মনিরুল ইসলাম মনির : একসময় হাতুরি আর লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকতো কামার পাড়াগুলো। ঈদকে সামনে রেখে কামারদের দম ফেলার ফুসরত থাকতো না বিগত কোরবানির ঈদগুলোতে। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি কামারশালায় টুংটাং শব্দ লেগেই থাকতো। কিন্তু এবার হারিয়েছে মতলব উত্তরের কামারদের সেই টুং টাং শব্দ। ঈদ ঘনিয়ে এলেও নেই ব্যস্ততার কোনো চিত্র।
উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো ব্যস্ততা নেই কামারদের। কয়েকটি কামারশালা খোলা থাকলেও নেই তেমন কাজের চাপ। ঈদকে ঘিরে নেই তাতের বাড়তি কোন প্রস্তুতিও। অল্পস্বল্প কামারদের কাজ চললেও বিক্রি নেই বললেই চলে।
জানা যায়, প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় কোরবানির গবাদিপশুর গোশত কাটার জন্য প্রচুর দা, চাপাতি, কুড়াল ও ছুরি, চাকুর প্রয়োজন হয়। এসব তৈরি করতে কামাররা বছরের এই সময় খুবই ব্যস্ত থাকেন। অথচ এবার অজ্ঞাত কারণে কামার পাড়ায় বিক্রির কোন প্রভাব নেই।
সরেজমিনে পৌর এলাকার কামার পল্লীতে দেখা যায়, আগের মত ব্যস্ততা নেই কামারদের। সকল ব্যবসায়ীরা যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সময় পার করছে।
কামারশালার বিষু কর্মকার, সুমন কর্মকার জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কোরবানির ঈদের তেমন কোন কাজ নেই। তারপরও লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়ে গেছে।
লতুরদীর কালু কর্মকার বলেন, দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় তিনি এমন কর্মহীন জীবন আগে কখনই দেখেননি। নিয়মানুযায়ী এখন তার কাজের ব্যস্ততায় কথা বলার সময় থাকার কথা না। কিন্তু এবছর কি যে হয়েছে কোন ক্রেতায় নেই এখন পর্যন্ত। এসময় দোকানে পুরাতন ও নতুন ধারালো অস্ত্র বানানো ও মেরামত করার ভীড় থাকে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলে এ ব্যস্ততা। কিন্তু বর্তমানে চিত্র একেবারেই উল্টো।
দাসের আড়ংয়ের হরিপদ কর্মকার বলেন, কোরবানীর আর বাকী আছে মাত্র কয়েকদিন। অথচ এবার ক্রেতার কোন আনাগোনায় নেই। এবার ব্যবসার কি যে হবে বুঝা যাচ্ছে না।
কামার বিষ্ণু কর্মকার বলেন, এখনও সময় আছে। অন্যান্য বছর আগে থেকেই ক্রেতারা দোকানে ভিড় করত এবার যেহেতু এখনও ঈদের এক সপ্তহ বাকী আছে তাই হয় ব্যস্ততা বাড়বে ঈদের ২/৩ দিন আগে থেকে।
কথা হয় ক্রেতা সফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ছুরি, বটি, দাঁ প্রতি বছর আর কিনতে হয়না। এবার চামড়া ছড়ানোর জন্য কয়েকটা চাকুু লাগবে তাই চাকু ক্রয় করতে এসেছি।
ক্রেতা নাইম মিয়াজী বলেন, সব জিনিসের প্রয়োজন নেই। আগেই যা বানিয়েছি সেইসব জিনিস ঠিক ঠাক এবং ধার করতে কামারের কাছে এসেছি।