ঢাকা ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পদ নিয়ে সন্তানদের ঝগড়া: দুই দিন পর বাবার দাফন

চাকরি থেকে অবসরের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে বাড়ির সড়কে বাবার লাশ ফেলে রাখেন সন্তানেরা। মৃত্যুর দুই দিন পর আজ সোমবার সকাল ১০টায় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মনির আহমদ (৬৫) নামে পদ্মা অয়েল কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তার মরদেহ। তবে দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন না তিন মেয়ের কেউই।

Model Hospital

গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনির আহমদ। এরপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ এনে রেখে দেওয়া হয় বাড়ির পাশের সড়কে। এরপর অবসরে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।

ঘটনাটি কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়িতে ঘটে। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন মনির আহমদের মরদেহ দাফনের তাগাদা দেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মনির আহমদের সংসারে স্ত্রী,২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ৫০ লাখ টাকা পেনশন পান। সেই টাকা ব্যাংকে তাঁর নামের অ্যাকাউন্টেই ছিল।

স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম (৫৫) ও বড় ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, মনিরের মেয়ে বেবি আকতার বাবাকে থেরাপি দেওয়ার কথা বলে চাতরী চৌমুহনী শাখার এবি ব্যাংকে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় আজ মরদেহ দাফন করা হয়। এ সময় স্ত্রী ও বড় ছেলে উপস্থিত ছিলেন। তবে ছোট ছেলে মো. আলমগীর সৌদি আরবে থাকায় আসতে পারেননি। তিন মেয়ের কেউই মরদেহ দাফনের সময় ছিলেন না। গতকাল রাতেই তাঁরা শ্বশুরবাড়ি চলে গেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়ে লিপি আকতার অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে মরদেহ বাড়ি নেওয়ার পর থেকে ভাই জাহাঙ্গীর আলম তাঁদের তিন বোনকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন। এ কারণে বিকেলে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যান। গতকাল রোববার রাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় অপর দুই বোন উদ্ধার হওয়ার পর তাঁরাও শ্বশুরবাড়ি চলে যান। আর বাবার দাফনের নির্ধারিত সময় না জানার কারণে তিনি ওই সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি।

স্থানীয় বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘সত্যি দুঃখজনক ঘটনা আমার ইউনিয়নের মধ্যে। এ ঘটনায় আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। মনির আহমদের অসুস্থতার কারণে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে যে টাকা আছে সেগুলো সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে। সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আজ সকালে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘গতকাল বাবার অবসরের টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধের জেরে দুই বোনকে আটকে মারধরের বিষয়টি জানানোর পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আমি ইউপি সদস্যকে পাঠাই এবং দুই মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া মরদেহ বহনের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ১৭ হাজার ৫০০ টাকা আমি নিজ থেকে দিয়ে দিয়েছি।’

টাকার অংশীদারের বিষয়ে জানতে চাইলে এবি ব্যাংক চাতরী চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে নিয়ম মেনে লেনদেন করেছেন প্রয়াত মনির আহমদ। এ ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো হেরফের ঘটেনি।’

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মৃতের স্বজনদের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে আজ সকালে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

নিখোঁজ ইউসুফ সজীবের সন্ধান চায় পরিবার

সম্পদ নিয়ে সন্তানদের ঝগড়া: দুই দিন পর বাবার দাফন

আপডেট সময় : ০২:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

চাকরি থেকে অবসরের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে বাড়ির সড়কে বাবার লাশ ফেলে রাখেন সন্তানেরা। মৃত্যুর দুই দিন পর আজ সোমবার সকাল ১০টায় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মনির আহমদ (৬৫) নামে পদ্মা অয়েল কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তার মরদেহ। তবে দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন না তিন মেয়ের কেউই।

Model Hospital

গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনির আহমদ। এরপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ এনে রেখে দেওয়া হয় বাড়ির পাশের সড়কে। এরপর অবসরে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।

ঘটনাটি কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়িতে ঘটে। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন মনির আহমদের মরদেহ দাফনের তাগাদা দেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মনির আহমদের সংসারে স্ত্রী,২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ৫০ লাখ টাকা পেনশন পান। সেই টাকা ব্যাংকে তাঁর নামের অ্যাকাউন্টেই ছিল।

স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম (৫৫) ও বড় ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, মনিরের মেয়ে বেবি আকতার বাবাকে থেরাপি দেওয়ার কথা বলে চাতরী চৌমুহনী শাখার এবি ব্যাংকে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় আজ মরদেহ দাফন করা হয়। এ সময় স্ত্রী ও বড় ছেলে উপস্থিত ছিলেন। তবে ছোট ছেলে মো. আলমগীর সৌদি আরবে থাকায় আসতে পারেননি। তিন মেয়ের কেউই মরদেহ দাফনের সময় ছিলেন না। গতকাল রাতেই তাঁরা শ্বশুরবাড়ি চলে গেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়ে লিপি আকতার অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে মরদেহ বাড়ি নেওয়ার পর থেকে ভাই জাহাঙ্গীর আলম তাঁদের তিন বোনকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন। এ কারণে বিকেলে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যান। গতকাল রোববার রাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় অপর দুই বোন উদ্ধার হওয়ার পর তাঁরাও শ্বশুরবাড়ি চলে যান। আর বাবার দাফনের নির্ধারিত সময় না জানার কারণে তিনি ওই সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি।

স্থানীয় বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘সত্যি দুঃখজনক ঘটনা আমার ইউনিয়নের মধ্যে। এ ঘটনায় আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। মনির আহমদের অসুস্থতার কারণে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে যে টাকা আছে সেগুলো সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে। সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আজ সকালে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘গতকাল বাবার অবসরের টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধের জেরে দুই বোনকে আটকে মারধরের বিষয়টি জানানোর পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আমি ইউপি সদস্যকে পাঠাই এবং দুই মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া মরদেহ বহনের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ১৭ হাজার ৫০০ টাকা আমি নিজ থেকে দিয়ে দিয়েছি।’

টাকার অংশীদারের বিষয়ে জানতে চাইলে এবি ব্যাংক চাতরী চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে নিয়ম মেনে লেনদেন করেছেন প্রয়াত মনির আহমদ। এ ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো হেরফের ঘটেনি।’

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মৃতের স্বজনদের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে আজ সকালে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।’