ঢাকা ১২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরিদগঞ্জে টাকার বিনিময়ে নকল সরবরাহ করছে শিক্ষকরা!

এস এম ইকবাল : ফরিদগঞ্জ রুপসা আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টাকার বিনিময়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নকল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক অবস্থানুসারে শিক্ষার্থী প্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকার বিপরীতে শিক্ষকরা বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় হল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু রূপসা কেন্দ্রেই নয়, গোটা উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রের প্রায় একই চিত্র।

Model Hospital

সমর দাশ। পেশায় একজন শিক্ষক। শিক্ষক বাতায়ন গ্রুপে আমিনুল হক নামক এক শিক্ষকের একটা পোস্টের কমেন্ট বক্সে তিনি লিখেন, “আপনার ভাষ্য যথাযথ। আমি ইংরেজি শিক্ষক। আমি এমন দেখছি, হলে নকল প্রদান বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে। যে স্যার নকল দিত সে কি পরিমান প্রাইভেট পড়াতো তা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। নিরুপায় হয়ে, আমি শহরে পড়াতাম। তাদের অন্যায় সহ্য না করতে পেরে চাকরি ছেড়ে অন্য স্থানে চলে আসছি। বর্তমান কর্মস্থলে ভালো আছি আগের তুলনায়। যে খারাপ তার শান্তি নাই।’

উক্ত শিক্ষকের মন্তব্য থেকে এই প্রতিনিধি বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে থাকেন। অবশেষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসে। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে আজকের এই প্রতিবেদন। জানা যায়, শিক্ষক সমর দাস কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কয়েক মাস আগে বিদায় হয়ে দালাল বাজার এন. কে হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার লেখার সূত্র ধরে শিক্ষার্থীদের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছে গেলে রূপসায় এস.এস.সি কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় এখানে আরো বেশ কিছু অনিয়মের কথাও উঠে আসে। নিয়ম হচ্ছে কেন্দ্রে যে প্রতিষ্ঠনের শিক্ষার্থী আছে সে প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। কিন্তু রূপসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত হল সুপার অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছেনে।

কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো.বাকী বিল্লাহকে রূপসা কেন্দ্রে রিজার্ভ কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু সে প্রয়োজন ছাড়াই প্রতিদিনই পরীক্ষার হলে ডিউটি দিয়ে আসছেন। একই প্রতিষ্ঠানের খন্ডকালিন শিক্ষক মো. কামাল প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে হলে গিয়ে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর বলে দিবেন এই মর্মে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন। আর এই দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি এবং তার সহযোগিরা এই অনৈতিক কাজটি করে আসছেন।
২৫ সেপ্টম্বর রবিবার রূপসা কেন্দ্রে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে হল সুপার রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরামুল হক প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করতে চাইলেও সহকারী হল সুপার শওকত বিএসসির জোরালো প্রতিবাদের মুখে পড়েন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন- কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাকী বিল্লাহ রির্জাভ কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে আছেন। তিনি গতকাল পর্যন্ত ডিউটি দিয়েছেন। আপনারা যে অভিযোগ নিয়ে আসছেন এটা অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে কঠিন ভূমিকা পালন করেছেন এবং বাকী বিল্লাহ এবং সমরেন্দ্র মিত্রকে বের করে দেন। সেই সাথে আমাদেরকে বলে দেন তারা যেন আর হলে প্রবেশ করতে না পারে। ২৪ সেপ্টেম্বর এই কেন্দ্রে মেজিস্ট্রেডও এসেছেন।

বিষয়টি নিয়ে কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্র মিত্র সাংবাদিকদের বলেন, রাখ-ঢাক করে আসলে লাভ নাই। ঘটনা সত্য, তবে আপনারা যতটুকু শুনেছেন ততটুকুও নয় আবার একেবারেই যে হয়নি তাও নয়।’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কে টাকা খায়না বলেন?’ এ সময় তিনি পাশে বসে থাকা বাকী বিল্লাহকে বলেন,‘উনারা ফরিদগঞ্জ থেকে দুপুরে আসছে। এখন খাবারের সময়। ওয়ান স্টারে খেলেতো অনেক টাকা লাগবে। তুমি উনাদেরকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেও।’ এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানই দেখেন, অন্যগুলো দেখেন না? সব কেন্দ্রে এবং প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম হয়। রুপসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষাচলাকালিন সময়ে গিয়ে দেখেন সাখাওয়াত, মনির ও মাকসুদুর রহমান রুবেল নামের তিন জন শিক্ষক বসে থাকে। তারা কীভাবে সেখানে থাকেন?

সাংবাদিকরা মূল অভিযুক্ত বাকী বিল্লার বক্তব্য নিতে গেলে প্রধান শিক্ষক বাধা দিয়ে বলেন, ‘উনার বলা লাগবে না। আমি প্রধান শিক্ষক হয়ে যে বলেছি তা চলবে না?

বিকালে বাকী বিল্লাহ সাংবাদিকদের সাথে দেখা করে বলেন, বিষয়টি মিথ্যা। যে আপনাদের তথ্য দিয়েছে সে ভুল তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘বিষয়টি খুবই নেক্কারজনক। সেই সাথে দুঃখজনকও। এটা চরম নৈতিক অবক্ষয়। আমরা তদন্ত করে অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুঠো ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি আমাকে তথ্যগুলো দেন, আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন,‘বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো এবং বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদগঞ্জে টাকার বিনিময়ে নকল সরবরাহ করছে শিক্ষকরা!

আপডেট সময় : ০৫:১৪:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

এস এম ইকবাল : ফরিদগঞ্জ রুপসা আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টাকার বিনিময়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নকল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক অবস্থানুসারে শিক্ষার্থী প্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকার বিপরীতে শিক্ষকরা বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় হল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু রূপসা কেন্দ্রেই নয়, গোটা উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রের প্রায় একই চিত্র।

Model Hospital

সমর দাশ। পেশায় একজন শিক্ষক। শিক্ষক বাতায়ন গ্রুপে আমিনুল হক নামক এক শিক্ষকের একটা পোস্টের কমেন্ট বক্সে তিনি লিখেন, “আপনার ভাষ্য যথাযথ। আমি ইংরেজি শিক্ষক। আমি এমন দেখছি, হলে নকল প্রদান বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে। যে স্যার নকল দিত সে কি পরিমান প্রাইভেট পড়াতো তা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। নিরুপায় হয়ে, আমি শহরে পড়াতাম। তাদের অন্যায় সহ্য না করতে পেরে চাকরি ছেড়ে অন্য স্থানে চলে আসছি। বর্তমান কর্মস্থলে ভালো আছি আগের তুলনায়। যে খারাপ তার শান্তি নাই।’

উক্ত শিক্ষকের মন্তব্য থেকে এই প্রতিনিধি বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে থাকেন। অবশেষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসে। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে আজকের এই প্রতিবেদন। জানা যায়, শিক্ষক সমর দাস কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কয়েক মাস আগে বিদায় হয়ে দালাল বাজার এন. কে হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার লেখার সূত্র ধরে শিক্ষার্থীদের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছে গেলে রূপসায় এস.এস.সি কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় এখানে আরো বেশ কিছু অনিয়মের কথাও উঠে আসে। নিয়ম হচ্ছে কেন্দ্রে যে প্রতিষ্ঠনের শিক্ষার্থী আছে সে প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। কিন্তু রূপসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত হল সুপার অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছেনে।

কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো.বাকী বিল্লাহকে রূপসা কেন্দ্রে রিজার্ভ কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু সে প্রয়োজন ছাড়াই প্রতিদিনই পরীক্ষার হলে ডিউটি দিয়ে আসছেন। একই প্রতিষ্ঠানের খন্ডকালিন শিক্ষক মো. কামাল প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে হলে গিয়ে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর বলে দিবেন এই মর্মে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন। আর এই দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি এবং তার সহযোগিরা এই অনৈতিক কাজটি করে আসছেন।
২৫ সেপ্টম্বর রবিবার রূপসা কেন্দ্রে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে হল সুপার রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরামুল হক প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করতে চাইলেও সহকারী হল সুপার শওকত বিএসসির জোরালো প্রতিবাদের মুখে পড়েন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন- কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাকী বিল্লাহ রির্জাভ কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে আছেন। তিনি গতকাল পর্যন্ত ডিউটি দিয়েছেন। আপনারা যে অভিযোগ নিয়ে আসছেন এটা অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে কঠিন ভূমিকা পালন করেছেন এবং বাকী বিল্লাহ এবং সমরেন্দ্র মিত্রকে বের করে দেন। সেই সাথে আমাদেরকে বলে দেন তারা যেন আর হলে প্রবেশ করতে না পারে। ২৪ সেপ্টেম্বর এই কেন্দ্রে মেজিস্ট্রেডও এসেছেন।

বিষয়টি নিয়ে কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্র মিত্র সাংবাদিকদের বলেন, রাখ-ঢাক করে আসলে লাভ নাই। ঘটনা সত্য, তবে আপনারা যতটুকু শুনেছেন ততটুকুও নয় আবার একেবারেই যে হয়নি তাও নয়।’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কে টাকা খায়না বলেন?’ এ সময় তিনি পাশে বসে থাকা বাকী বিল্লাহকে বলেন,‘উনারা ফরিদগঞ্জ থেকে দুপুরে আসছে। এখন খাবারের সময়। ওয়ান স্টারে খেলেতো অনেক টাকা লাগবে। তুমি উনাদেরকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেও।’ এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানই দেখেন, অন্যগুলো দেখেন না? সব কেন্দ্রে এবং প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম হয়। রুপসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষাচলাকালিন সময়ে গিয়ে দেখেন সাখাওয়াত, মনির ও মাকসুদুর রহমান রুবেল নামের তিন জন শিক্ষক বসে থাকে। তারা কীভাবে সেখানে থাকেন?

সাংবাদিকরা মূল অভিযুক্ত বাকী বিল্লার বক্তব্য নিতে গেলে প্রধান শিক্ষক বাধা দিয়ে বলেন, ‘উনার বলা লাগবে না। আমি প্রধান শিক্ষক হয়ে যে বলেছি তা চলবে না?

বিকালে বাকী বিল্লাহ সাংবাদিকদের সাথে দেখা করে বলেন, বিষয়টি মিথ্যা। যে আপনাদের তথ্য দিয়েছে সে ভুল তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘বিষয়টি খুবই নেক্কারজনক। সেই সাথে দুঃখজনকও। এটা চরম নৈতিক অবক্ষয়। আমরা তদন্ত করে অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুঠো ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি আমাকে তথ্যগুলো দেন, আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন,‘বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো এবং বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’