ঢাকা ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজী কাউছ মিয়া সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছেন নিরবে নিবৃত্তে

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী :সামাজিকতা ও মানবিকতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে এই সমাজ ও দেশ। তবে যে কোন পেশায় থেকে সেই ব্যক্তি সমাজ তথা দেশকে এগিয়ে নিতে পারেন। যদি কিনা তার হৃদয়ে দেশপ্রেমকে লালন করতে পারেন। আর এমনি ব্যক্তিত্ব চাঁদপুরের কৃতি সন্তান মুজিব বর্ষে, বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতা, দেশের ঐতিহ্যবাহী জর্দা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হাকিমপুরী জর্দার স্বত্বাধিকারী, দানবীর হাজী মোঃ কাউছ মিয়া।

Model Hospital
যিনি সমাজ বিনির্মাণে আলোকবর্তিকার মতো কাজ করে যাচ্ছেন নিরবে নিবৃত্তে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
হাজী মোঃ কাউছ মিয়ার পিতা মরহুম হাজী আব্বাস আলী মিয়া ও মাতা মরহুমা হাজী মোসাম্মৎ ফাতেমা খাতুন।

তিনি নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৫০ সালের পর থেকে ১৮ বার সিআইপি মর্যাদার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দেন তিনি। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এক নম্বর করদাতা হয়েছিলেন কাউছ মিয়া। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে দেশসেরা করদাতার ১ নাম্বার মনোনীত হয়ে ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০২১ সালে মুজিববর্ষে সারা বাংলাদেশের মাত্র একজন হিসেবে শ্রেষ্ঠ করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন কাউছ মিয়া।

জানা যায়, কাউছ মিয়া ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে আর পড়াশোনা এগোয়নি। পুরাণবাজার মধু বাবুর স্কুলে পড়েছেন তিনি। এরপর কাউছ মিয়া ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরাণবাজারে স্টেশনারী ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় দেশের প্রসিদ্ধ এই বাণিজ্যিক এলাকায় তৎকালীন সময়ে তার ৬টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো। এরপর ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট হন তিনি। পরের ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকসহ অন্যান্য ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় অর্ধশত আইটেমের ব্যবসার সঙ্গে বর্তমানে তিনি জড়িত। নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্যে মোঃ কাউছ মিয়ার বেশ কিছু কার্গো জাহাজও রয়েছে।

বাংলাদেশের এই শীর্ষ করদাতা হাজী কাউছ মিয়ার নামটি সবার মুখে মুখে, যার কারণ
১৯৮৮ ও ৯৮ এর ভয়াবহ বন্যা এবং সবশেষ ২০২০ এর করোনাকালীন সময়ে মানুষের মাঝে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিলিয়ে দিয়ে তিনি দানবীরের সুনাম ধরে রাখেন।

কাউছ মিয়া তার মরহুম পিতা-মাতার নামে উত্তর তারাবুনিয়া আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে কবি নজরুল সড়কে মায়ের নামে ফাতেমা খাতুন মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি চাঁদপুর গুয়াখোলা আবাসিক এলাকায় মদিনা জামে মসজিদ এবং স্ট্র্যান্ড রোডে আল-আমিন স্কুলের পাশে বোগদাদীয়া জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। এ দু’টি মসজিদের মোতওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত না থেকেও এভাবেই তিনি তার ২৪ বছর বয়স থেকে মানবসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কাউছ মিয়া বলেন, ১৯৮৮ সালে হাকিমপুরী জর্দা তৈরি এবং বাজারজাত শুরু করি। এটি ছিলো তখন কুটির শিল্প। ঐ সময়ে আমার প্রতিষ্ঠানে ৪/৫ জন শ্রমিক কাজ করতো। সরকার ১৯৯৯ সালের জুন মাসে জর্দার উপর ভ্যাট আরোপ করে। তখন বছরে ট্যাক্স প্রদান করতাম প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সম্পূরক শুল্কসহ ট্যাক্স প্রদান করছি প্রায় ৯ কোটি টাকা। বর্তমানে জর্দা ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকা ও চাঁদপুরে ৩টি গরুর খামারসহ আমার খরিদকৃত জমি ও বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ৭ জমিদারের নাতি। উত্তোরাধিকার সূত্রে আমি নানাদের জমিদারীর সম্পত্তির অংশ পাবার নিয়ম থাকলেও সেই সম্পত্তি আমি নেইনি এবং আমার পূর্ব পুরুষরাও শশুর বাড়ির সম্পত্তি এবং আমার ছেলেরাও নেয়নি। বয়স যাই হউক আমি সকলের দোয়ায় মনের সুখ নিয়ে মানবসেবার মধ্য দিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে দোয়া চাই।

তিনি তার শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন।

ট্যাগস :

বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলে, জীবন ও জীবিকার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে : ডিসি মোহসীন উদ্দিন

হাজী কাউছ মিয়া সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছেন নিরবে নিবৃত্তে

আপডেট সময় : ০২:২৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২
সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী :সামাজিকতা ও মানবিকতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে এই সমাজ ও দেশ। তবে যে কোন পেশায় থেকে সেই ব্যক্তি সমাজ তথা দেশকে এগিয়ে নিতে পারেন। যদি কিনা তার হৃদয়ে দেশপ্রেমকে লালন করতে পারেন। আর এমনি ব্যক্তিত্ব চাঁদপুরের কৃতি সন্তান মুজিব বর্ষে, বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতা, দেশের ঐতিহ্যবাহী জর্দা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হাকিমপুরী জর্দার স্বত্বাধিকারী, দানবীর হাজী মোঃ কাউছ মিয়া।

Model Hospital
যিনি সমাজ বিনির্মাণে আলোকবর্তিকার মতো কাজ করে যাচ্ছেন নিরবে নিবৃত্তে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
হাজী মোঃ কাউছ মিয়ার পিতা মরহুম হাজী আব্বাস আলী মিয়া ও মাতা মরহুমা হাজী মোসাম্মৎ ফাতেমা খাতুন।

তিনি নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৫০ সালের পর থেকে ১৮ বার সিআইপি মর্যাদার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দেন তিনি। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এক নম্বর করদাতা হয়েছিলেন কাউছ মিয়া। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে দেশসেরা করদাতার ১ নাম্বার মনোনীত হয়ে ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০২১ সালে মুজিববর্ষে সারা বাংলাদেশের মাত্র একজন হিসেবে শ্রেষ্ঠ করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন কাউছ মিয়া।

জানা যায়, কাউছ মিয়া ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে আর পড়াশোনা এগোয়নি। পুরাণবাজার মধু বাবুর স্কুলে পড়েছেন তিনি। এরপর কাউছ মিয়া ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরাণবাজারে স্টেশনারী ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় দেশের প্রসিদ্ধ এই বাণিজ্যিক এলাকায় তৎকালীন সময়ে তার ৬টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো। এরপর ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট হন তিনি। পরের ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকসহ অন্যান্য ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় অর্ধশত আইটেমের ব্যবসার সঙ্গে বর্তমানে তিনি জড়িত। নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্যে মোঃ কাউছ মিয়ার বেশ কিছু কার্গো জাহাজও রয়েছে।

বাংলাদেশের এই শীর্ষ করদাতা হাজী কাউছ মিয়ার নামটি সবার মুখে মুখে, যার কারণ
১৯৮৮ ও ৯৮ এর ভয়াবহ বন্যা এবং সবশেষ ২০২০ এর করোনাকালীন সময়ে মানুষের মাঝে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিলিয়ে দিয়ে তিনি দানবীরের সুনাম ধরে রাখেন।

কাউছ মিয়া তার মরহুম পিতা-মাতার নামে উত্তর তারাবুনিয়া আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে কবি নজরুল সড়কে মায়ের নামে ফাতেমা খাতুন মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি চাঁদপুর গুয়াখোলা আবাসিক এলাকায় মদিনা জামে মসজিদ এবং স্ট্র্যান্ড রোডে আল-আমিন স্কুলের পাশে বোগদাদীয়া জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। এ দু’টি মসজিদের মোতওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত না থেকেও এভাবেই তিনি তার ২৪ বছর বয়স থেকে মানবসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কাউছ মিয়া বলেন, ১৯৮৮ সালে হাকিমপুরী জর্দা তৈরি এবং বাজারজাত শুরু করি। এটি ছিলো তখন কুটির শিল্প। ঐ সময়ে আমার প্রতিষ্ঠানে ৪/৫ জন শ্রমিক কাজ করতো। সরকার ১৯৯৯ সালের জুন মাসে জর্দার উপর ভ্যাট আরোপ করে। তখন বছরে ট্যাক্স প্রদান করতাম প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সম্পূরক শুল্কসহ ট্যাক্স প্রদান করছি প্রায় ৯ কোটি টাকা। বর্তমানে জর্দা ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকা ও চাঁদপুরে ৩টি গরুর খামারসহ আমার খরিদকৃত জমি ও বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ৭ জমিদারের নাতি। উত্তোরাধিকার সূত্রে আমি নানাদের জমিদারীর সম্পত্তির অংশ পাবার নিয়ম থাকলেও সেই সম্পত্তি আমি নেইনি এবং আমার পূর্ব পুরুষরাও শশুর বাড়ির সম্পত্তি এবং আমার ছেলেরাও নেয়নি। বয়স যাই হউক আমি সকলের দোয়ায় মনের সুখ নিয়ে মানবসেবার মধ্য দিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে দোয়া চাই।

তিনি তার শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন।