শাহরাস্তিতে এক বয়োজ্যেষ্ঠ শ্বশুরের মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় মেয়ের জামাতা খোরশেদ আলম শ্বশুরালয়ের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ রটিয়ে উল্টো বিষোদগার করার অভিযোগ উঠেছে । এমন অভিযোগ গণমাধ্যমের নিকট তুলে ধরেছেন উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউপির নরহ গ্রামের মৃত আব্দুস সোবানের পুত্র হাজী বদিউল আলম।

সোমবার তিনি শাহরাস্তি পৌর শহরের মেহের কালিবাড়ি শাহরাস্তি প্রেসক্লাব কার্যালয় সাংবাদিক সম্মেলনে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে তার আত্মজা নার্গিস আক্তারের পক্ষে ও জামাতা খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি খোরশেদ আলম পালিয়ে পরিবারের অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে, এবং আমার কন্যা নার্গিস ও আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানান কাল্পনিক অভিযোগ উপস্থাপন করছেন। যার প্রকৃত সত্য হলো, সে আমার কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে ও আত্মসাৎ করে নিজের অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন মাধ্যমে আশ্রয় নিয়ে প্রতিনিয়ত নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে মিথ্যাচার করছে ।
তিনি আরো বলেন, ২০০২ সালে আমি প্রবাসে কাতার থাকাকালীন আমার দ্বিতীয় কন্যা নারগিস আক্তারের সাথে প্রবাসী খোরশেদ আলমের ইসলামিক সরাশরীয়ত মতে বিয়ে হয়। সে উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউপির পাথৈর গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র। বিয়ের পর থেকে আমার জামাতা খোরশেদ বেকারত্ব দেখিয়ে শ্বশুরালয়ে (ঘরজামাই) থাকা শুরু করেন। ওই সময় পর্যায়ক্রমে তার চরিত্রের আসল রূপ যৌতুক নেওয়ার ফন্দি প্রকাশ পেতে থাকে। আমি তখন মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ট্রলি ট্রাক্টর , ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে গরুর খামার করে দেই । অতঃপর ১৮/২৪ মাসের মধ্যে সব ব্যবসায় লোকশান দেখিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করে খোরশেদ । তারপর সে নতুন ফন্দি এঁটে সৌদি আরব ও জাপানে আদম পাঠানোর (ভিসার ব্যবসা) কাজ চালুকরে। ওই সময় ভুয়া ও প্রতারনায় আদম ব্যবসায় অভিযুক্ত হয়ে সে ২ বার পুলিশ হেফাজতে যায় ।তখন লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে তাকে মুক্ত করি। পরে ওই ঝামেলা থেকে উদ্ধার করতে তাকে / খোরশেদকে ২০১৩ সালে কাতার নিয়ে যাই।
সে অদক্ষ শ্রমিক বিধায় তাকে ড্রাইভিং শিখিয়ে কাতারি অর্থে ৩৫ হাজার ডলারে একটি গাড়ি ক্রয় করে দেই। তখন সে অর্থ বিত্তের মুখ দেখে একটি মেয়েলী সংক্রান্ত অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে আমি শ্বশুর হিসেবে চরম অপমান অপদস্তের শিকার হই।পরে মেয়ে ও নাতনীদের কথা চিন্তা করে তাকে ওই পথ থেকে ফিরে আসার আহবান জানানোর পরও সে সংশোধন হয়নি।একপর্যায়ে ২০১৬ সালে আমার কাতারে চাকরির বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ায় আমি জামাতা খোরশেদকে সমুদয় ব্যবসা তার নিকট হস্তান্তর করে বাংলাদেশে চলে আসি।ওই ব্যবসা হস্তান্তরের চুক্তি ছিল, আয়ের ২ লক্ষ টাকার ৪৪ হাজার টাকা সে রেখে বাকি ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিবে।চুক্তি অনুযায়ী ৪/৫ মাস টাকা পাঠিয়ে, বিভিন্ন কথা হাজির করে পরবর্তীতে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী সময়ের ব্যবসার সকল অর্থ কড়ি জামাতা খোরশেদ ভোগ করে।

ওই হিসেবে তার সকল ব্যবসায় আমার বিনিয়োগ, হাওলাত, ব্যবসায়িক চুক্তির টাকাসহ কোটি টাকার অধিক পাওনা হই।ওই প্রাপ্য টাকার জন্য তাকে তাড়া দিলে সে আমার দ্বিতীয় মেয়ে খোরশেদ আলমের স্ত্রী নার্গিস আক্তার ও তার ২ মেয়ে নুসরাত জাহান সুইটি (২১) ও আইরিন সুলতানা সেঁজুতি (১৬) এর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।পরবর্তীতে তার সহযোগিতা ছাড়া ২০২০ সালে আমার বড় নাতনি নুসরাত জাহান সুইটির চাঁদপুর সদরের মহামায়া এলাকায় বিয়ে দেই।
এদিকে ২০২১ সালে খোরশেদ দেশে এসে আমার মেয়ে তার স্ত্রী নার্গিস আক্তার উপর নানান অভিযোগ তুলে নির্যাতন শুরু করে। এতে নার্গিস বাদী হয়ে স্বামী খোরশেদের বিরুদ্ধে শাহরাস্তি থানায় লিখিত অভিযোগ করে। পরে জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সহায়তায় বিষয়টি ওই যাত্রায় সূরাহা হয়। পরে আমি আমার পাওনা টাকার জন্য আবার তাকে চাপ দিলে সে আমার মেয়ে ও তার স্ত্রী নার্গিসের বিরুদ্ধে পরকীয়া সম্পর্কের অজুহাত তোলে। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ওই অভিযোগ হাজির করে আমার মেয়ের পরিবারকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ওই থেকে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে চলতি বছরের ৯ মে খোরশেদ দেশে এসে প্রথম স্ত্রী নার্গিসের অনুমতি না নিয়ে তাকে খোরশেদকে তালাক দিয়েছে মর্মে রটিয়ে উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিন ইউপির বিজয়পুর গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিষয়টি প্রকাশ হতে স্ত্রী নার্গিস আক্তার স্বামী খোরশেদের গ্রামের বাড়ি পাথৈরের বিল্ডিং এর তালা ভেঙ্গে সে ঘরে ওঠেন।
এই সংবাদ পেয়ে খোরশেদ আলম দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নির্বাসনে রয়েছে। এ বিষয়ে বদিউল আলম বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় ও চাঁদপুর কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি আরো বলেন আমার মেয়ে নার্গিস ও নাতনিরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এ বিষয়ে সমগ্র ঘটনায় গণমাধ্যমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শ্বশুর বদিউল আলম।