ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও কৌশলে চলছে প্রচারণা

মনিরুল ইসলাম মনির : আইন করে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও থেমে নেই প্রচারণা। ভিন্ন কৌশলে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাহারী এসব প্রচারণার মাধ্যমে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে ধূমপানে আগ্রহী করে তুলছে।

Model Hospital

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ ধারা ৫ এর ‘ক’ উপধারায় বলা আছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না, বা করাবেন না।’

আইন অমান্য করলে শাস্তি হিসেবে আইনের ধারা ৫ এর ৪ এ বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি এ ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে, তিনি অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে, তিনি পর্যায় ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।’

সোমবার বিকেলে কলাকান্দা বহুমূখী বাজারে আকিজ বিড়ির প্রচারণা করছে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। লোকজনকে বিড়ি পান করতে উৎসাহিত করছেন। ফ্রিতে বিড়ি দেয় ধূমপায়ীদের।

সরেজমিনে মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা বহুমূখী বাজার’সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিগারেট কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের স্টিকার, লিফলেট, আকর্ষণীয় লাইটার, টি-শার্টসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চায়ের দোকানে চায়ের কাপ উপহার দিচ্ছে। এসব চায়ের কাপে নির্দিষ্ট সিগারেটের লোগো দেওয়া আছে।

এছাড়া, বছরব্যাপী কয়েক মাস পর পর যেসব নতুন বা পুরনো ব্র্যান্ড বাজারে কম চলে, সেসব সিগারেটের মার্কেট বাড়ানোর জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করে চালাচ্ছে প্রচারণা। এসব প্রতিনিধিরা জনসমাগম রয়েছে, এমন সব স্থানে সিগারেটের খুচরা বিক্রেতাদের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সিগারেটের বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরে সেগুলো সেবন করার জন্য ক্রেতাদের অফার করে থাকেন। কখনও কখনও প্রচারণার খাতিয়ে বিনামূল্যে সিগারেটও দিয়ে থাকেন।

আরো পড়ুন  মতলব উত্তরে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অলিউল্লাহ’র বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

সম্প্রতি নতুনবাজারে চায়ের দোকানগুলোর সামনে সিগারেটের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে কয়েকজন যুবককে। তারা একই ডিজাইনের টি-শার্ট পড়ে দোকানগুলোর আশে পাশে ঘুরছে। কেউ একজন দোকানে আসলেই তিনি কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট সেবন করেন, সেটা জেনে নিয়ে তাদের ব্র্যান্ডের সিগারেট নিতে বলেন ওই যুবকরা। সঙ্গে তাদের সিগারেটের বিভিন্ন গুণাবলীও তুলে ধরেন। কেউ নিতে না চাইলে তাকে বিনামূল্যে নেওয়ারও প্রস্তাব দিতে দেখা গেছে ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিনিধি বলেন, আমরা এখানে চুক্তিভিক্তিক কাজ করছি।
তিনি বলেন, মার্লবোরো ভাল সিগারেট হলেও বেনসন বা অন্য সিগারেটগুলোর মতো বাংলাদেশে এটা চলে না। মার্লবোরোর মার্কেট বাড়ানোর জন্য এই প্রমোশন চলছে।

ফারুক জানায়, আকিজ বিড়ি কোম্পানি তাকে এই বাক্স ও সিগারেট বিক্রির জন্য নিয়োগ করেছে। তবে শর্ত রয়েছে আকিজ বিড়ি ছাড়া অন্য কোনও বিড়ি সে বিক্রি করতে পারবে না।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার বলেন, এ ধরনের প্রচারণা নিশ্চয় আইনবিরোধী। আমরা এর আগেও দেশের বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অবগত আছি।

তিনি আরও বলেন, এ মাসেই আমরা আবার রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো। মাঝে মাঝেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রচারণা চলছে। এটা জানার পরও পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার কারণে সবসময় তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আকিজ বিড়ি কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের কোম্পানীর প্রচারের নিয়ম আছে। তাই আমরা প্রচারণা করছি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ফের শাহরাস্তির জনতা উবি’র সভাপতি আবুল কালাম আজাদ

সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও কৌশলে চলছে প্রচারণা

আপডেট সময় : ০৩:৪৭:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

মনিরুল ইসলাম মনির : আইন করে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও থেমে নেই প্রচারণা। ভিন্ন কৌশলে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাহারী এসব প্রচারণার মাধ্যমে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে ধূমপানে আগ্রহী করে তুলছে।

Model Hospital

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ ধারা ৫ এর ‘ক’ উপধারায় বলা আছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না, বা করাবেন না।’

আইন অমান্য করলে শাস্তি হিসেবে আইনের ধারা ৫ এর ৪ এ বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি এ ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে, তিনি অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে, তিনি পর্যায় ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।’

সোমবার বিকেলে কলাকান্দা বহুমূখী বাজারে আকিজ বিড়ির প্রচারণা করছে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। লোকজনকে বিড়ি পান করতে উৎসাহিত করছেন। ফ্রিতে বিড়ি দেয় ধূমপায়ীদের।

সরেজমিনে মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা বহুমূখী বাজার’সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিগারেট কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের স্টিকার, লিফলেট, আকর্ষণীয় লাইটার, টি-শার্টসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চায়ের দোকানে চায়ের কাপ উপহার দিচ্ছে। এসব চায়ের কাপে নির্দিষ্ট সিগারেটের লোগো দেওয়া আছে।

এছাড়া, বছরব্যাপী কয়েক মাস পর পর যেসব নতুন বা পুরনো ব্র্যান্ড বাজারে কম চলে, সেসব সিগারেটের মার্কেট বাড়ানোর জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করে চালাচ্ছে প্রচারণা। এসব প্রতিনিধিরা জনসমাগম রয়েছে, এমন সব স্থানে সিগারেটের খুচরা বিক্রেতাদের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সিগারেটের বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরে সেগুলো সেবন করার জন্য ক্রেতাদের অফার করে থাকেন। কখনও কখনও প্রচারণার খাতিয়ে বিনামূল্যে সিগারেটও দিয়ে থাকেন।

আরো পড়ুন  ঈদের ৩য় দিনেও চাঁদপুর তিন নদীর মোহনায় ছিল পর্যটকদের অপরূপ মিলনমেলা

সম্প্রতি নতুনবাজারে চায়ের দোকানগুলোর সামনে সিগারেটের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে কয়েকজন যুবককে। তারা একই ডিজাইনের টি-শার্ট পড়ে দোকানগুলোর আশে পাশে ঘুরছে। কেউ একজন দোকানে আসলেই তিনি কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট সেবন করেন, সেটা জেনে নিয়ে তাদের ব্র্যান্ডের সিগারেট নিতে বলেন ওই যুবকরা। সঙ্গে তাদের সিগারেটের বিভিন্ন গুণাবলীও তুলে ধরেন। কেউ নিতে না চাইলে তাকে বিনামূল্যে নেওয়ারও প্রস্তাব দিতে দেখা গেছে ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিনিধি বলেন, আমরা এখানে চুক্তিভিক্তিক কাজ করছি।
তিনি বলেন, মার্লবোরো ভাল সিগারেট হলেও বেনসন বা অন্য সিগারেটগুলোর মতো বাংলাদেশে এটা চলে না। মার্লবোরোর মার্কেট বাড়ানোর জন্য এই প্রমোশন চলছে।

ফারুক জানায়, আকিজ বিড়ি কোম্পানি তাকে এই বাক্স ও সিগারেট বিক্রির জন্য নিয়োগ করেছে। তবে শর্ত রয়েছে আকিজ বিড়ি ছাড়া অন্য কোনও বিড়ি সে বিক্রি করতে পারবে না।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার বলেন, এ ধরনের প্রচারণা নিশ্চয় আইনবিরোধী। আমরা এর আগেও দেশের বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অবগত আছি।

তিনি আরও বলেন, এ মাসেই আমরা আবার রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো। মাঝে মাঝেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রচারণা চলছে। এটা জানার পরও পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার কারণে সবসময় তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আকিজ বিড়ি কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের কোম্পানীর প্রচারের নিয়ম আছে। তাই আমরা প্রচারণা করছি।