মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি : উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট এমন প্রবাদ থাকলেও বাহিরে সদর ঘাট ভিতর ফিটফাট রয়েছে হাইমচর উপজেলার আলগী দূর্গাপুর দক্ষিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি। নরমাল ডেলিভারি ও গর্ভবতী নারীদের আপন ঠিকানা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। বাহির থেকে দেখলে দেখা যায় পুরনো জরাজীর্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি’ সেবার দিক থেকে ভিতরটা একবারেই অন্যরকম। গ্রাম অঞ্চলে বিনা খরচে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া সাধারণ মানুষের অনেক বড় পাওয়া। সাধারণ পরিবারের কষ্ট লাগবে কাজ করে যাচ্ছে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। যা প্রশংসার দাবীদার বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা জায়, উপজেলা সদর আলগী বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গন্ডামারা এলাকায় জরাজীর্ন আলগী দূর্গাপুর দক্ষিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি। প্রসূতি সেবা দানে এ কেন্দ্রটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। হাইমচর উপজেলাসহ ফরিদগঞ্জ, রায়পুর ও আশেপাশের গর্ভবতী ও প্রসূতিদের কাছে নিরাপদ সন্তান প্রসবের আস্থা হয়ে উঠেছে এ কেন্দ্রটি।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য দিন-রাত ২৪ ঘন্টা খোলা থকে। বিনা খরচে সন্তান প্রসব শেষে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যান মায়েরা। যার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশসহ পাশ্ববর্তী এলাকাতেও। গত মাসে ৩৭জন নরমাল ডেলিভারি মাধ্যমে এক বছরে প্রায় ৪৫০ জন প্রসূতি মা নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছেন। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে থেকে ডেলিভারি রোগী চাঁদপুর রেপার করা রোগীও এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারি এবং সিজারের পরামর্শ দেয়া রোগীরও নরমাল ডেভিভারি হওয়ার সুনাম রয়েছে ।
গত জানুয়ারি মাসে এ কেন্দ্র থেকে ২জন গর্ভবতী নারীকে অন্যত্র রেপার করা হয়। ১৫৪ জন গর্ভবতী নারীকে গর্ভকালীন সেবা দেয়া হয়। সন্তান প্রসবের পর গত মাসে ৮২জন মা’কে সেবা প্রদান করা হয়েছে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। এ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রমে গত জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এস এসি এমও বিনু রানী প্রসূতি সেবা দানে ও নিরাপদ প্রসবের জন্য জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট সম্মামনা পান।
চরপোড়া মুখি গ্রামের মাজেদা বেগম জানান, তার ভাশুরের মেয়েকে নিয়ে চাঁদপুর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসক তাকে সিজার করতে হবে জানান। তার ভাশুরের মেয়ে সিজার হতে না চাওয়ায় তাকে এ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। বিনু রানীর মাধ্যমে বিনা অপারেশনে ৪ কেজি ওজনের একটি কন্যা সন্তান ভ’মিষ্ট হয়। তিনি বলেন, প্রসবের পরবর্তী সেবাও তারা এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে নেন। তার ভাশুরের মেয়ে ও সন্তান এখন সুস্থ্য রয়েছেন। পশ্চিমচর কৃষ্ণপুর গ্রামের লাকী বেগম জানান, আমার বোন আমার বাড়িতে বেড়াতে আসলে তার প্রসববেদনা হয়। প্রথমে তাকে হাইমচর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তারা চাঁদপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। লোকের মুখে আলগী দক্ষিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংবাদ জেনে সেখানে নিয়ে যাই। সেখানে আমার বোনের নরমাল ডেলিভারিতে একটি কন্যা সন্তান হয়। তিনি বলেন, নিরাপদে বোনের সন্তান প্রসব হয়েছে, অন্য দিকে খরচ কম হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সেবা অনেক ভাল।
আলগী দক্ষিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এস এসি এমও বিনু রানী বলেন, এখনকার স্থানীয় লোকজন ও আমার সহকর্মীদের সহযোগীতায় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসূতি নারীদের নরমাল ডেলিভারি করে আসছি। এ পর্যন্ত আমরা নরমাল ডেলিভারি করতে গিয়ে তেমন কোন জটিল সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়নি।
আমি প্রসূতি মা’দের সেবা প্রদানের লক্ষে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। প্রসূতি মা’দের সেবা দেয়ার জন্য আমি ২৪ ঘন্টাই সজাগ থাকি। তিনি বলেন, আমাদের এ কেন্দ্রে কোন মাসে ৪০জন কোন মাসে ৩৭জন আবার কোন মাসে ৩৫জন গর্ভবতী মা’দের নরমাল ডেলিভারি করে থাকি। এজন্যই আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গত ১৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।