চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নে স্বামী একাধিক বিয়ে করার জেরে দুই শিশু কন্যা সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোঃ রহিমা বেগম (৩৩) নামে এক অসহায় নারী।
জানা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার নাজিরপাড়া এলাকার মৃত সুলতান গাজীর ছেলে কাইয়ুম গাজী একে একে তিনটি বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় সংসারে কাজল আক্তার নামে ১১ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরে তিনি ২০১৮ সালে তৃতীয় বিয়ে করে চাঁদপুর সদর উপজেলার ডাসদী মন্টু শেখের মেয় রহিমা বেগমকে নিয়ে আশিকাটি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে গাবতলীর একটি ভাড়া বাড়িতে উঠেন। বর্তমান এই সংসারে তার ২টি শিশু কন্যা সন্তান রয়েছে। কাইয়ুম গাজী পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান ও ব্যবসায়ী। তিনি তার তৃতীয় স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব না নেয়ায় রহিমা বেগম অন্যের বাড়িতে বাসাভাড়ার কাজ কাজ করে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন বলে জানিয়েছেন রহিমা বেগম।
অভিযোগের ভিত্তিতে রহিমা বেগম বলেন, আমার সাথে ২০১৮ সালে কাইয়ুম গাজীর বিয়ে হয়। এর আগে সে আরো দুইটি বিয়ে করেন এবং দ্বিতীয় সংসারে তার একটি মেয়েও আছেন। বিয়ের পরে আমাকে নিয়ে আশিকাটি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ আশিকাটি গ্রামের গাবতলী এলকায় আলম খানের বাড়িতে উঠে। পরবর্তীতে আমার স্বামী তেমন কোন কর্ম না করায় তার ৩ মেয়ে ও আমরা ২জনসহ ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কোন উপায় না পেয়ে আমি নিজেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। কাইয়ুম গাজী ঠিকমত কাজ করলে আর আমাদের সংসার এভাবে চলতো না। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, অনেক সময় আগের দিনের পঁচা ভাতও খেয়ে জীবন পার করছি। স্বামীর এমন কর্মকান্ডে আমার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবো।
এক প্রশ্নের জবাবে রহিমা বেগম আরো বলেন, গত ২ বছরের মতো বাসা ভাড়া দিতে পারি নাই আমরা। বাড়ির মালিক তাকে এ নিয়ে কয়েকবার চাপ প্রয়োগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেননি আমার স্বামী। তবে আমি চলতি এক বছরের ভাড়া আস্তে আস্তে পরিশোধ করে ফেলবো। আমার স্বামী বাসা ভাড়া না দিয়ে উল্টো বাড়ির মালিক সহ আরো কয়েকজন ভাড়াটিয়াদের আমাকে নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার করেছে।
অথচ বাড়ির মালিক আমাকে বড় বোন ভাবির মত জানে এবং আশেপাশের ভাড়াটিয়ারা আমাকে বোনের সবাই দেখে। আমিও তাদের সবাইকে ভাই বোনের দৃষ্টিতে দেখি। তাহলে আমার নামে এমন মিথ্যা তথ্য রটানোর কারন কি? পাশে তো আরো ভাড়াটিয়া আছেন। যদি এমন কোন কর্মকাণ্ড হতো, তাহলে তো ওনারাই দেখতেন। আর যে মেয়েকে নিয়ে উনি দোকানে থাকেন সে আসলে আমার সন্তান না, তাকে আমি মায়ের আদরে রাখতাম। কিন্তু মেয়েটি অত সুবিধাজনক না। বরং আমাকে নিয়ে মানুষের কাছে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে এলাকায় কয়েকজন জানান, কাইয়ুম গাজী আসলেই একজন ভিন্ন রকমের মানুষ। একে একে তিনটি বিয়ে করে এখন তৃতীয় স্ত্রীর নামেও মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। উনি ঠিকমত কোন কাজ কর্ম না করায় সংসারে এমন অশান্তি। এমনকি মানুষের নামে মিথ্যা মামলাও দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে দক্ষিণ আশিকাটি গাবতলী এলাকার সফিকুল ইসলাম খানের ছেলে উক্ত ভাড়া বাড়ির মালিক আলম খান বলেন, তারা স্বামী স্ত্রী কয়েকবছর যাবত আমার বাসায় ভাড়া থাকেন। ভাড়া প্রদানের জন্য কাইয়ুম গাজীকে আমি কয়েকবার বলার পরেও কোন কর্ণপাত করেন নি। দিবে দিবে বলে এতগুলো মাস অতিবাহিত হলে এবং দাম্পত্য জীবনে তারা সবসময় ঝগড়াঝাটি করে আসছে বিধায় তাদেরকে বাসা ছেড়ে দিতে বলি।
কাইয়ুম গাজীকে ভাড়ার টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তিনি তার দ্বিতীয় সংসারের মেয়েকে নিয়ে তার ব্যাবসায়িক দোকানেই অবস্থান নেন টাকা প্রদানের চাপে। এছাড়াও তার স্ত্রীর সাথে নাকি আমার পরকিয়া সম্পর্ক আছে বলে বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রচার করছে। এটা আসলেই সত্য নয়। এ নিয়ে তার সাথে কয়েকবার বাকবিতন্ডা হলে তিনি আমার বিরুদ্ধে চাঁদপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত আমার বিরুদ্ধে দেয়া তথ্যগুলো সত্য নয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মৃত সুলতান গাজীর ছেলে কাইয়ুম গাজীর সাথে বুধবার দুপুরে একাধিকবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি কলটি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।