার পর সোমবার হাজীগঞ্জ বাজারের মর্ডাণ ডেন্টাল কেয়ারকে সিলগালা করে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার দুপুরে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ তদন্ত কাজে মর্ডাণ ডেন্টাল কেয়ারের চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি ভুয়া চিকিৎসক তাহমিনা আলী। ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রতিষ্ঠানের মালিক তাহমিনা আলীকে প্রতারণার দায়ে বিশ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির সকল প্রকার কাগজপত্র বৈধ করার আগ পর্যন্ত বন্ধ রাখতে দুইটি তালা ঝুলিয়ে দেয় ভ্রাম্যমান আদালত।
হাজীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মেহেদী হাছান মানিক দৈনিক চাঁদপুর খবরকে জানান, ডা. মাহবুব আলী নামে কেউ এখানে আসেন না। চিকিৎসা সেবাও দিচ্ছেন না। ডা. তাহমিনা আলীর হোমিও চিকিৎসার কিছু কাগজপত্র দেখাতে পারলেও দেখাতে পারেনি ডেন্টালের কোন বৈধ কাগজপত্র। এছাড়া তার স্বামী দেড় বছর আগে মারা গেলেও এখনও প্রেসক্রিপশন দেয়া হয় তার নামে।
আগের সংবাদটি পড়ুন… হাজীগঞ্জে দেড় বছর মৃত ডাক্তারের সাথে চিকিৎসা দিচ্ছেন তিন ভুয়া ডাক্তার
ওইসময় উপস্থিত ছিলেন হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম মাওলা, মেডিকেল অফিসার ওমর ফারুক, উপজেলা সেনেটারী ইন্সপেক্টর সামছুল ইসলাম রমিজ ও উপ-পরিদর্শক আজিজ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ৯ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সরজমিনে চাঁদপুর-রায়পুর মহাসড়কের উত্তর পাশে হাজীগঞ্জ বাজারের লক্ষ্মী নারায়ন মার্কেটস্থ এই দন্ত্য চিকিৎসালয়ে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই দেখা যায় মৃত চিকিৎসকের ছেলে মেহেদী হাসান বিপ্লব এক রোগীর দাঁতের সার্জারি করছেন। যিনি একটি দন্ত্য চিকিৎসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র বলে জানান। অথচ এই ডেন্টাল কেয়ারের সাইনবোর্ড কিংবা প্রেসক্রিপশনে নেই তার নাম। সাইনবোর্ডে যে তিনজন ডাক্তারের নাম রয়েছে তারা হলেন, ডা. মোহাম্মদ আলী, ডা. মাহবুব আলম ও ডা. তাহমিনা আলী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার তাহমিনা আলী জানান, সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশনে নাম থাকা ডা. মোহাম্মদ আলী তার স্বামী। যিনি দেড় বছর আগে মারা গেছেন। আর অধ্যাপক ডা. মাহবুব আলম ঢাকা থেকে এসে রোগী দেখেন। তবে নিজের রাষ্ট্রিয় চিকিৎসা অনুসদ কিংবা বিএমডিসির সনদ না থাকা এবং তার নামের আগে ডাক্তার লেখা ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। এছাড়া তার শিক্ষানবিশ ছেলের রোগী দেখাও বৈধ নয় বলে স্বীকার করেন।
ডাক্তার তাহমিনা আলী বলেন, হাজীগঞ্জে এমন বহু ভুয়া ডাক্তার আছেন। বিশেষ করে যারা ডেন্টাল ক্লিনিক দিয়ে চেম্বার করছেন তাদের অনেকের বৈধ কোন কোন সার্টিফিকেট নেই। প্রশাসন তদন্ত করে দেখলে সেটির প্রমান পাবেন।
মডার্ন ডেন্টাল কেয়ারে চিকিৎসা নিতে আসা উপস্থিত বেশ কয়েকজন রোগী সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা ডাক্তার মাহবুবুল আলমকে দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই বলা হয় ডাক্তার ঢাকা আছেন পরবর্তীতে তিনি দেখবেন। যে ডাক্তার নেই এবং যে ডাক্তার মারা গেছেন তার নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এবং প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করাটা অন্যায়। তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করছে।
এ বিষয়ে কথা হলে ডাক্তার মাহবুব আলম বলেন, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে মর্ডান ডেন্টাল কেয়ারে সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড এবং প্রেসক্রিপশনে আমার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি কখনোই চাঁদপুরের মর্ডান ডেন্টাল কেয়ারে বসিনি। আমার নাম ভাঙিয়ে ডা. তাহমিনা আলী তার ছেলেকে দিয়ে দন্ত্য চিকিৎসা দিচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অন্যায় কাজ। তারা আমার নাম ভাঙিয়ে এটি কখনোই করতে পারে না। আর ডাক্তার তাহমিনা আলী এবং তার ছেলের চিকিৎসা সেবা দেয়ার বৈধ কোন সনদপত্র নেই।