রোটাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় ::
মানুষ মানুষের জন্যে ভাই
মানবতা, মানবপ্রেম সবার মাঝেই চাই।
ভালোবাসো ধনী গরিব উজাড় করে হৃদয়
কবি বলেছেন, এই মানুষেই মসজিদ -মন্দির হয়।
কেন মিছে মারামারি, কেন রক্ত বন্যা
তারাও তো কারো ভাই, পুত্র-মাতা- কন্যা
মানুষ, সে তো মানুষ এর চেয়ে বড় নাই পরিচয়
মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, হিংসা -বিদ্বেষ করে ক্ষয়।
মানুষ তুমি এসেছো একা, আবার যাবে চলে একা
দুই দিনের দুনিয়ায় তাহলে কিসের এতো অহংকার
ছাড়ো সব, ভাবো মানুষের কথা
মানুষের কষ্টে কাঁদি, মানুষের আনন্দে হাসি
মানুষকে ভালোবাসি ভাই, মানুষ ভালোবাসি।
প্রিয় পাঠক আমার লেখা এই কবিতাটি কেমন হয়েছে বা আপনাদের কাছে কেমন লাগবে তাও জানিনা, তবে আমার কবিতাটি একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন তিনি হলেন চাঁদপুর হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট প্রয়াত মাহবুবুল আলম চুন্নু ভাই।
আজ তিনি নেই রয়েছে নানান স্মৃতি সমাহার যা বলে বা লিখে শেষ করা যাবেনা, আমার লেখার উদ্দেশ্যই তিনি আমার সাথে স্বল্প সময়ের কিছু গল্প কথা।
পেছনের দিকে ফিরে যাই – ১৯৯৬ সাল উনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে, আমি তখন শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী যুব ও মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন এর নাট্য কর্মীদের নিয়ে ছোট একটা নাটিকা পরিবেশন করেছি সাস্থ্যসেবার উপরে। অনুষ্ঠান শেষে বললেন আমাদের সংগঠনের সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন আর বললেন হৃদয় তুমি পারবে, এগিয়ে যাও দোয়া রহিলো।
এরপর থেকে দীর্ঘ বছর উনার সাথে আমার দেখা হয়নি ২০০২ সালে শাহরাস্তি মেহের কালিবাড়ি কৃষি ব্যাংকে গেলাম আমার আব্বার সাথে ব্যাংকে ঢুকতেই চুন্নু ভাই আমায় ডাকলেন বললেন অনেক দিন দেখা নেই, আমি বল্লাম আপনি এখানে? তিনি বললেন আমি কৃষি ব্যাংকে চাকুরি করি, আমার বাবা মরহুম আবদুল খালেক পাটোয়ারীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম, তিনি আমার বাবাকে কালিবাড়ি ছকিনা হোটেলে নিয়ে আপ্পায়ন করালেন, আব্বার সাথে চুন্নু ভাই বলতে লাগলেন আপনার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় খুব ভালো লিখে, ভালো অভিনয় করে, সংবাদ কর্মী হিসাবেও সে ভালো করবে।
তাকে কাজ গুলি করার সুযোগ দিয়েন ইত্যাদি। কথা শেষে চুন্নু ভাইয়ের থেকে বিদায় নিলাম।
কিছুদিন পর চুন্নু ভাইয়ের সাথে দেখা চাঁদপুর জোড়পুকুর পাড়ে অবস্থিত সাহিত্য একাডেমিতে, তিনিও এলেন হাজীগঞ্জ থেকে অনেক গল্প আড্ডা শেষে দুজন মিলে রাতে একি গাড়ি করে রওয়ানা হলাম তিনি একটি কথাই বলতেন জীবনে সততা, আন্তরিকতা, আদর্শবান মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলেই তুমি সফল।
সবাই শুধু সম্পদের পেছনে ছুটছে , চোখ দুটি বন্ধ হলে কেউ কারো নয়। তুমি ক্ষনিকের জীবনে যতটা ভালো করতে পারবে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবে তাই হবার প্রাপ্তি।
মানুষ হওয়া খুব সহজ তবে ভালো মানুষ হওয়া খুব কঠিন, ভালো মানুষ হলে টাকা থাকবেনা, তোমার ইচ্ছে কাউকে কিছু দিতে কিন্তু পারছোনা নেই বলে। তবুও যতটা সম্ভব মানুষের পাশে থাকার চেস্টা করতে হবে।
অনেকেই বাবার হাত ধরেই হাটতে শেখে, সাঁতার কাটে, অনেক কিছুই করে যখন ছেলে বড় অনেক বড় হয় তখন বাবা হয়ে যায় শিশু, সেইসময় সন্তান যার হাত ধরে চলেছে সে এসে যদি প্রশ্ন করে আপনি এখন বুড়ো হয়ে গেছেন, কি বুঝেন তাহলে তার কাছে কেমন লাগবে বল?
চুন্নু ভাই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কথা, সংবাদ কর্মী জীবন, সাংস্কৃতিক জীবন নিয়ে নানা গল্প করলেন। অবশেষে তিনি নেমে গেলেন হাজীগঞ্জ বাজারে আর আমি শাহরাস্তির পথে রওয়ানা।
হাজীগঞ্জ উপজেলা সাহিত্য, সাংস্কৃতিক পরিষদ আয়োজিত একুশে বই মেলা অনুষ্ঠানে আমায় আমন্ত্রণ জানালেন সেই অনুষ্ঠানে দেখা হয় – খালেকুজ্জামান শামীম, গাজী সালাউদ্দিন, মনিরুজ্জামান বাবলু সহ অনেকের সাথে দীর্ঘ আলাপন তারপর শুভেচ্ছা বক্তব্য এবং সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।
২০১৯ প্রবাসে থাকি বলে দেশে আর সময় দিতে পারিনি প্রবাসে চলে এলাম আবারও জীবনের তাগিদে।
২০২১ সালে আবার ছুটিতে দেশ যাই চুন্নু ভাই যানতে পেরে কল দিলেন, ছুটে গেলাম হাজীগঞ্জ বাজারে সেইদিন আর দেখা হয়নি উনার সাথে। দেখা হয়েছে হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত মজুমদার,
সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন, মহিউদ্দিন আল আজাদ, হাবিবউল্লাহ, মিরাজ মুন্সি এর সাথে।
আমার ছুটি প্রায় শেষের দিকে আবার প্রবাসে চলে আসতে হবে এরি মধ্যে হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি গাজী সালাউদ্দিন ভাই কল দিলেন আমি চলে যাবো শুনে ছুটে গেলাম হাজীগঞ্জ তৃপ্তি হোটেলে সঙ্গে আমার লেখা বই। হোটেলে ঢুকেই দেখি প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা কলামিস্ট চুন্নু ভাই, গাজী সালাউদ্দিন ভাই, রুজমন ভাই বসে আছে আমার জন্য।
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ শুভেচ্ছা বিনিময় টেবিলে চুন্নু ভাই বলতে লাগলেন হৃদয় তোমায় পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। আমার লেখা বই চুন্নু ভাই সহ সবাইকে শুভেচ্ছা উপহার দিলাম। বই পেয়ে তিনি বললেন অনেকেই দেশে বসেই লেখালেখি, সাংস্কৃতিক চর্চা কিছুই করেনা আর তুমি প্রবাসে বসেও থেমে নেই অসাধারণ তোমার চেস্টা, ইতিমধ্যে তুমি ৪ টি বই লিখেছো তোমাকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই।
একফাঁকে চুন্নু ভাই বললেন হাজীগঞ্জ একটি পাঠাগার হবার কথা যার উদ্যোগক্তা টিভি উপস্থাপক সাহাব উদ্দিন মজুমদার শুনলাম তুমিও সেই কাজে সহযোগিতা করছো আমি বললাম জি ভাই, তবে কাজটি কতদূর এগিয়েছে তা জানিনা। চায়ের চুমুকে গল্প শেষে বিদায় নিলাম।
যথারীতি আমি প্রবাসে চলে এলাম।
প্রবাসে আসার কিছু দিন মোবাইলে চুন্নু ভাইয়ের সাথে আলাপ হয়েছে। সব শেষ কথা হয় ১০ ডিসেম্বর ২০২১ রাতে।
১১ ডিসেম্বর আমার মেসেঞ্জারে চুন্নু ভাইয়ের দেয়া শুভেচ্ছা মেসেজ নিচে তুলে ধরলাম –
(প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও।
আশা করি কূশলে আছো।
তোমার বহুমাত্রিক ক্রিয়াকর্মে আমি যথেষ্ট খুশি এবং নিজ থেকে উৎসাহও বোধ করি। শুধু ভোগের মধ্যে মানব জীবনের স্বার্থকতা না খোঁজে যারা মানুষের মাঝে থেকে কাজ করতে চায়, আমার বিবেচনায় তুমি তাদের মধ্যে একজন।
তোমার জন্য শুভকামনা।)
এমন সাবলীল উৎসাহ মূলক লেখা লেখা চুন্নু ভাই দিবেনা। একদিন স্মৃতি বুকে নিয়ে আমিও যাবো চলে আপনার মতো করেই।
১৬ ডিসেম্বর রাতে আমার ফেইসবুক মেসেঞ্জারে গাজী সালাউদ্দিন ভাই মেসেজ দিলেন চুন্নু ভাই মারা গেছেন। খবরটি শুনে সত্যিই অবাক হয়ে অতিতের স্মৃতি মনে করতে লাগলাম, চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
ভাই নেই তাঁকে নিয়ে দুকলম লিখবো বা কি লিখবো তাই ভাবছিলাম। না লিখলেও মনকে মানাতে পারছিনা তাই প্রবাসে কাজের ফাঁকে সংক্ষেপে শুধু কিছু স্মৃতি সমাহার তুলে ধরেছি চুন্নু ভাইকে নিয়ে।ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
মনে রাখতে হবে ক্ষনিকের জীবনে কেউ বড় হতে গেলে আপনার প্রতিভা আর যোগ্যতা যতই থাকুক না কেন কারো না কারো মাধ্যমে সেই যোগ্যতা অর্জন এর সুযোগ মিলে। মাধ্যম ছাড়া সবাই বেকার, একে অন্যের পরিপুরক।
আজ চুন্নু ভাই নেই আছে উনার রেখে যাওয়া হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাব এখন উনাদের দায়িত্ব অতিতের স্মৃতি গুলি ধরে রাখা। দোয়া করি মহান আল্লাহ উনার সমস্থ গুনাহ মাপ করে চুন্নু ভাইকে জান্নাতবাসী দান করুন। বিশ্ব হোক করোনা মুক্ত – আমিন।
লেখক পরিচিতি – সাংবাদিক, লেখক , নাট্যকার
আজীবন সদস্য চাঁদপুর প্রেসক্লাব
সন্মানিত সদস্য শাহরাস্তি প্রেসক্লাব
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি – অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী যুব ও মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন, শাহরাস্তি, চাঁদপুর।