নিজস্ব প্রতিনিধি : ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে সুবিধাবঞ্চিতদের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুন-তরুনী মিলে গড়ে তোলেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুশিক্ষা ও সামাজিক সংগঠন ‘প্রজ্জ্বলন ‘। সমাজের অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানো তাদের বিভিন্ন সমস্যায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই প্রজ্জ্বলনের উদ্দেশ্য।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন ধরণের মানবসেবামূলক সংগঠন থাকলেও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো এমন সংগঠন নেই। অসহায় ছিন্নমূল শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারে ফরিদগঞ্জে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ভিন্নধর্মী সংগঠন প্রজ্জ্বলন।
এ সংগঠনের কাজের মধ্যে রয়েছে- অসহায়দের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ,প্রতি সপ্তাহে পাঠদান কর্মসূচি, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে প্রতি সপ্তাহে পাঠদান শেষে নাস্তা, ফ্রি ব্লাড ক্যাপিং, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, রক্তদান কর্মসূচি,শীতবস্ত্র বিতরণ। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা খাদিজা তাসনীম সংগঠনটি সম্পর্কে জানান, সময়টি ছিল ২০২১ সাল। ফরিদগঞ্জ সদরের আশেপাশে বেশ কয়েকজন ছিন্নমূল শিশুর দেখা যায়। যারা নানান জটিলতার কারনে পড়া লেখা নিয়মিত করতে পারছে না। অর্থের অভাবে অধিকাংশ শিশু পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি প্রতিষ্ঠাতা খাদিজা তাসনীম ও সংগঠনের সদস্য সচিব স্বপ্নবাজ তরুন শামীম হাসান সহ কয়েকজনের মনে দাগ কাটে। তখনই সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তারা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। শুরু হলো সংগঠনের যাত্রা। কাজের শুরু শিক্ষা উপকরণ বিতরণ দিয়ে।
ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব চত্বরে সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয়। কাজ শুরু করেন ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক। সবাই শিক্ষার্থী। ৪ জন সেচ্ছাসেবক বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায়, ছিন্নমূল শিশুকে খুঁজে বের করেন। ১৬ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে দিয়ে শুরু হয় প্রথম সাপ্তাহিক পাঠদান কর্মসূচি। পাঠাদান শেষে বাচ্চাদের উৎসাহের জন্য দেওয়া হয় নাস্তা। শিক্ষক প্রতিনিধিদের দেওয়া মাসিক চাঁদায় চলে সব কার্যক্রম। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী ৬৫ জন এবং শিক্ষক প্রতিনিধি ১৭ জন। সুবিধাবঞ্চিত ৬৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রতি মাসে শিক্ষা উপকরণ বিতরণে করেছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একবছর মেয়াদী শিক্ষা উপকরণ দিয়েছি। যারা সত্যিকারের সুবিধাবঞ্চিত, তাদেরই আমরা সহায়তা করেছি।’ শুধু শিক্ষা উপকরণই নয়, তাদের কে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং ঈদ উপহার বিতরণ করে থাকি যাতে করে তাদের আনন্দটুকু পরিপূর্ণ থাকে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সহযোগিতার পাশাপাশি সংগঠনটি কাজ করছে রক্তদান নিয়ে। বিভিন্ন সময়ে স্কুল,কলেজ,বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ফ্রি রক্তের গ্রুপ নির্নয় করা হয়। মূমুর্ষ রোগীকে রক্তদান সহ নানান সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অসহায় ঝরে পড়া দুইশতাধিক শিক্ষার্থীকে সম্ভব্য ১ বছরের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা খাদিজা তাসনীম আরো বলেন, আমরা প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবারকে স্বাবলম্বী করার পরিকল্পনা নিয়েছি। অসহায় অনেক কৃষক আছেন, তাদের গরু বা ছাগল কিনে দেওয়া হবে যাতে তারা দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।’ অসহায়, অস্বচ্ছল মূমুর্ষ রোগী যারা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না এমন রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করবো। ভবিষ্যতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুশিক্ষা ও সামাজিক সংগঠন প্রজ্জ্বলন এর মাধ্যমে অসহায়দের সকলের ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা থাকবে।