ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এলপিজির মূল্যবৃদ্ধিতে রান্নায় জ্বালানি সংকট, বিপাকে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মানুষ

মনিরুল ইসলাম মনির: দেশে তরলীকৃত পেট্টোলিয়াম (এলপিজি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে মতলব উত্তরে রাতারাতি বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডার ও লাকড়ির দাম। ফলে জ্বালানি সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য এক হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

Model Hospital

হঠাৎ এ মূল্যবৃদ্ধির ফলে চরফ্যাশন উপজেলার হাটবাজারে এলপিজি গ্যাসের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে চড়া দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া বাজারে লাকড়ি ব্যবসায়ীরাও গাছের গুঁড়ি ও শুকনো লাকড়ির মণ ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন বলেও জানা গেছে। হঠাৎ করে রান্নায় জ্বালানির খরচ বাড়ায় উভয় সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মানুষ।

গ্যাস সিলিন্ডার ক্রেতা সাদ্দাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছিলাম গ্যাস সিলিন্ডার নেয়ার জন্য। কিন্তু দোকানিরা ১৭০০ টাকার নিচে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে না। একই অভিযোগ করেন ক্রেতা দৌলত হোসেন। তিনি বলেন, বাজারে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন আমাদের মতো দরিদ্র ক্রেতাদের চোখ রাঙানি দিচ্ছে। তারা ধমক দেয়া শিখে গেছে। একটু মূলামুলি করলেই বলছেন, বিরক্ত করবেন না, ১৭০০ টাকায় নিলে নেন না নিলে যান। রাধুনি জেসমিন বেগম বলেন, বাজারে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়ায় কাঠকুটো বা গাছের লাকড়ি ক্রয় করতে বাজারে এসেছি। লাকড়ির দামও বেশি নিচ্ছে। ২০০ টাকার লাকড়ি ৩০০ টাকায় কিনেছি। আমি দীর্ঘদিন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছি। এখন পুরনো মাটির চুলাতেই রান্না করব।

বাজারের লাকড়ি ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বলেন, বেপারিরা গাছের গুঁড়ির দাম বাড়িয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিক মজুরিও বেড়ে যাওয়ায় লাকড়ির দামও বেড়েছে। গ্যাস ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, কোম্পানির কাছ থেকে তারা গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছে না। ফলে বাজারে এলপিজি গ্যাস সংকটে রয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে পরিমিত গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে রান্নায় ব্যবহৃত এ গ্যাসের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। জেলা ভোক্তা অধিকারের নজরদারি না থাকায় সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী। রান্নায় ব্যবহৃত এ গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল রেস্তোরাঁয়ও খাবারের দাম আরেক ধাপ বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

গ্যাস সিলিন্ডারের বিক্রেতা আবু ইউসুফ বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে দুদিন ধরে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। এ মাসে আমরা পাইকারিভাবেই অতিরিক্ত দাম দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে। তাই আমরাও কিছুটা দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করছি। এতে ক্রেতাদের সঙ্গে ঝগড়া পর্যন্ত হচ্ছে। তাই দাম কমানোই ভালো।
নাম প্রকাশ না করার সর্ত্বে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার বলেন, এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী সারাদেশে ৩০টি কোম্পানি রয়েছে। প্রত্যেকটি কোম্পানিই আলাদা আলাদা করে সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি করেছে। কারণ এর কাঁচামাল আনতে হয় বাইরের দেশ থেকে। কাঁচামাল কিনে আনতেই কিছুটা বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। তাই আমরাও দাম বাড়িয়েছি।

সরকারি রেট ও কোম্পানির রেটের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ১২ কেজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৪৯৮ করে বিক্রি করি। এখন খুচরা বিক্রেতারা কত টাকায় বিক্রি করেন, সেটা আমরা জানি না। তবে পরিবহন খরচসহ কিছুটা বাড়ায় দাম বেশি নিতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হাসান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে শিগগিরই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তিতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত-২

এলপিজির মূল্যবৃদ্ধিতে রান্নায় জ্বালানি সংকট, বিপাকে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মানুষ

আপডেট সময় : ০৫:০৪:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মনিরুল ইসলাম মনির: দেশে তরলীকৃত পেট্টোলিয়াম (এলপিজি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে মতলব উত্তরে রাতারাতি বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডার ও লাকড়ির দাম। ফলে জ্বালানি সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য এক হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

Model Hospital

হঠাৎ এ মূল্যবৃদ্ধির ফলে চরফ্যাশন উপজেলার হাটবাজারে এলপিজি গ্যাসের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে চড়া দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া বাজারে লাকড়ি ব্যবসায়ীরাও গাছের গুঁড়ি ও শুকনো লাকড়ির মণ ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন বলেও জানা গেছে। হঠাৎ করে রান্নায় জ্বালানির খরচ বাড়ায় উভয় সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মানুষ।

গ্যাস সিলিন্ডার ক্রেতা সাদ্দাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছিলাম গ্যাস সিলিন্ডার নেয়ার জন্য। কিন্তু দোকানিরা ১৭০০ টাকার নিচে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে না। একই অভিযোগ করেন ক্রেতা দৌলত হোসেন। তিনি বলেন, বাজারে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন আমাদের মতো দরিদ্র ক্রেতাদের চোখ রাঙানি দিচ্ছে। তারা ধমক দেয়া শিখে গেছে। একটু মূলামুলি করলেই বলছেন, বিরক্ত করবেন না, ১৭০০ টাকায় নিলে নেন না নিলে যান। রাধুনি জেসমিন বেগম বলেন, বাজারে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়ায় কাঠকুটো বা গাছের লাকড়ি ক্রয় করতে বাজারে এসেছি। লাকড়ির দামও বেশি নিচ্ছে। ২০০ টাকার লাকড়ি ৩০০ টাকায় কিনেছি। আমি দীর্ঘদিন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছি। এখন পুরনো মাটির চুলাতেই রান্না করব।

বাজারের লাকড়ি ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বলেন, বেপারিরা গাছের গুঁড়ির দাম বাড়িয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিক মজুরিও বেড়ে যাওয়ায় লাকড়ির দামও বেড়েছে। গ্যাস ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, কোম্পানির কাছ থেকে তারা গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছে না। ফলে বাজারে এলপিজি গ্যাস সংকটে রয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে পরিমিত গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে রান্নায় ব্যবহৃত এ গ্যাসের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। জেলা ভোক্তা অধিকারের নজরদারি না থাকায় সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী। রান্নায় ব্যবহৃত এ গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল রেস্তোরাঁয়ও খাবারের দাম আরেক ধাপ বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

গ্যাস সিলিন্ডারের বিক্রেতা আবু ইউসুফ বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে দুদিন ধরে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। এ মাসে আমরা পাইকারিভাবেই অতিরিক্ত দাম দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে। তাই আমরাও কিছুটা দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করছি। এতে ক্রেতাদের সঙ্গে ঝগড়া পর্যন্ত হচ্ছে। তাই দাম কমানোই ভালো।
নাম প্রকাশ না করার সর্ত্বে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার বলেন, এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী সারাদেশে ৩০টি কোম্পানি রয়েছে। প্রত্যেকটি কোম্পানিই আলাদা আলাদা করে সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি করেছে। কারণ এর কাঁচামাল আনতে হয় বাইরের দেশ থেকে। কাঁচামাল কিনে আনতেই কিছুটা বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। তাই আমরাও দাম বাড়িয়েছি।

সরকারি রেট ও কোম্পানির রেটের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ১২ কেজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৪৯৮ করে বিক্রি করি। এখন খুচরা বিক্রেতারা কত টাকায় বিক্রি করেন, সেটা আমরা জানি না। তবে পরিবহন খরচসহ কিছুটা বাড়ায় দাম বেশি নিতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হাসান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে শিগগিরই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।